ওএসডি কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করলেন খালেদা : ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিচ্ছে সরকার
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ অনেক দিন ধরেই সচিবালয়ে ওএসডি কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছিল।আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদবঞ্চিত মনে করা এই কর্মকর্তারা এখন প্রকাশ্যে মাঠে নামতে চাইছেন।সরকারের পক্ষ থেকে চাকুরিচ্যুতিসহ দমন-পীড়নের খড়গ আসতে পারে এটা জেনেই তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন।
বহুল প্রতিক্ষিত বৃহস্পতিবারের এই বৈঠক থেকে “পদবঞ্চিত” কর্মকর্তাদেরকে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আশ্বস্তও করা হয়েছে।বিএনপির পক্ষ থেকে তাদেরকে আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে, এগিয়ে যাও সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। সরকারের রোষাণলে পড়লে খালেদার সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়ার পর তারা আরো জোরে সোরে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনে সঙ্গে দেখা করার পরিনামে তাদের বিরুদ্ধে যে সরকারি চাকরিবিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে সরকার-এটা জেনে শুনেই তারা্ ঐদিকে পা বাড়িয়েছে।
জানা গেছে, নিজেদেরকে বঞ্চিত মনে করা এসব কর্মকর্তারা মূলত “জনতার মঞ্চের” আন্দোলনকে সামনে রেখে মাঠে নামতে চাইছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি দেয়া হলে ঐ সব কর্মসূচিতে কিভাবে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করা যায় তা নিয়েই তারা এখন আলোচনা করছেন। প্রশাসন যন্ত্রের কর্মকর্তাদের এই আচরনের কারণে নড়ে চড়ে বসেছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও। তারাও সংশ্লিষ্টদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে।
এসব কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেছেন প্রশাসনযন্ত্রকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে।তাদের বক্তব্য হচ্ছে, রাজনৈতিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে, প্রশাসনের উপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা চলবে না। এছাড়া পদোন্নতি বঞ্চিত মেধাবীদের সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে। সরকারি টাকায় ঘনঘন বিদেশ ভ্রুমণ বন্ধ করার পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানিয়ে সরকারের প্রশাসন যন্ত্রকে নিরপক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে ।ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তারা বলেছেন, দীর্ঘ আট নয় বছর ধরে যারা পদবঞ্চিত রয়েছেন তাদেরকে পদোন্নতি দিতে হবে। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এসব দাবি দাওয়া পূরণ করা না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপিপন্থী একজন যুগ্ম সচিব বলেন, “আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা, চাকুরিবিধিমালা অনুযায়ি আমার যা প্রাপ্য তা কি এ সরকার আমাকে দিয়েছে । তার পরও অফিস চলাকালে আমরা কি কোনো রাজনৈতিক কর্মমান্ডে জড়িয়েছি? সরকারি অফিসের সময় সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত । অফিস টাইমের পর আমি সরকারি কর্মকর্তা নই। অফিস টাইমের পর আমি যেকোনো স্থানে যেতে পারি।
তিনি আরো বলেন, আজকে যারা কথা বলছেন তারা তো সরকারি অফিস বাদ দিয়ে কাজকাম ফেলে শাহাবাগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তাদের বিচার আগে করতে হবে।সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন না।
তিনি আরো বলেন, বহু কর্মকর্তা-কর্মচারী দাপ্তারিক কাজ বন্ধ রেখে সচিবালয়ের সামনে আবদুল গণি রোডে নেমে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামীপন্থি সরকারি কর্মকর্তারা।তখন তো বিএনপি সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তৎকালীন সচিব ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ১৯৯৫ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবৈধভাবে ‘জনতার মঞ্চ” গড়ে তোলেন।
ওই মঞ্চে বেশ কিছু সরকারি কর্মকর্তা আইন ভঙ্গ করে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে যোগ দেন। বিতর্কিত ওই জনতার মঞ্চের কলঙ্কজনক অধ্যায়ের নজির সৃষ্টি হয় আছে গোটা প্রশাসনে ।পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে সরকারের মন্ত্রী হন।
তবে বৃহস্পতিবার সরকারি আমলাদের বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাতের ঘটনাকে সরকার হালকাভাবে নিচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। তিনি বলেছেন, যারা চাকরিবিধি ভঙ্গ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইমলাম আলমগীর গতকাল গভীর রাতের বৈঠককে এড়িয়ে গিয়ে বলেছেন, কোনো গোপন বৈঠক হয়নি্। আর বৈঠকে চাকরি করছেন এমন কোনো কর্মকর্তা যোগদান করেননি। বিএনপি সমর্থক সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দলের চেয়ারপারসনের স্বাভাবিক মতবিনিময় হয়েছে।
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আলী কবির বলেন, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিরা ২৪ ঘন্টার জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি। তারা কোনো ভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। তারা দল বেঁধে একসঙ্গে এ ভাবে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে পারে না। তারা বিধি লঙ্ঘন করেছেন।
তবে বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে উপস্থিত সচিবালয়ের সেই ৯ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। ওই ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী হলেন- যুগ্ম সচিব (ওএসডি) এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন, সিনিয়র সহাকারী সচিব (ওএসডি) এহসানুল হক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (বর্তমানে প্রেষণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে) বাদিউল কবির, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহীম মিয়াজী, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের নুরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আব্দুল মান্নান ও এ কে এম হুমায়ুন কবীর, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী শহীদুল হক ও এজি অফিসের কর্মচারী আব্দুল মান্নান।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আব্দুল নাসেরের কাছে শুক্রবার রাতে গোয়েন্দা সংস্থা ওই ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। রিপোর্টে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে ।
এদিকে এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেনসহ আরো কয়েকজন ঢাকাটাইমসকে জানান, গতকালের ওই বৈঠকে তারা উপস্থিত ছিলেন না। বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশানের কার্যালয়ে সরকারি কয়েকজন কর্মকর্তা বৈঠক করছেন এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর পরই এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ মিডিয়া পাড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সচিব আব্দুল হালিম, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি নেতা শমসের মুবিন চৌধুরী এবং দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছেন।