স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসকে দলীয়করণ করা হচ্ছে

khaledaসুরমা টাইমস ডেস্কঃ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সফলতাকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ এই স্বাধীনতাযুদ্ধ কোনো দলীয় যুদ্ধ ছিল না, এটা ছিল জাতীয় যুদ্ধ।
আওয়ামী লীগের দিকে তীর নিক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘একটি বিশেষ দল স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করছে। স্বাধীনতাযুদ্ধে তাদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। যুদ্ধের সময় তারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। সত্যিকার দেশ প্রেম তাদের ছিল না। সেজন্য তারা যুদ্ধের সময় আহত লোকদের পাশে না দাঁড়িয়ে নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।’
রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানী ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় খালেদা এসব কথা বলেন।
বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘আজ সরকারের বিরুদ্ধে সঠিক কোনো কথা বললে বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও রাজাকার ও পাকিস্তানের চর বলতে তারা দ্বিধাবোধ করেন না।’
‘দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘মানুষের অবস্থা ও দেশের পরিস্থিতি দিন-দিন খারাপ হচ্ছে। সকলের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন জনগণ আন্দোলন ও পরিবর্তন চায়। তাই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অচিরেই বিএনপি আন্দোলন শুরু করবে। ওই আন্দোলন সরকার অস্ত্র নিয়ে দমন করতে আসলে তার জবাব রাজপথেই দেয়া হবে।’
সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘অবিলম্বে সকল রাজনৈতিক দলের অংশ্রগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। যেখানে সকল দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে। কেউ ক্ষমতাসীন হয়ে আবার কেউ ক্ষমতাহীন হয়ে নির্বাচন করবে, সেটা হতে পারে না। আর নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ এগুলোকেও দল নিরপেক্ষ অবস্থানে আনতে হবে।’
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশ্ন করে বেগম জিয়া বলেন, ‘সরকার ভিনদেশী হানাদারদের পথ বেছে নিয়েছে। দেশের এই পরিস্থিতিতে জনগণের এই চরম দুঃসময়ে কি আপনারা বসে থাকতে পারেন? নিশ্চয়ই না। তাই আপনারদের প্রতিবাদ করতে হবে, আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় দাবি করে যে, তারা স্বাধীনতাযুদ্ধ সংগঠিত করেছে। তাদের দাবি যে কতটা ভিত্তিহীন তা এখন তাদের দলভূক্ত লোকদের বই-পত্র থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে। আজ সত্য কথা বললে তথ্যভিত্তিক জবাব না দিয়ে গালিগালাজ করা হয়। আর এই গালিগালাজই হচ্ছে আওয়ামী লীগের সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধার চেতনা।’
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির চেয়ারপার্সন আরও বলেন, ‘আপনাদেরকে কেন্দ্র রেখে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা হবে। জাতি বিনির্মাণে মুক্তিযোদ্ধারা থাকবে সামনের কাতারে।’
এসময় তিনি সরকারকে কাছে কিছু দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো: মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে দলীয় রাজনীতি বন্ধ করতে হবে, তাদের স্বার্থ ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে, শহীদ ও বিপন্ন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করবে হবে, মুক্তিযোদ্ধারা কারারুদ্ধ হলে কারাগারে তাদের বিশেষ মর্যাদা দিতে হবে, মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে রিজার্ভ সিট রাখতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে আবেগ আশ্রয়ী রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
এর আগে বেগম খালেদা জিয়া রণাঙ্গনের ১০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ২০ হাজার টাকা করে চেক প্রদান করেন।
আর্থিক অনুদানপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- মোশাররফ হোসেন, খুরশীদ আলম সেজু মিয়া, জিয়াউল হক বাবু, মতিউর রহমান মনি, মো. শাহজাহান, আবু ইউসুফ হাওলাদার, আব্দুল আজীজ, মো. রমজান আলী, আবুল কালাম ও মো. মোহন মিয়া।
এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের নেতৃত্বে বেগম খালেদাকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এনডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, গণস্বাস্থ্য বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শমসের মবিন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাহেল উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবদিন ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।