ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাঁচ সিলেটী

Sylheties on British MP Electionসুরমা টাইমস ডেস্কঃ ২০১৫ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে এমপি পদে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। এদের পাঁচজনই সিলেটের কৃতি সন্তান। ব্রিটেনের মূল ধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এই পাঁচ সিলেটী প্রার্থীকে নিয়েই চলছে আলোচনার ঝড়। তারা ব্রিটেনের তিনটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন জোটের কনজারভেটিভ পার্টি ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে একজন করে এবং প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির হয়ে লড়ছেন চার বাংলাদেশি। এযাবৎকালের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সিলেটী এমপি পদে লড়তে যাচ্ছেন। লেবার পার্টি থেকে নির্বাচনে এমপি পদে মনোনয়ন পেয়েছেন ব্রিটেনে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নির্বাচিত এমপি রুশনারা আলী। তিনি এবারও পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো থেকে লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন। এ ছাড়া হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে লেবার পার্টির মনোনয়নে নির্বাচন করছেন বঙ্গবন্ধুর নাতনি, শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক। একই পার্টি থেকে ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড একটন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রূপা আশা হক এবং ওয়েলইউন হ্যাটফিল্ড আসন থেকে লড়বেন ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া। ক্ষমতাসীন জোটের কনজারভেটিভ পার্টি থেকে বার্কিং আসনে লড়বেন মিনা রহমান। ক্ষমতাসীন জোটের আরেক শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে নর্থাম্পটন সাউথ আসনে লড়বেন প্রিন্স সাদিক চৌধুরী।
রুশনারা আলী : প্রার্থীদের মধ্যে রুশনারা আলী ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সিলেট জেলার বিশ্বনাথ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে অভিবাসিত হন। টাওয়ার হ্যামলেটে বেড়ে ওঠা রুশনারা অঙ্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জনস কলেজে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন। হাউস অব কমনসে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০১০ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় ব্রিটেনে মুসলিম এমপিদের মধ্যেও অন্যতম হিসেবে দৃষ্টি কাড়েন রুশনারা আলী।
রুপা আশা হক : অন্য প্রার্থী রুপা আশা হকের মা-বাবা ১৯৬০ সালের দিকে সিলেট থেকে ব্রিটেনে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। উচ্চশিক্ষিত পরিবারের রুপা আশা হক পেশায় সোসিওলজির শিক্ষক। তিনি কিংস্টন ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার। নিয়মিত লেখেন গার্ডিয়ান, দ্য স্টেটসম্যান, ট্রাইবুনসহ নানা পত্রিকা ও জার্নালে। রুপা হক ২০০৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে কনজারভেটিভের সেইফ সিট বাকিংহাম শায়ারের চিজহাম-আমেরশাম সিটে শেরিল গিলানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। পরে ২০১০ সালে লন্ডন বারা অব ইলিংয়ের ডেপুটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
আনোয়ার বাবুল মিয়া : লেবার পার্টির আরেক প্রার্থী আনোয়ার বাবুল মিয়া পৈত্রিক নিবাস সিলেটের জগন্নাথপুর উপজেলার মীরপুর গ্রাম। ১৯৯৮ সালে লিঙ্কনস ইন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রী গ্রহন করা আনোয়ার বৃটিশ বাংলাদেশী প্র্যাক্টিসিং ব্যারিস্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি। একইসাথে পারিবারিক একাধিক ব্যবসাও দেখাশোনা করে থাকেন।
মিনা সাবেরা রহমান : বার্কিং আসনের প্রার্থী মিনা সাবেরা রহমান ১৯৬৮ সালে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার রাউলী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। মাত্র ২১দিন বয়সে পিতা-মাতার সাথে যুক্তরাজ্যে যান। কাজের পাশাপাশি লেখাপড়া করা মিনা রহমান ১৯৮৫ সালে পূর্ব লন্ডনের জাগোনারী সেন্টারে আউট রিচ ওয়ার্কার হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৯৩ সালে থেকে টোরী দলের একজন সক্রিয় সদস্য। বর্তমানে কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ রেড ব্রিজের প্রেসিডেন্ট, কনজারভেটিভ এসোসিয়েশনের ইলফোর্ড সাউথ এর ভাইস চেয়ার, ক্রেনব্রোক ওয়ার্ড কনজারভেটিভের চেয়ারম্যান ও বাংলা উইমেন্স নেটওয়ার্কের চেয়ারপার্সন।
প্রিন্স সাদিক চৌধুরীর : প্রার্থী তালিকায় যুক্ত প্রিন্স সাদিক চৌধুরীর জন্ম সিলেট নগরীর বাগবাড়ীতে। ১৯৭১ সালে তিনি বৃটেনে চলে যান। পরে নর্থহ্যামটন শায়ার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে বর্তমানে ব্যবসা করছেন। দীর্ঘ দিন থেকে লিবারেল ডেমোক্রেটের (লিভডেম) রাজনীতির সাথে জড়িত সাদিক ২০০৭ সালে লিভডেম থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি নর্থহ্যামটন বাংলাদেশী এসোসিয়েশনের সাথে দীর্ঘ দিন থেকে জড়িত।
টিউলিপ সিদ্দিক : বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় লন্ডনের মেরটন কাউন্সিলের মিটচাম এলাকায় থাকা শেখ রেহানার পরিবারে ১৯৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বাংলাদেশ, ব্রুনাই, ভারত, সিঙ্গাপুর, স্পেনে বাল্যকাল কাটিয়েছেন। পরে ১৯৮৮ সালে স্থায়ীভাবে উত্তর লন্ডনে চলে যান। ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন থেকে ইংরেজি সাহিত্যে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী টিউলিপ ২০১০ সালের মে মাসে ক্যামডেন রিজেন্ট পার্ক ওয়ার্ডের প্রথম বাঙালি নারী কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন। এর মাধ্যমেই ব্রিটেনের রাজনীতিতে তার আনুষ্ঠানিক প্রবেশ।