দেশের মানুষ শান্তিতে নেই : খালেদা

Khaleda Ziaসুরমা টাইমস ডেস্কঃ দেশের মানুষ শান্তিতে নেই, তাই এই অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়ন করা উচিৎ। আওয়ামীলীগের দ্বারা দেশের মানুষ নির্যাতিত-গুম-খুন হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, যেদিন থেকে গ্যাস বিদ্যুত জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হবে সেদিন থেকেই লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে। তিনি দেশের জনগণকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যখনই ডাক দেয়া হবে তখন সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। মা বোনদেরকেও চোখের জল না ঝরিয়ে রাজপথে নামতে হবে। বর্তমান সরকারের হাতে দেশ নিরাপদ নয়।
বর্তমান সরকারকে মানুষ খেকো ও বাংলাদেশ খেকো উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কলকারাখান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পর এবার সুন্দরবন ধ্বংসের পরিকল্পনা করেছে। সুন্দরবনে তেলের ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনা পরিকল্পিত বলে তিনি দাবি করেন। এই সরকার হলমার্ক, ডেসটিনি, শেয়ারবাজার ধ্বংস করেছে। তাদের দুর্নীতির কারণে পদ্মাসেতু নির্মাণ করা হয়নি।
তিনি বলেন, এদেশের প্রতি শেখ হাসিনার কোনো টান নেই। কারণ শেখ হাসিনা ছাড়া এদেশে কেউ নেই। তাদের সবাই বিদেশে থাকে। তারা দেশের টাকা বিদেশে পাঁচার করছে। খালেদা জিয়া প্রশ্ন করে বলেন, শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় উপদেষ্টা হিসেবে ২ লাখ ডলার বেতন নেয় যা বাংলাদেশের টাকায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যা কোনো আইনেই হতে পারেনা। সে কত টাকা ট্যাক্স দেয় কত টাকা বিদেশে পাচার করে তা জনগণ জানে না। তিনি তরুণ প্রজন্মের প্রতি এর প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, আজকে ছাত্রলীগ দেশকে অস্ত্রাগারে পরিণত করেছে। পুলিশ দেখেও ধরে না। সরকার বিচার করেনা।
খালেদা জিয়া আরো বলেন, অবিলম্বে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সাহস থাকলে বালুর ট্রাক আর পুলিশ দিয়ে বাড়ি ঘেরাও না করে রাজপথে মোকাবেলা করুন। দেখবো পুলিশ কিভাবে গুলি চালায়। যতদিন প্রয়োজন হয় ততদিন যার যা কিছু আছে তা নিয়েই রাজপথে থাকতে হবে। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা উপক্ষো করেই আমরা রাজপথে থাকবো। তরুণদের সঙ্গে আমরাও রাজপথে নামবো।
দেশে বিচারবিভাগ বলে কিছু নেই দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, এদেশে বিচারকদের কোনো স্বাধীনতা নেই। আওয়ামী লীগ হলেই খালাস। আর বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা আজাদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপির জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও একের পর এক মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করা হচ্ছে।
সিলেটের মেয়রের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলাতে তার সাজা হতো। তার নেতাকর্মীদেরও অসংখ্য মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্বৈরাচারী এরশাদের মামলার কোনো বিচার হয় না। অথচ আমাদের মামলা নিয়ে টানাটানি করা হয়। শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বদিকে গ্রেফতারের ৬ দিন পর তার জামিন হয়ে যায় অথচ আমাদের নেতাকর্মীদের মাসের পর মাস কারাগারে থাকতে হয়।
তিনি আরো বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা শেখ হাসিনা ও মঈনুদ্দিন আগে থেকেই জানতো। এজন্য সে আগের রাতে পিলখানায় যায়নি। মঈনুদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনা সদস্যদের পিলখানায় পাঠায়নি। বিডিআর এর ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের দায় শেখ হাসিনা ও মঈনুদ্দিন এড়াতে পারেনা। এর দায় দায়িত্ব তাদেরকে নিতে হবেই। সারাদেশ মানুষ খুন ও গুমের ঘটনার দায়ও হাসিনাকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, কথায় কথায় মানুষকে জঙ্গী বানানো এই সরকারের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। আসল সন্ত্রাসী জঙ্গী হলো আওয়ামী লীগ। হাসিনাকে কেউ মারতে চায়না। কারণ সে যে পাপ করেছে তাতে সে নিজে নিজেই শেষ হয়ে যাবে। আল্লাহর তরফ থেকে গজব নাজিল হবে। যে মহিলাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে আমি মনে করি সেটা নাটক সাজানো হয়েছে। জঙ্গীদের তো ট্রেনিং দিত মির্জা আজমের বোনজামাতা শায়খ আব্দুর রহমানের স্ত্রী। অথচ আওয়ামী লীগ তাকে ধরেনি কারণ সে মির্জা আজমের বোন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, সামনে আওয়ামী লীগের দুর্দিন আসছে। আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা পাসপোর্ট রেডি করে রেখেছে। তিনি আওয়ামী লীগের কর্মীদের মাঠে না নামার আহ্বান জানান। কারণ নেতারা তো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে তখন কর্মীদের বিপদে পড়তে হবে। শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুর ব্রিজ সংলগ্ন বালুর মাঠে আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা জানান।
খালেদা বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে প্রতিনিয়ত মানুষ খুন হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে খুন হয়েছেন সাতজন নয়, এগারো জন। সেখানে যারা ছিলেন কাউকেই আর পাওয়া যায় নি। বিচার কি পরিবার পেয়েছে? কেন পাচ্ছে না?
তিনি বলেন, এ খুনের সঙ্গে জড়িত সরকার ও সরকারের লোকজন। আছে র‌্যাবও। র‌্যাব এই লোকদের ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। হত্যা করেই শান্ত হয়নি, শীতলক্ষ্যায় ডুবিয়ে দিয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সাত খুনের আসল হোতা অধরা রয়ে গেছেন। সরকার তাকে ধরে না, সাহসও পায় না। র‌্যাবের যাদের ধরেছে তাদের জেলখানায় জামাই আদরে রাখা হচ্ছে। আসল হোতা জিয়াকে ধরা হয় নি। তাকে ধরলেই সব কিছুই বের হয়ে আসবে। গ্যাস বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলে আমরা ঘরে বসে থাকবো না বলে জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া বলেন, তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন বিদ্যুতের উন্নতি হয়েছে। তাহলে গরমের সময় এতো লোডশেডিং হলো কেন। এদেশের মানুষ দেখেছেন গরমের সময় ঘণ্টায় কয়বার লোডশেডিং হয়েছে। গ্রামের মানুষ লোডশেডিংয়ের কারণে রাতে ঘুমাতে পারেনি।
তিনি বলেন, তারা আবারোও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পায়তারা করছে। যদি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় আমরা এদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো।
খালেদা জিয়া বলেন, বিদ্যুতের উন্নতির কোনো খবর নেই। আবার লম্বা লম্বা কথা বলে বেড়াচ্ছেন বিদ্যুতের উন্নতি করেছেন। আপনারা দেখেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায় গ্যাসের অভাবে কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের আমলে নতুন কোনো শিল্প কারখানা হয়নি। দেশের শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
এ কারণে মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের কাছ থেকে জাতি ভালো কিছু আশা করতে পারে না। দেশের গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিদেশিরা এখন বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক নিচ্ছেন না। জিএসপি সুবিধা বন্ধ রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শাহআলম, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক রেজাউল করীম, আতাউর রহমান, আবুল কালাম, গিয়াস উদ্দীন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, নগর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, সহ সভাপতি সুরুজ্জামান, সোনারগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর, জেলা যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাশিকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল প্রমুখ।