মৌলভীবাজারে জলমহাল দখল নিয়ে মন্ত্রী পরিবারের দুই পক্ষে অবস্থান

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় একটি জলমহালের দখল নিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ও তার ভাই লিয়াকত আলী দুইজন দুই পক্ষে অবস্থান নেয়ায় জলমহালের দখল নিতে দুইপক্ষের মধ্যে যেকোন সময় ঘটে যেতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সহ প্রানহানির মত ঘটনা। একপক্ষ তার পৈতৃক সম্পত্তি দাবী করে ইতিমধ্যে মন্ত্রীর ভাই লিয়াকত আলী সহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের কয়েকজন বিতর্কিত নেতাকে সঙ্ঘে নিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর কোনপ্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জলমহালের দখল নিজের আয়ত্তে নেন। অপরপক্ষ নিয়মমোতাবেক সরকার থেকে ৩ বছরের লিজ নিয়ে সকল কাগজপত্র নিজেদের অনুকুলে থাকার পরও জলমহাল দখলের চেষ্টা করে লোকবল না থাকায় দখল নিতে পারছেননা। এ নিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর *সমাজকল্যাণমন্ত্রীর ভাইয়ের দখলে মৌলভীবাজার জলমহাল; শিরোনামে একটি সংবাদ দৈনিক যুগান্তর সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় প্রকাশ হলে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী পৈত্রিক সম্পত্তি বলে দাবীদার উপজেলার ধুলিজুরা গ্রামের মৃত আকল আলীর পুত্র খেলা মিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে নিরপেক্ষভাবে জলমহাল ইজারার কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ মোতাবেক ,হাওর কাউয়াদীঘি অন্তর্গত ধনিয়া বড়ইউড়ি বিল জলমহালটি চলতি বছর থেকে ৩ বছরের জন্য লিজ নিতে উপজেলার রক্তা গ্রামের বৈশাখী যুব মৎসজীবি সমবায় সমিতি অন্যান্য সমবায় সমিতির সাথে প্রকাশ্য নিলাম ডাকে অংশগ্রহন করে সকল প্রকার আয়কর খাজনা পরিশোধ করে বাসরিক ৫ লাখ আটষটি হাজার ৩ শত ছিয়ানব্বই টাকা ইজারা মুল্য পরিশোধ পুর্বক ৩ বছরের জন্য লিজ গ্রহণ করে। সরকারী ভাবে কাগজপত্রে উক্ত সমবায় সমিতির সম্পাদক নাছিম উদ্দিনকে গত ১৬ নভেম্বর জলমহালের দখল বুঝিয়ে দেয় সরকার। কিন্তু পৈত্রিক সম্পত্তির দাবীদার খেলা মিয়া জলমহালের দখল ছাড়তে নারাজ। জলমহালের পাশে উচু জমিতে টিনসেডের ঘর নির্মাণ সহ টিউভওয়েল বসিয়ে বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামীদের থাকার জায়গা করে দিয়েছেন। লিজ গ্রহিতারা যাতে কোনভাবেই জলমহালের দখল নিতে না পারে সেজন্য দেশীয় অস্ত্র ও মজুদ রেখেছেন সেখানে।গত সোমবার দুঠি সিএনজি করে বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র যাওয়ার খবর লোকমাধ্যমে শুনে এ প্রতিবেদক সহ স্থানীয় সাংবাদিকরা সিএনজির পিছু নিয়ে ধনিয়া বড়ইউড়ি জলমহালে যান। সেখানে গেলে দেখা যায়, খেলা মিয়ার পক্ষের লোকজন বভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জলমহালের চারদিকে মহড়া দিচ্ছে।কথা হয় খেলা মিয়ার সাথে। খেলা মিয়া সাংবাদিকদের জানান,এ জলমহালের বেশীরভাগ জমি তার পৈত্রিক সম্পত্তি, এ নিয়ে তিনি আদালতে মামলা করেছেন,যা বিচারাধীন আছে। আদালত জলমহাল এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে। কিন্তু লিজ গ্রহণকারী নাছিম আহমদ ১৪৪ ধারা ভঙ্ঘ করে সেখানে তার লোকজন নিয়ে এসে জলমহালের দখল নেয়ার পায়তারা করছেন।তাই তিনি তার লোকজনদের নির্দেশ দিয়েছেন এদেরকে প্রতিহত করতে। তিনি সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীকে নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য সহ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেন।এদিকে খেলা মিয়ার সকল দাবী প্রত্যাখান করে লিজ গ্রহিতা বৈশাখী যুব সমবায় সমিতির সম্পাদক নাছিম উদ্দিন সাংবাদিকদের সামনে তার লিজ গ্রহণের সকল কাগজাদি তুলে ধরে বলেন,ধনিয়া বড়ইউরি জলমহালটি সরকার মালিকানাধীন জলমহাল। এর আগেও তারা বেশ কয়েকবার সরকার থেকে জলমহাল লিজ নিয়েছে। খেলা মিয়া কখনো জলমহাল তার পৈত্রিক সম্পত্তি বলে দাবী করেননি। অজ্ঞাত কারনে এই প্রথমবার জলমহালটি তার পৈত্রিক সম্পত্তি বলে দাবী করে স্থানীয় সন্ত্রাসী দিলাল মিয়া,হেলাল মিয়া সহ কতিপয় সন্ত্রাসী ভাড়া করে লাখ-লাখ টাকার মাছ লুট করছেন।নাছিম জানান,দিলাল ও হেলাল এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী।তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষন,চুরি,ডাকাতি সহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। তার কথার সত্যতা জানতে সাংবাদিকরা রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনকে ফোন দিলে তিনি জানান,দিলাল ও হেলালের বিরুদ্ধে রাজনগর থানায় ধর্ষন সহ ৩ টি মামলা রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে।