নানা নাটকীয়তার পর বন্ধ হল বিয়ানীবাজারের নাদিয়ার বিয়ে
বিদ্যালয় প্রধানের চরম দায়িত্বহীনতা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে বাল্য বিবাহের হাত থেকে রক্ষা পেল স্কুল পড়ূয়া নাবালিকা নাদিয়া (১২)। রবিবার সকালে বন্ধ হল তার বিয়ের সকল আয়োজন। নাদিয়া বেগম বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউপির বৈরাগীবাজার গড়রবন্দ গ্রামের সফর আলীর ২য় মেয়ে। রবিবার নাদিয়ার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উপজেলার স্থানীয় সংবাদকর্মী ও সংস্কৃতি কর্মীদের বাধাঁয় অবশেষে এই বিয়ে বন্ধ করতে বাধ্য হয় তার পরিবার। আর নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে এই বিয়ে বন্ধের জন্য নির্দেশ দেন স্থানীয় চেয়ারম্যান আলকাছ আলী।
নাদিয়ার বিয়ে বন্ধ হওয়ার পর গতকাল রাত সাড়ে ৫টার দিকে সরেজমিনে নাদিয়ার বাড়িতে গেলে এই প্রতিবেদককে দেখে ভীড় করেন উৎসুক জনতা। এসময় এই প্রতিবেদকের সাথে ছিলেন বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকসানা বেগম লিমা, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার (মহিলা) খালেদা আক্তার, সংবাদকর্মী মিছবাহ উদ্দিন ও মিনহাজ হোসেন। তখন উৎসুক জনতা এই প্রতিবেদককে নিয়ে যান নাদিয়ার ঘরে। নাদিয়ার ঘরে যাওয়ার পর বের হয়ে আসেন নাদিয়ার মা সুহাদা বেগম। তিনি বলেন, এখন আর নাদিয়াকে বিয়ে দিবেন না লেখাপড়া করাবেন। নাদিয়ার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি প্রথমে কিছুটা অসম্মতি প্রকাশ করলেও পরে পাশের ঘর থেকে নাদিয়াকে নিয়ে আসেন। হাতে মেহেদীর রং পড়া নাদিয়া আসা মাত্রই অজোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এবং মনের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ প্রকাশ করে এই প্রতিবেদককে জানায় সে আর লেখাপড়া করবে না। কেন লেখাপড়া করবে না এর কোন সঠিক জবাব দিতে পারেনি। তবে অনেকটা ক্ষোভ ও তার উপর প্রচন্ড জোর দেয়া হয়েছে তা বুঝাই যায় তার কথাবার্তায়। এদিকে নাদিয়াকে তার বয়স জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় তার জন্ম ২০০০ সালের ১লা জানুয়ারী। কিন্তু গত ৩১/১২/২০১৪ তারিখে কুড়ারবাজার ইউনিয়ন থেকে তার নামে প্রদানকৃত জন্ম সনদে তার বয়স দেখানো হয় ১৫/১১/১৯৯৬।
অপরদিকে নাদিয়ার মা সুহাদা বেগম নিজের মেয়ের বিয়ে প্রসঙ্গে বলেন, আমরা গরীব। ছেলে-মেয়ে চারজনকে নিয়ে অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। আমাদের পক্ষে মেয়েটাকে পড়ানো অনেকটা কষ্টকর। তাছাড়া তাদের বাবা কর্মক্ষম। স্কুলের বেতন দিতে পারিনা। স্কুলের শিক্ষকরাও তাদের বেতন কমাতে চান না। এমতাবস্থায় আমাদের পক্ষে তাদের পড়ানো সম্ভব নয়। তবে আমরা যদি ভালো সুযোগ পাই তাহলে অবশ্যই মেয়েকে পড়াবেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান। কিন্তু বড় মেয়েকে রেখে ছোট মেয়েকে কেন বিয়ে দিচ্ছেন এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
উল্লেখ্য, বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউপির বৈরাগীবাজার গড়রবন্দের সফর আলী তার মেয়ে বৈরাগীবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণী পড়ূয়া নাবালিকা মেয়ে নাদিয়ার বিয়ের আয়োজন করেন পাশ্ববর্তী বাড়ির আয়াজ আলীর কার চালক ছেলে আমিনুল ইসলামের সাথে। নাবালিকা মেয়ে নাদিয়াকে বিয়ে দেয়া হচ্ছে রোববার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার সন্ধ্যার দিকে এমন খবর আসে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছে। এরপর সাংবাদিক সুফিয়ান আহমদ বিষয়টি স্থানীয় কুড়ারবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আলকাছ আলীকে অবহিত করলে আলকাছ আলী তা এড়িয়ে গিয়ে উল্টো এই প্রতিবেদকের সাথে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। তিনি জোর গলায় বলেন, মেয়ের বিয়ে দিবেন তার বাবা তাতে আপনাদের কি?
এরপর বিষয়টি নাদিয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামকে অবহিত করলে তিনি বলেন, আমি তো এসব কিছু জানিনা। আর এটা দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের আমার না। তারপর বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শহীদুল ইসলাম চৌধুরী ও থানা ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা মোঃ জুবের আহমদকে বাল্য বিবাহের বিষয়টি অবহিত করে সাংবাদিক সুফিয়ান সংস্কৃতিকর্মী গীতিকার আহমদ হোসেন খাঁন, সংবাদকর্মী মিছবাহ উদ্দিন, মিনহাজ হোসেন, নুরুল ইসলাম শিপু ও রেজাউল ইসলামকে নিয়ে নাদিয়াদের বাড়ি যান রাত ৯টার দিকে। সেখানে যাওয়ার পর স্থানীয় এক সমাজকর্মী নাদিয়াদের বাড়িতে নিয়ে যান এই প্রতিবেদককে। সেখানে গেলে এই প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান নাদিয়ার বাবা সফর আলী। আর নাদিয়ার সাথে কথা বলতে চাইলে তারা তাকে অন্যত্র সরিয়ে রাখেন এবং কথা বলতে দেননি এই প্রতিবেদকের সাথে। এরপরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে টনক নড়ে চেয়ারম্যান আলকাছ আলীর। তখন তিনি নাদিয়ার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে বিয়ে বন্ধের নির্দেশ দেন। আর এভাবেই নানা নাটকীয়তার পর আজ রোববার সকালে বন্ধ হয় স্কুল পড়ূয়া নাবালিকা নাদিয়ার বিয়ে।