আলোচিত গৃহবধ জ্যোস্নার হত্যা মামলার আসামী কিলার মাহফুজ গ্রেফতার

mahfuz Nabigonj 20উত্তম কুমার পাল হিমেল,নবীগঞ্জ থেকে ॥ নবীগঞ্জে পৌর এলাকার গন্ধ্যা গ্রাম থেকে উদ্ধারকৃত হবিগঞ্জের গৃহবধু ৬ সন্তানের জননী জ্যোৎস্না বেগমের চাঞ্চল্যকর মৃত্যুর ঘটনার মামলা দায়েরের ৬ দিনের মাথায় হবিগঞ্জের লস্করপুর ইউনিয়নের সুলতানশী এলাকা থেকে অন্যতম আসামী মাহফুজ মিয়া(৪০)কে গতকাল শনিবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত মাহফুজ লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের মৃত আলফু মিয়ার ছেলে। মাহফুজ গ্রেফতারের খবরে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এলাকাবাসীর ধারনা উক্ত মাহফুজকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে নিহত জ্যোৎস্না বেগমের ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হতে পারে। ঘটনার পর থেকেই এলাকাবাসী মাহফুজ এবং নবীগঞ্জের রানীগাঁও গ্রামের জাহেদা বেগমকে গ্রেফতারের জোর দাবী জানিয়ে আসছিলেন। পুলিশও এদের গ্রেফতারে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক অভিযান শুরু করে। গেল ৫দিন যাবৎ এসআই আশিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঢাকার গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে জাহেদা ও মাহফুজকে গ্রেফতারে আপ্রাণ চেষ্টা চালায় বলে সুত্রে জানাগেছে। না পেয়ে বিফল হয়ে ফিরে আসে।

উল্লেখ্য, গেল ১০ ডিসেম্বর ভোরে নবীগঞ্জ পৌর এলাকার গন্ধ্যা গ্রামে কাউন্সিলর মিজানুর রহমানের বাড়ির সীমানার প্রাচীরের ভেন্টিলিটার’র সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় হবিগঞ্জের উচাইল চারিনাও এলাকার গৃহবধু জ্যোৎস্না বেগমের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপসহ এলাকার শত শত মানুষের ভিড় জমে। এক পর্যায়ে কাউন্সিলর মিজানুর রহমান আত্মগোপনে চলে যান। ঘটনার ৪ দিন পর গত ১৪ ডিসেম্বর নিহতের বড় ভাই রজব আলী ফকির বাদী হয়ে কাউন্সিলর মিজানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় ৩০২/২০১/৩৪ দঃবিঃ ধারায় একটি মামলা নং ১০ দায়ের করেন। ঘটনার সুষ্ট তদন্তের স্বার্থে অফিসার ইনর্চাজ মোঃ লিয়াকত আলী নিজেই মামলার তদন্তভার গ্রহন করেন। মামলার অপর আসামীরা হলেন নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের রানীগাঁও গ্রামের সাহেব আলীর মেয়ে জাহেদা বেগম, হবিগঞ্জ সদরের ভাটপাড়া গ্রামের মৃত মফিজ আলীর ছেলে আবদুল মালিক, লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের মৃত আলফু মিয়ার ছেলে মাহফুজ মিয়া এবং নবীগঞ্জের সাইফুল ইসলাম ( কাউন্সিলর মিজানের গাড়ী চালক পরিচয় দিয়ে)। উক্ত মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, কাউন্সিলর মিজান ও তার গাড়ী চালক সাইফুল ইসলাম ব্যতিত অপর ৩ জন আসামীর সাথে মৃত জ্যোৎস্না বেগম আনসার বাহিনীতে গাজীপুরে প্রশিনের সুবাধে পরিচয় ও সখ্যতা গড়ে উঠে। প্রশিন শেষে জ্যোৎস্না বেগম বাড়িতে ফিরে আসলে গ্রেফতারকৃত মাহফুজ এবং পলাতক আসামী জাহেদা তাকে জানায় আনসার হিসেবে তার চাকুরীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর যোগদান করতে হবে। ওই চাকুরীর সু-সংবাদটি জ্যোৎস্না তার পরিবারকে জানায়। এরমধ্যে ৪ঠা ডিসেম্বর মাহফুজ মিয়া তার মোবাইল ফোন থেকে জ্যোৎস্না বেগমকে জানায় ৫ই ডিসেম্বর ঢাকায় যেতে হবে। এ সময় জ্যোৎস্না হাতে টাকা-পয়সা না থাকায় ওই তারিখে যেতে পারবে না, এছাড়া যেহেতু ১০ ডিসেম্বর যোগদান তাই ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় যাবার কথা জানায় জ্যোৎস্না। কিন্তু মাহফুজ বিকাশে জ্যোৎস্নাকে ২ হাজার টাকা পাঠিয়ে ৫ই ডিসেম্বর ঢাকা যেতে বলে। এই বার্তা নিয়ে হবিগঞ্জের ভাটপাড়া গ্রামের আব্দুল মালিকও তাদের বাড়ি গিয়ে জ্যোৎস্নার সাথে ৫ ডিসেম্বর ঢাকা যাওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা করে, সে নিজেও সাথে যাবে বলে আশ্বস্ত করে। কথা মতো ৫ই ডিসেম্বর জ্যোৎস্না বেগম ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতির সময় নবীগঞ্জের জাহেদা ফোনে জ্যোৎস্নাকে জানায় অলিপুর গেইটে যেতে, সেখানে সেও মাহফুজের কথা মতো অপো করছে। এমন সময় আব্দুল মালিক তাদের বাড়ি গিয়ে জ্যোৎস্নাকে সাথে নিয়ে ঘর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। এরপর সর্বশেষ জোৎস্না ৯ ডিসেম্বর বিকালে তার মায়ের সাথে কথা বলে। ১০ ডিসেম্বর সকাল বেলা পুলিশের মাধ্যমে জ্যোৎস্নার মৃত্যুর খবর পায় তার পরিবার। ঘটনার খবর পেয়ে তার পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। চলে শোকের মাতম ও এলাকাবাসীর আহাজারি। ফলে ঘটনার ৪দিন পরে ওই মামলাটি দায়ের করে নিহতের পরিবার।
এদিকে মামলার ২ নং আসামী সাইফুলকে নিয়ে স্থানীয় জনমনে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে সে কাউন্সিলর মিজানের ড্রাইবার হিসেবে। কিন্তু কাউন্সিলর মিজানুর রহমানের কোন প্রকার গাড়ী ও ড্রাইবার নাই বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে কে সে সাইফুর তা এখনও স্পষ্ট হতে পারেনি পুলিশ। কাউন্সিলর মিজানকে চিরকোটের সুত্রধরে এবং অপর ৩ জনকে কল লিষ্টের সুত্র ধরে মামলার আসামী করা হলেও সাইফুল ইসলামকে কিসের ভিত্ততে আসামী করা হয়েছে বাদী তা বলতে পারেন নি। এ ব্যাপারে বাদী রজব আলী ফকির বলেন, নবীগঞ্জ থেকে জনৈক ব্যক্তি মোবাইলে বলেছেন, সাইফুল ইসলাম মিজানের গাড়ী চালক, তাই আসামী করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে মৃত জ্যোৎস্না বেগম নাম-দস্তখত ব্যতিত লেখাপড়া জানেন না বলে মৃতের পরিবারের দাবী করার পরই চিরকোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। কোন আক্রোশে কাউন্সিলর মিজানকে ফাসাঁতেই কি এই চিরকোট লিখে জ্যোৎস্নাকে অন্যত্র খুন করে গন্ধ্যা গ্রামে কাউন্সিলরের বাড়িতে মৃতদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। এছাড়া কাউন্সিলর মিজানের ড্রাইবার পরিচয়ে সাইফুল ইসলাম নামে জনৈক ব্যক্তিকে আসামী করায় ঘটনার মুল মোটিভ অন্যদিকে দানা বাধতে শুরু করেছে এলাকারবাসীর মাঝে। এলাকার দাগী কোন সন্ত্রাসী বা ডাকাত পুর্ব শক্রতার জের ধরে এমন ঘটনা সাজাতে পারে বলে অনেকেই ধারনা করছেন। ঘটনার পরপরই নবীগঞ্জবাসী ঘটনার সুষ্ট তদন্ত দাবী করে মুল রহস্য উদঘাটনের স্বার্থে জাহিদা ও মাহফুজকে গ্রেফতারের জন্য জোরদাবী জানিয়ে আসছিলেন। তাদের ধারনা এদেরকে আইনের আওতায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলেই থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে। এক পর্যায়ে গতকাল শনিবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হবিগঞ্জ সদর থানার এসআই ইকবাল আহমদ ও নবীগঞ্জ থানার এসআই আশিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ হবিগঞ্জের সুলতানশী সাহেব বাড়ির ওরস থেকে মাহফুজকে গ্রেফতার করে নবীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে।