ঘুষ-দুর্নীতিকে বৈধতা দিচ্ছেন মন্ত্রী, পৃষ্ঠপোষক সরকার
খেলাফত মজলিসের সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীব
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান বলেছেন, দেশ আজ চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন চরম অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। দেশের কোন মানুষই নিরাপদ নয়, হত্যা, খুন, গুম, ছিনতাই নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। সামাজিক হত্যাকান্ডর অহরত বেড়েই চলেছে, সরকারের মন্ত্রী ঘুষ দুর্নীতিকে বৈধতা দিচ্ছে, এ সরকার দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক সরকারে পরিণত হয়েছে। সরকারী দল ও বিরোধী জোট বিদেশীদের নিকট ধর্না দিয়ে চলেছে। এমনি পরিস্থিতিতে মানুষ খেলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রয়োজন অনুভব করছে। একমাত্র খেলাফত ব্যবস্থাই জাতীর ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে। তাই খেলাফত প্রতিষ্ঠায় গণআন্দোলনকে তৃণমূলে ছড়িয়ে দিয়ে গণআন্দোলনে পরিণত করতে হবে। এক্ষেত্রে মজলিস কর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রিন্সিপাল হাবীব শনিবার খেলাফত মজলিস সিলেট বিভাগ আয়োজিত বিশাল দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। বেলা ২টা থেকে রেজিষ্ট্রারী মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সিলেট বিভাগের হাজার হাজার দায়িত্বশীল ও নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রিন্সিপাল হাবীব আরো বলেন, প্রিয় নবী (সা:) বলেছেন, ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহিতা উভয়ই জাহান্নামী। অথচ আমাদের সিলেটেরই কৃতি সন্তান অর্থমন্ত্রী সাহেব ঘুষ বৈধ বলে প্রিয় নবীর উম্মতের হৃদয়ে আঘাত হেনেছেন। তা কখনো মেনে নেয়া যায়না। অর্থমন্ত্রীকে তওবা করতে হবে। ঘুষ ও সুদভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কখনো কল্যাণকর নয়, ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার মধ্যেই দেশ, জাতির কল্যাণ নিহিত। এ আহ্বান জনগণের কাছে পৌছে দিতে হবে।
তিনি বলেন, আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেট হতে কুখ্যাত তাসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। আমরা দু’দশক পূর্ব হতে নাস্তিক-মুর্তাদদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করার দাবী জানিয়ে আসছি কিন্তু কোন সরকারই ভ্রুক্ষেপ করেনি, তাই কিছুদিন পরপরই নাস্তিকরা পবিত্র কোরআন, ইসলাম ও প্রিয়নবী (সা:) এর বিরুদ্ধে কটুক্তি করার দুঃসাহস দেখায়। সিংহভাগ মুসলমানের দেশে তা কখনো বরদাশত করা হবে না। অবিলম্বে নাস্তিক মুর্তাদদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করতে হবে।
মাওলানা হাবীব বলেন, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই দুর্বিসহ। এমনি অবস্থায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি মরার উপর খড়ার ঘার মত। গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি কখনো মেনে নেয়া হবে না। দেশবাসীকে এ ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
দায়িত্বশীল সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা সভাপতি মাওলানা রেজাউল করিম জালালী। কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মাওলানা আব্দুল আজিজ, সিলেট মহানগর সহ-সভাপতি মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এমরান আলমের যৌথ উপস্থাপনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য নায়েবে আমীর মাওলানা নেজাম উদ্দিন বলেন, উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.) এর খেলাফত কালে ছাগল ও বাঘ এক সাথে পানি পান করত। মানুষের মধ্যে কোন হিংসা-বিদ্বেষ ছিলনা। পশুর মধ্যেও সম্প্রীতি ছিল, শান্তি সম্প্রীতির সমাজ প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি খেলাফত ব্যবস্থাই দিতে পারে।
মাওলানা ইউসুফ আশফাক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটুক্তিকারীদের অহরহ শাস্তি হচ্ছে অথচ প্রিয় নবী (সা:) এর বিরুদ্ধে কটুক্তিকারী নাস্তিক মুর্তাদদের কোন শাস্তি হয়না। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রে তা মেনে নেয়া যায় না। নাস্তিক-মুর্তাদদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিদ্যাপীঠে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। পর্দার উপর আক্রমণ হয়েছে, নাস্তিকদের আখড়া বানানোর অপচেষ্টা চলছে। তা দেশের জন্য অশনী সংকেত। তৌহিদী জনতার ধৈর্য্যরে বাধ ভেঙ্গে গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, এক সময় খেলাফত ছিল মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক। খেলাফত শাসন ব্যবস্থা ছিল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের আশ্রয়স্থল। খেলাফতের অনুপস্থিতিতেই আজ মুসলিম উম্মাহ সাম্রাজ্যবাদের উপহাসের পাত্রে পরিণত হয়েছে। মজলিস কর্মীদের খেলাফতের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌছে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে, নিজকে যোগ্য কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিরাজী, সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি মাওলানা নূরউদ্দিন, মৌলভীবাজার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল মন্নান, হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল মালিক, মহানগর সহ-সভাপতি গাজী রহমত উল্লাহ, সিলেট জেলা সহ-সভাপতি মাওলানা রশিদ আহমদ, মহানগর সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা জাহিদ উদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা ছামিউর রহমান মুছা, মাওলানা আতিকুর রহমান, মাওলানা আব্দুল আহাদ, মাওলানা নাঈম উদ্দিন, মাওলানা আরিফুল হক ইদ্রিস, ছাত্রনেতা হারুনুর রশিদ প্রমুখ।