আত্মসমর্পণের আগে আরিফের সেই চিঠি

arif at Hobigonj Court2নোংরা রাজনীতিতে বিপর্যস্ত  সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এই রাজনীতির প্রতি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘প্রতিহিংসার রাজনীতিতে পড়ে আমি চরম হতাশ।’ জানান, ‘সিলেটে রাজনীতির এই কালো অধ্যায়ের চর্চা ছিল না। এই ঘটনার মাধ্যমে একটি মহল সিলেটের সম্প্রীতির রাজনীতির আকাশ কালো মেঘে ঢেকে দিতে চাইছে।’ গতকাল হবিগঞ্জের আদালতে কারান্তরীণ হওয়ার আগে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া খোলা চিঠিতে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, সিলেটের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে তার বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বলেও জানান।

হবিগঞ্জে আত্মসমর্পণের আগে প্রদত্ত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্য: arif at Hobigonj Courtসম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ- আসসালামু আলাইকুম। আপনারা সবসময় যেভাবে আমাকে সহযোগিতা করে এসেছেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন সেজন্য আপনাদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। আপনাদের মাধ্যমে আমি প্রথমেই বলতে চাই, সাবেক অর্থমন্ত্রী, সিলেটের কৃতী সন্তান, বাংলাদেশের গর্ব, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আমি বলতে চাই, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ। আমার রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু তার মতো এরকম আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব, মেধা ও প্রজ্ঞার অধিকারী ব্যক্তিত্বকে আমি সবসময় শ্রদ্ধার চোখে দেখি। সিলেটের গুণীজনদের কোন অকল্যাণ কোন দিন আমি ঘুণাকক্ষরেও কামনা করি না। সেই আমাকে হত্যাকাণ্ডের মতো জঘন্য একটি মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে জানতে পেরে হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। আমি প্রথম এই খবর জানতে পেরে খবরটি বিশ্বাস করিনি। পরে মিডিয়ার কল্যাণে জানতে পেরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহএএমএস কিবরিয়াকে যারা হত্যা করেছে তারা জঘন্যতম ও জাতির জন্য এক কলঙ্কজনক কাজ করেছে। তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। তবে যারা এই ঘটনার সঙ্গে ন্যূনতম সম্পৃক্ততাও নেই তাদেরকে কেন অযথা হয়রানি করা হচ্ছে- তা বিচারের ভার আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এবং আমার প্রিয় নগরবাসী ও দেশবাসীর কাছে দিলাম। আমি আমার প্রিয় নগরবাসীর কাছে- দেশবাসীর বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন- কেন আমার বিরুদ্ধেই বারবার ষড়যন্ত্র হচ্ছে? কেন বারবার যখন সিলেটের উন্নয়নে নিমগ্ন হই তখনই আমাকে ফাঁসানোর চক্রান্ত শুরু হয়? অতীতেও আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু আদালতের রায়ে আমি বারবার নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। তাহলে কী সিলেটের উন্নয়ন করাই আমার অপরাধ? আমি রাতদিন অমানুষিক পরিশ্রম করেছি এই নগরীকে সুন্দর করে সাজানোর জন্য। মায়ের প্রতি, পরিবারের সদস্যদেরকে সময় দেয়ার অবসরটুকু পাইনি। আজ আমার মা আমার জন্য শয্যাশায়ী, আমার সন্তান-সহধর্মিণী সকলে নীরবে শুধু অশ্রুপাত করছে। এটা কি আমার পরিবারের পাওনা ছিল? আরিফুল হক চৌধুরী নামের এক অসহায় ব্যক্তি, হ্যাঁ আমি আরিফুল হক চৌধুরী আজ চরম হতাশ, বিপর্যস্ত- এই নোংরা রাজনীতির প্রতি আমি চরম বিরক্ত-ক্ষুব্ধ। এই যদি হয় রাজনীতি তাহলে আমাদের দেশ কিভাবে এগিয়ে যাবে। আমি আর কতদিন বাঁচব জানি না, কিছুদিন আগেও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি সবার দোয়ায়, শারীরিক ও মানসিকভাবে এখন আমি বিধ্বস্ত। এই নোংরা রাজনীতির খেলা, নোংরা মানসিকতার কি অবসান হবে না। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও কি কিছুদিন শান্তিতে কাজ করার আশাটুকু আমি করতে পারি না? অতীতের মতো এবারও সিলেটের সর্বস্তরের জনগণের সাহসই আমাকে মানসিক শক্তি যোগাচ্ছে, তাদের ভালবাসাই আমার মূল শক্তি। তারাই তাদের প্রিয় আরিফুল হক চৌধুরীকে সকল ষড়যন্ত্র থেকে উদ্ধার করবে। আর আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে চাই, যে ঘটনার সঙ্গে আমাকে জড়ানো হয়েছে তাতে ন্যূনতম সম্পৃক্ততা আমার নেই, সুতরাং আইনের মাধ্যমে সত্যের জয় হবেই। সিলেটের মানুষ জানেন, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের সঙ্গে থেকে আমি উন্নয়নের রাজনীতি শিখেছি। প্রতিহিংসা বা গ্রেনেড-বোমার রাজনীতি এম সাইফুর রহমান কখনো করেননি, তার কাছ থেকে সবসময় কল্যাণকামী শিক্ষা পেয়েছি। বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হওয়া ও সিলেটের উন্নয়নে নিজেকে সঁপে দেয়াই আমার কাল হয়েছে। নির্বাচনের আগে আমি সিলেটবাসীকে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি। নগরবাসীর সহযোগিতায় অল্প সময়ে নগরীর অনেক উন্নয়ন হয়েছে- যা সুধীসমাজেও প্রশংসিত হয়েছে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অনেক সমস্যা দূরীভূত হয়েছে। এটা মেনে নিতে পারছেন না উন্নয়ন বিদ্বেষীরা। উন্নয়নের চাকা থামিয়ে দিতে তারা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছেন। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাকে সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলার মতো একটি জঘন্য মামলায় আসামি করা হয়েছে। মেয়র নির্বাচিত না হলে বা সিলেটের উন্নয়নে নিজেকে সঁপে না দিলে আমাকে এরকম মামলার আসামি হতে হতো না। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। ৫৬ বছর বয়সে আমার বিরুদ্ধে একটি মারামারির মামলাও হয়নি। আর বোমা-গ্রেনেড হামলার মতো জঘন্যতম কাজে সম্পৃক্ত থাকার প্রশ্নই উঠে না। যদি এরকম ঘটনার সঙ্গে ন্যূনতম কোন সম্পৃক্ততা থেকে থাকে তবে আমার উপর আল্লাহর গজব পড়বে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের বাসায় মুফতি হান্নানের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু ওই সময় এম সাইফুর রহমান ছিলেন সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী। তার সঙ্গে থেকে আমি নগরীর উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত ছিলাম। কোন প্রয়োজন হলে আমি এম সাইফুর রহমানের কাছেই ছুটে গেছি। অন্য কোন মন্ত্রীর বাসা বা অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। যাওয়ার প্রয়োজনও পড়েনি। আর মুফতি হান্নানের সঙ্গে বৈঠক তো দূরের কথা তার সঙ্গে কোনদিন দেখাও হয়নি। আমি নির্দোষ। আমি প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার। এর আগে সিলেটে রাজনীতির এই কালো অধ্যায়ের চর্চা ছিল না। এই ঘটনার মাধ্যমে একটি মহল সিলেটের সম্প্রীতির রাজনীতির আকাশ কালো মেঘে ঢেকে দিতে চাইছে। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে যারা এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন তাদের বিচার আজ না হোক কাল হবেই। কারণ সত্য সবসময় সত্য।
আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের মাধ্যমেই আমি সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করব। মিথ্যার ধোয়াশা কেটে সত্য একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে এই ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। পরিশেষে আমার এই দুঃসময়ে দলমত নির্বিশেষে যারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন সেইসব মানুষের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি সত্যের জয় হবে। আপনারা ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। বিনীত: আপনাদের খাদেম, আরিফুল হক চৌধুরী।