যুদ্ধাপরাধী মুক্ত বাংলাদেশ চাই
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আলোকযাত্রা কর্মসূচিতে শপথ
নিউইয়র্ক থেকে এনা: অন্যান্য বছরের মত এবারো সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকা শহীদ বুদ্ধিজীবী পালন করেছেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকার সভাপতি মিথুন আহমেদের নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পালন উপলক্ষে আয়োজক করা হয় সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠান মালার। এর মধ্যে ছিলো ১৩ ডিসেম্বর রাত ১২ মিনিটে আলোক যাত্রা, বাঙালির সাংস্কৃতিক সংগ্রামের স্বরূপ ঃ স্বদেশ ও অভিবাস নিয়ে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও ছিলো শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ছবি এঁকে তার প্রেক্ষাপট বর্ণনা এবং বুদ্ধিজীবীদের গ্রেফতার এবং নির্মমভাবে হত্যার কাহিনী। এর আগে ছিলো দেশের ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীদের নিয়ে বুদ্ধিজীবী দিবস ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ছবি আঁকা। রাত ১২টা ১ মিনিটে আলোকযাত্রা অনুষ্ঠানে এবং বাঙালির সংগ্রামের ইতিহাস বর্ণনা শেষে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মিথুন আহমদ তার ঘোষণা পত্রে বলেন, এই মুহূর্তে এই ক্ষণ এই সময় আমাদের অস্তিত্বের কাছে এক দ্বায়বদ্ধতা চেতনার কাছে
অঙ্গীকার আর স্বপ্নের কাছে স্বপ্নবান মানুষদের আত্মত্যাগের মূল্য ফিরিয়ে দেবার সন্ধিক্ষণ। তিনি বলেন, আজ ডিসেম্বর ১৪। এই মুহূর্তে ঘটেছিলো এক পরিকল্পিত নৃংশস বিভৎস ইতিহাসের এক ভয়াবহ হত্যাকান্ড। বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের গৌরবময় নয় মাস। গেরিলা যোদ্ধাদের কাছে পাকিস্তানী বাহিনীর পরাজয় আত্মসমর্পণ ও স্বাধীনতা ঘোষণার মাত্র ৩৬ ঘন্টা পূর্বে, পরাজিত শক্তির তাবেদার রাজাকার, আল বদর ও আল শামস বাহিনীর চিহ্নিত হত্যাকারী আশরাফুজ্জামান, চৌধুরী মঈনুদ্দিন, নিজামী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, অধ্যাপক, বিজ্ঞানী, চলচ্চিকারসহ মোট ৯৯৮ জনকে রাতের আঁধারে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। বিভৎস হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। ফেলে রাখে মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজ ও রায়ের বাজার বদ্যভূমিসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তিনি আরো বলেন, আমরা মনে করি দেশে আজ দুটো পক্ষ। এদিকে যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী, মৌলবাদী শক্তি, অন্যদিকে স্বাধীনতার পক্ষ ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠন। আমরা মনে করি আমাদের সামনে একটি পথ। এই সব স্বাধীনতা বিরোধী, মানবতাবিরোধী, অশুভ আঁতাত এবং তৎপরতার বিরুদ্ধে ব্যাপক সমাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এই দায়িত্ব আমি আপনি সবাই পালন করতে পারি, যে যেখানে আছি সেখান থেকেই। আমরা যুদ্ধাপরাধী মুক্ত বাংলাদেশ চাই।
আলোক যাত্রা অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী স্বপ্না কায়সার এবং ভায়লিনে ছিলেন শ্রুতি কনা দাস। অন্যদিকে সাল অনুযায়ী সাংস্কৃতিক আন্দোলন, সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বুদ্ধিজীবীদের কথন তুলে ধরেন আবীর আলমগীর, মুমু আনসারী, জি এইচ আরজু, মিজানুর রহমান বিপ্লব, সাবিনা উর্বি, মোহাম্মদ বসুনিয়া, সেমন্তি ওয়াহিদ, কান্তা আলমগীর ও সিসিলিয়া।
মিথুন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং মিনহাজ আহমেদ সাম্মুর পরিচালনায় সেমিনারে কুলদা রায়ের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন লুৎফুন্নাহার লতা এবং আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট নাট্যকার এবং একুশে পুরস্কারপ্রাপ্ত জামাল উদ্দিন হোসেন, বাঙালির সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, বর্ণমালার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা নূরন্নবী ও সাংবাদিক শিতাংশু গুহ।
সেমিনার শেষে রাত ১২টায় সবাই মিলে নেমে আসেন নিউইয়র্ক সিটির বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটসের ড্রাইভার সিটি প্লাজায়। সেখানে প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করে শত শত মানুষ আলোকযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। আলোক শোভাযাত্রায় অন্যান্যের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশে স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে মোমেন, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, সহ সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কমান্ডার নূরন নবী, সিনিয়র সহ সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদত মহি উদ্দিন দেওয়ান, আব্দুল হাসিব মামুন, যুব লীগের সভাপতি মিসবাহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদ ফরিদ আলম, আওয়ামী লীগ নেত্রী মোর্শেদা জামান, বিপার শিক্ষক এ্যানি ফেরদৌস, সুর ছন্দের অধ্যাপক এমদাদুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা হাজী এনাম, আনোয়ার হোসেন, স্বেচ্ছা সেবক লীগের সভাপতি শাখাওয়াত বিশ্বাস, শাহাদত হোসেন, টিটো রহমান, মিঠুসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।