ইতিহাসের ফল ভোগ করছেন খালেদা : এরশাদ
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সব দলের প্রতি আলোচনার আহবান জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আসুন সবাই এক সঙ্গে বসি, কীভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা করি।
বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় পার্টির ২৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
এছাড়া তিনি খালেদাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রতিহিংসার রাজনীতির যে ইতিহাস আপনি সৃষ্টি করেছিলেন, এখন তারই ফল আপনাকে ভোগ করতে হচ্ছে।
এর আগে বেলা ৩ টার দিকে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর উদ্বোধন করেন এরশাদ।
তিনি বলেন, আমরা শ্রম বাজার চালু করেছিলাম, এখন শ্রম বাজার বন্ধ, আমরা আবার ক্ষমতায় আসলে শ্রম বাজার চালু করবো।
তিনি বলেন, আমরা ছিলাম সংবিধান স্বীকৃত বৈধ সরকার। আমি দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা শুরু করেছি। দেশের মানুষ এখন যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বলতে পারছে তার ভিত আমিই তৈরি করে দিয়েছি। এলজিইডি সৃষ্টি করে সকল কাঁচা রাস্তা পাকা করার ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করেছি। এখন দেশে কোন কাঁচা রাস্তা নেই।
জনসভায় খালেদা জিয়ার সমালোচনার পাশাপাশি সরকারের নানা পদক্ষেপে অসন্তোষ জানিয়ে আন্দোলনের হুমকিও দেন এরশাদ।
নিজেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ‘বর্ষীয়ান রাজনীতিক’ দাবি করে এরশাদ বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সব দলকে এক সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
খালেদাকে উদ্দেশ্য করে এরশাদ বলেন, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। ইতিহাসের বিচার বড় নির্মম। আমাকে জেলে পাঠিয়েছিলেন, আমার স্ত্রী-পুত্রকে বন্দি করেছিলেন। আমি তো তবু জেলে থেকে সপ্তাহে একদিন স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে দেখা করতে পারতাম। আপনি কবে আপনার দুই ছেলের দেখা পাবেন, তা আল্লাহই জানেন।
এরশাদ বলেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি আপনি শুরু করেছেন, বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ আপনি শুরু করেছেন, স্পেশাল কোর্ট গঠন করেছেন। সমাবেশে ১৪৪ ধারার রীতি আপনি শুরু করেছিলেন। আমার ১৪২টি জনসভায় ১৪৪ ধারা জারি করেছিলেন। ইতিহাসের পরিক্রমায় সেই স্পেশাল কোর্টেই এখন আপনার বিচার হচ্ছে। আপনার জনসভায় ১৪৪ ধারা জারি হয়। প্রতিহিংসার রাজনীতির যে ইতিহাস আপনি সৃষ্টি করেছিলেন, এখন তারই ফল আপনাকে ভোগ করতে হচ্ছে। ১৯৮৭ সালে যুবলীগকর্মী নূর হোসেনের মৃত্যুর জন্য নিজের দায়ও অস্বীকার করেন এরশাদ।
তিনি বলেন, নূর হোসেনের মৃত্যুতে আমাকে দায়ী করা হয়। নূর হোসেনকে কে খুন করেছিল? পুলিশ গুলি করলে তো সামনে থেকে করত, তাকে (নূর হোসেন) গুলি করা হয়েছিলো পেছন থেকে।
তিনি দাবি করে বলেন, নূর হোসেনকে প্ল্যান করে হত্যা করা হয়েছিল। কারণ তখন যারা আন্দোলন করছিল, তাদের একটা লাশের প্রয়োজন ছিল। নূর হোসেন লাশের রাজনীতির শিকার।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে এরশাদ বলেন, সরকারকে আহ্বান জানাই, এই কাজ করবেন না। বিদেশে যে ১৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, তা উদ্ধার করার ব্যবস্থা করুন। যদি ওই টাকা দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আনা যায় তাহলে এই দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না।
বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করে রাজপথে আন্দোলনের হুমকি দেন এরশাদ।
বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জিএম কাদের, মশিউর রহমান রাঙা, মুজিবুল হক চুন্নু, ঢাকা দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ হান্নান, কাজী ফিরোজ রশীদ, জাপার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, সালমা ইসলাম, এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সুনীল শুভরায় প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন মহাসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।