বাংলাদেশের বিচারিক হত্যাকান্ড নিয়ে আমেরিকা- বিট্রেন ও জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন
বাংলাদেশে বিচারবিভাগীয় ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড নিয়ে সেমিনারে টবি কিডম্যান
যে কাশিম উদ্দিনকে হত্যার অভিযোগে নিজামীর বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়েছে তার পরিবারই ২০০১ সালের পূর্বে নিজামীর নাম শুনেনি : নিজামী পুত্র নকিবুর রহমান
নিউইয়র্ক থেকে এনা: বাংলাদেশে বিচারবিভাগীয় এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ আয়োজিত এক সেমিনার গত ৬ ডিসেম্বর দুপুরে ( নিউইয়র্ক সময়) নিউইয়র্কের ইয়র্ক কলেজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। এইচআরডিবির প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং জাহিদ জামির ও বশুরা লিমার পরিচালনায় সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আইন বিশেষজ্ঞ এবং জামায়াতে ইসলামির নিয়োগকৃত আইনজীবী টবি কিডম্যান। প্যানেল আলোচক হিসাবে ছিলেন মন্ট্রিয়েলের ডউসন কলেজের অধ্যাপক ড. আবিদ বাহার, জামাতের আমীর এবং যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দন্ড প্রাপ্ত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে নর্থ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. নকিবুর রহমান, মজলিসে সুরার প্রেসিডেন্ট ড. শেখ আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক ড. আব্দুল হাফেদ জামেল।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, মীর মাসুম আলী, সিটি কলেজের সহকারী প্রফেসর ড. নিজাম উদ্দিন, এটর্নী এম আজিজ, সাহানা মাসুম, ডা, জুন্নুন চৌধুরী, প্রফেসর নূরুল ইসলাম, মীর কাশেম আলীর ভাতিজি ওমামা মাসুম, তালহা সাবাজ প্রমুখ।
প্রধান আলোচক আন্তর্জাতিক আইনজীবী টবি কিডম্যান যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যাল এবং যুদ্ধাপরাধ মামলায় যাদের দন্ড দেয়া হচ্ছে তাদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধ মামলা নিয়ে নোরাং রাজনৈতিক খেলা শুরু করেছে। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দল এবং বিরোধী মতাবলম্বীদের ধ্বংস করে দিতে চায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নয় আসলে সরকার বিচার বিভাগীয় হত্যাকান্ডের মাধ্যমে সরকার বিরোধী জনপ্রিয় নেতাদের শেষ করে দিতে চায়। আর এই বিচার বিভাগীয় হত্যাকান্ড নিয়ে আমেরিকা, বিট্রেন, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, আমাকে আইনজীবী হিসাবে জামাতে ইসলামি ২০১১ সালে নিয়োগ দেয়। আইনজীবী হিসাবে আমার কাজ হলো বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল নাম দিয়ে যে বিচারিক হত্যাকান্ড হচ্ছে তা বিশ্বকে জানানো। আমি তা জানিয়েছি। এই বিষয়ে সকলেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারাও কাজ করছে, তবে স্লো স্টাইলে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা উচিত। তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীই তা করা উচিত। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন মন্ত্রীর বক্তব্য, স্পাইপি ক্যালেঙ্কারি শাহবাগীদের দাবির প্রেক্ষিতে রায় বদল করে ফাঁসি এবং স্বাক্ষী কিডনাপের কথা উল্লেখ করে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে বিচার করা হচ্ছে আসলে তারা দোষী নয় এবং বিচারও সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে না, বিচার পদ্ধতিও ক্রুটিপূর্ণ। আসলে বিচারে নামে অবিচার করা হচ্ছে। তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা চাই যুদ্ধারাধীদের বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে এবং বাংলাদেশের বাইরে করা হোক। সেই বিচারালয়ের বিচারক নিয়োগ করা হোক আন্তর্জাতিক বিচারক। আমরা চাই না রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়ে কাউকে দন্ড দেয়া হোক।
যুদ্ধাপরাধ মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ড. নকিবুর রহমান বলেন, যে মাওলানা কাশিম উদ্দিনকে হত্যা করার জন্য মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে ( আমার বাবা) বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়েছে আমি তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছি। কাশিম উদ্দিনের ছেলে শিবলি আমাকে জানিয়েছে তারা ১৫ বছর আগে আমেরিকায় আসে এবং তারা বর্তমানে ডালাসে বসবাস করছে। আসার পর তারা আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে যায়নি। তাদের পরিবারের সবাই এখন ডালাসে রয়েছে। কাশিম উদ্দিনের ছেলে শিবলি আমাকে বলেছে, ২০০১ সালের আগে আমি বা আমার পরিবার কোন দিন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর নাম শুনিনি। তাকে মন্ত্রী করার পর আমরা চিনেছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এক পাতি নেতাকে আমার বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে বাধ্য করা হয়েছে। দ্বিতীয় স্বাক্ষী নান্নুকেও বাধ্য করা হয়েছে মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে। তাকে তুলে আনার হয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী টুকুর নির্দেশে সে মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়। নেয় মোটা অংকের অর্থ। সেই সাথে হুমকি দেয়া হয় ছেলের চাকরি খাওয়া হবে। তিনি বলেন, এবারেই বিচারের নামে অবিচার চলছে। এই অবিচারের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
ড. আবিদ বাহার বলেন, বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার হচ্ছে অবৈধ সরকার। শেখ মুজিব বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে, মানুষের বাক স্বাধীনতা, মানুষ হত্যা এবং সংবাদপত্রে স্বাধীনতা বেড়ে নিয়ে বাংলাদেশে বাকশাল কায়েম করেছিলেন। এখন তার মেয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বাকশাল টু কায়েম করছেন। তিনি বলেন, গোলাম আজমের অপরাধ তিনি ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। ভুট্টুর সঙ্গেতো শেখ মুজিবও দেখা করেছিলেন। তার পরিবারকে রক্ষার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। ১৯৫ জন চিহ্নিত য্দ্ধুাপরাধীদের মুক্ত করে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে কেউ যদি রাজাকার থাকে তাহলে তিনি হচ্ছেন শেখ মুজিব। তিনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজাকার। কারণ তিনি যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়েছিলেন। আর এখন শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধী হিসাবে যাদের বিচার করছেন, তাদের কেউই মুজিবের লিস্টে ছিলেন না।