বাবার শেল্টারে ফয়জুল ও ফখরুলের কাছে জিম্মি এলাকাবাসি
বিশ্বনাথ প্রতিনিধিঃ বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রইছ আলীর ছেলে ফয়জুল ইসলাম সুমন ও ফখরুল ইসলামের কাছে এলাকাবাসী জিম্মি রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। লামাকাজী ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের রইছ আলী স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ পাওয়ার পর থেকেই তার দুই ছেলে ফয়জুল ও ফখরুল বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। পিতার শেল্টারেই তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি লাগিয়ে লামাকাজীবাজারে আহমদ ম্যানশনে দোকান ঘর দখল, স্থানীয় বাজারের পাশে নিরিহ লোকের ফসলী জমি জোরপূর্বকভাবে দখল, মদ, জোয়া, নারী ব্যবসা, ওসি, দারোগাকে হুমকি, শিক্ষক, চেয়ারম্যান ও স্থানীয় লোকজন কে ভয় ভীতি দেখিয়ে একের পর এক অপরাধ করে যাচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনি এলাকার লোকজন। যে ব্যক্তি মুখ খুলে অপরাধের কথা বলে তার বিরুদ্ধেই চালানো হয় নির্যাতন। ফলে ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি এলাকার নিরিহ লোকজন। এভাবেই চলছে তাদের কু-কীর্তি।
ওই দুই সহোদরের বিরুদ্ধে বিশ্বনাথ ও সিলেট জেলার বিভিন্ন থানায় ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতারের ভয়ে গত ২৪ নভেম্বর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ফয়জুল ও ফখরুল।
থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, ফয়জুল ইসলাম সুমন লামাকাজী এলাকার একজন চিহ্নিত গাড়ী ছিনতাইকারী। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সে লামাকাজী পয়েন্টেই অবস্থান করে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজিই তার কাজ। সুযোগ বুঝে গাড়ীও ছিনতাই করে। বিশ্বনাথ, জালালাবাদ থানাসহ সিলেটের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে ফয়জুলের বিরুদ্ধে। ফয়জুল গাড়ি চোর চক্রের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে এলাকায়। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা বা উপজেলা থেকে আসা গাড়ি ছিনতাই ফয়জুলের মুল টার্গেট। চলতি বছরের ১৫ জুলাই রাতে হাউসা এলাকা থেকে ফয়জুল একটি ট্রাক ছিনতাই করে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর চালক শ্রমিকের মোবাইল ও টাকা হাতিয়ে নেয়। রাতে গাড়ির মালিক গাড়ি ছাড়িয়ে আনতে সেখানে গেলে রাস্তায় তার মোটরাসাইকেলও ছিনিয়ে নেয় ফয়জুল। এ ঘটনায় বিশ্বনাথ উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের আবদুল মনাফের পুত্র বাদী হয়ে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেন। একই কায়দায় ডাকাতির ঘটনায় হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার শওড়াতলী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জালালাবাদ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া বিশ্বনাথ থানার বদলি এসআাই ছায়েদুর রহমানকে দেখে নেয়ার হুমকী দেয় গাড়ী ছিনতাইকারী ফয়জুল। এরপর ছায়েদুর রহমান একটি জিডি করেন। যার নং-৪৯৯।
গত ২৪ নভেম্বর রাতে ফয়জুল ইসলাম সুমনের কেশবপুর গ্রামের বাড়ি থেকে ছিনতাইকৃত অটোরিকশা উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এসময় পুলিশ ফয়জুল কে আটক করলেও তাকে অদৃশ্য কারনে পুলিশ ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠে এলাকায়। তবে অটোরিকশা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় দূস্যূতা মামলা করেন গাড়ি মালিক রতন কুমার মজুমদার। যার নং ১৫।
এলাকার ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, প্রায় চার বছর পূর্বে লামাকাজী বাজারের পাশে কেশবপুর গ্রামের মৃত ইছাক আলীর পুত্র রাজা মিয়ার ৮৪ ডিসিমেল ফসলী জমি জোরপূর্বকভাবে দখল করে ফয়জুল ও তার বাহিনী। দখলকৃত জায়গায় একটি টিনসেটের ঘর নির্মাণ করে সে। ওই ঘরে প্রতি রাতে বসে জুয়ার আসর, মদ, হেরোইন পান ও দেহ ব্যবসা। রাতের আড্ডায় বসেন ফয়জুল তার সহযোগিরা। এ বিষয়ে থানায় জিডি এন্টি করেছেন রাজা মিয়া। যার নং ১৪ (তাং ১১.০১.১০ইং)।
এলাকাবাসীর বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বুধবার লামাকাজীবাজারে গিয়ে জানাযায়, বাজারের আহমদ ম্যানশনের একটি দোকানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি লাগিয়ে দোকান ঘর দখল করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কার্যালয় করেছে ফয়জুল। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করে দলের কার্যালয়। প্রায় দেড় মাস পূর্বে ওই দোকান দখল করে ফয়জুল দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে বলে জানান মার্কেট মালিক ফরিদ আহমদ। দোকানের ভাড়াটিয়া কে বের করে দোকানের আসবাবপত্র বিশ্বনাথ-লামাকাজি সড়কের পশ্চিম পাশে ফেলে দিয়ে ফয়জুল দোকান দখল করে। এরপর গত বুধবার গভীর রাতেই দখলকৃত কার্যালয়ের সকল আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়ে অফিসে আগুণ লাগিয়ে দেয় ফয়জুল। ফলে আহমদ ম্যানশনের ৫টি দোকান ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এঘটনায় ফয়জুল ও তার ভাই ফখরুলকে আসামী করে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেছেন মার্কেটের মালিক ফরিদ আহমদ। এছাড়া দোকান দখল করে যুবলীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে সাবেক এক শফিকুর রহমান চৌধুরীর ছবি দিয়ে লিফলেট করে উন্নয়ন কর্মকান্ডের নামে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে চাঁদা আদায় করছে সে। তবে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মীরা জানান দলের নাম ভাঙ্গিয়ে সে নানা অপকর্ম করছে। বর্তমানে দলে তার তেমন অবস্থান নেই। ফয়জুলকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এব্যাপারে নির্যাতিত ফরিদ আহমদ বলেন, ফয়জুল ইসলাম সুমন তার লামাকাজিবাজারে আহমদ ম্যানশনের একটি দোকান দখল করে বঙ্গবন্ধুর ছবি লাগিয়ে দোকান ঘর দখল করেছে। তার বাহিনী দিয়ে মানুষ কে নির্যাতন, জায়গা দখল সব ধরনের অপরাধ-কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসি। ফয়জুলের পিতা রইছ আলী আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ পাওয়ার পর থেকে এলাকায় ক্রাসের রাজস্ব কায়েম শুরু করে সে। পিতার শেল্টারে ফয়জুল অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
কেশবপুর গ্রামের রাজা মিয়া বলেন, চার বছর পূর্বে ফয়জুল তার বাহিনী দিয়ে প্রায় ৮৪ ডিসিমেল ফসলী জমি জোরপূর্বকভাবে দখল করে বসে আসে। ওই জায়গায় ঘর নির্মাণ করে নারী ব্যবসা, মদ, গাঁজা, হোরোইন ব্যবসা করে আসছে। জায়গার ওপর গেলে আমাকে প্রাণে মারার হুমকি দেয়। এ বিষয়ে থানায় জিডি এন্টি করেছেন।
থানার অফিসার ইন-চার্জ মো. রফিকুল হোসেন বলেন, এলাকার একজন চিন্থিত ক্র্যামিনাল ফয়জুল ইসলাম সুমন। তার বিরুদ্ধে থানায় দূস্যূতা ও দোকার ঘর পুড়াসহ দুটি মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।