কলেজছাত্রী তিন বোন বখাটেপনার শিকার
সোহেল আহমদঃ সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার পিরিজপুরে কলেজ ছাত্রী তিন বোনকে এলাকার বখাটেরা ইভটিজিং করছে। বখাটেদের অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় অসহায় দরিদ্র পরিবারের কলেজ ছাত্রী তিন বোন ঠিকমত লেখাপড়া করতে পারছেনা। কলেজে যেত আসতে রাস্তায় এবং বাড়ির পাশে বখাটেরা তাদের অশ্লিল ভাষায় টিঠকারী করছে। সামাজিক মান সম্মানের কারণে তারা কোন প্রতিকার করতে পারছেনা। প্রতিবাদ করলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ব্যবহারসহ অসামাজিক কথাবার্তা বলতে থাকে। থানায় অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পেয়ে তারা অতিষ্ট হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ পেয়েও পুলিশ তাদের সহযোগীতা করছে না। তাদের লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা সিলেটের অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
জানাগেছে, পিরিজপুর গ্রামের হতদরিদ্র মাসুক মিয়ার তিন মেয়ে সাজিমা আক্তার (২২) সিলেট মহিলা কলেজের ডিগ্রীর ছাত্রী, রহিমা আক্তার (১৮) উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুমি বেগম(১৬) সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্রী। তাদের বাবা হতদরিদ্র অসুস্থ, একমাত্র ছোট ভাই ৭ম শ্রেণীর ছাত্র। তাদের মা বাড়িতে টেইলারিং করে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বহন করছেন। পরিবারকে সাহায্য করতে তারা পাড়ায় টিউশনি করে সংসার চালাচ্ছে। এমতাবস্থায় তারা খুবই অসহায়। একমাত্র বসতভিটা ছাড়া তাদের কোন সহায় সম্পদ নেই। তাদের দেখভাল করার মতো আর কেউ নেই। তাদের প্রতিবেশী জাবেদ আহমদ, শাহিন আহমদ, আলাউদ্দিন মিয়া, আনোয়ার মিয়া, শাহিন মিয়া এবং মাফিক মিয়া একেকজন দীর্ঘদিন ধরে তাদের পিছুু নিয়েছে। কারণে অকারণে তাদের বাড়িতে ডুকে একেকজন অযথা ঘুরাফেরা করে। কলেজে যেতে আসতে পিছু নেয় এবং রাস্তায় একা পেয়ে অশ্লিল ভাষায় ঠিটকারী করে। গ্রামের মাতব্বরদের কাছে বিচার চেয়েও কোন প্রতিকার মিলেনি। তারা গায়ের জোরে চলাফেরা করে। জাবেদ আহমদ বয়স্ক ভাতা পাইয়ে দেবে বলে মেয়েদের কুপ্রস্তাব দেয়। তারা তার কথায় কান না দেওয়ায় জোর করে তুলে নেবে বলে হুমকি দেয়। থানায় বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ নিয়ে গেলেও পুলিশ তাদের অভিযোগ গ্রহণ করেনি। জাবেদ আহমদের সাথে থানার অফিসারদের রয়েছে দহরম মহরম। তাদের অত্যাচারের মাত্রা দিনদিন বেড়ে যাওয়ায় তারা প্রতিকার চেয়ে গত ২১ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক দক্ষিণ সুরমা থানার ওসিকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেন। কিন্তু আজোবদি পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মুরসালিন জানান, ডিসির নির্দেশ পেয়েছেন। তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন তারা উভয়েই বজ্জাত। তিনি এএসআই বাহার উদ্দিনকে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিতে বলছেন।
এদিকে ভিকটিম সাজেমা আক্তার জানিয়েছেন, থানার দারোগা বাহার কয়েকদিন পরপরই তদন্ত করতে রাতে তাদের বাড়িতে এসে তাদের বিছানায় বসে থাকে। আর অযথা কথাবার্তা বলতে থাকে। সাজিমা আরো জানায় দারোগা বাহারের আচরনে তারা অস্বস্থি বোধ করে। বাড়িতে আসলে সহজেই যেতে চায়না। তারা একাধিকবার বলেছেন তাকে যেন প্রয়োজনে দিনে আসতে। কারণ তাদের বাবা অসুস্থ, ঘরে পুরুষ লোক নেই। কিন্তু এএসআই বাহার উদ্দিন দিনে কাজে ব্যস্থ থাকে তাই আসতে পারেনা বলে তাদেরকে জানায়। বাহারের মোবাইল ফোনের অশালিন কথাবার্তা রেকর্ড করে সাজিমা তার এক আত্মীয়কে নিয়ে থানায় গিয়ে ওসিকে শুনায়। রেকর্ড শুনে ওসি তার উপর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং তাদেরকে খারাপ মেয়ে বলে মন্তব্য করেন।
সাজিমার মা জানিয়েছেন, দক্ষিণ সুরমা থানার এএসআই বাহার উদ্দিন তার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করে বলেন কোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। টাকা না দিলে তার মেয়েদের বিরুদ্ধে খারাপ মেয়ে বলে রির্পোট পাঠাবে। তিনি বাধ্য হয়ে মেয়েদের ইজ্জত বাচাতে ২ হাজার টাকা দিলে বাকি ৩ হাজার টাকার জন্য বার বার বাড়িতে আসে এবং ফোনে খারাপ আচরন করে। তার এসব কথাবার্তা মোবাইলে রেকর্ড রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে সিলেটের অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, বিভিন্ন মানবধিকার সংস্থাসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।