গ্রামবাসীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে বাড়ি ফেরা হলো না মুক্তিযোদ্ধা রুশন আলীর
গোয়াইনঘাট থানার তোয়াক্কুল ইউনিয়নের বীরকুল গ্রামের বাসিন্দারা থানা পুলিশের নির্মম নির্যাতন ও হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। পুলিশ প্রতিদিন গ্রামে অভিযান চালিয়ে নিরীহ মানুষ ও মহিলাদের গ্রেফতার করছে। স্কুল ছাত্র ছাত্রীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে ভয় পাচ্ছে। রোগিকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে পুলিশ গাড়ি আটকিয়ে চালককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই গ্রামবাসী প্রতি মুহুর্তে কাটাচ্ছেন পুলিশি গ্রেফতার আতঙ্কে।
১২ নভেম্বর বুধবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বীরকুল গ্রামবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য এ অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধা রুশন আলী। পরে সংবাদ সম্মেলন শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে গোয়াইনঘাট থানার সালুটিকর পুলিশ ফাড়ির এস আই খায়রুল বাশারসহ পুলিশ সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা রুশন আলীকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারের পূর্বে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, থুবরী শিলচান জলমহালটি ২০১২ সালে ৬ বছরের জন্য ইজারা গ্রহণ করে স্থানীয় মানাউরা প্রভাতী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। ২০১৩ সালে জলমহালটি স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি সাবেক মেম্বার আব্দুল মনাফ গংরা ৪০ লক্ষ টাকায় প্রভাতী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির কাছ থেকে সাব-লিজ মর্মে ক্রয় করেন।
তখন সমিতির অন্যান্য সদস্য ও নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে টাকার লেনদেনও করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গ্রামের ময়বুর রহমান (বুলাই), ফয়জুল করিম (বছই), রুশন আলী, বৌল গ্রামের আফতাব উদ্দিন, পাইকরাজ গ্রামের তোতা মিয়া প্রমুখ। তখন আব্দুল মনাফ সমিতির অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রস্তাব করেন জলমহালটি সাব-লিজের চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য। কিন্তু সমিতির সাধারণ সম্পাদক তিতু রঞ্জন চালাকি করে বলেন, জলমহাল নীতিমালায় চুক্তিপত্রের কোনো বিধান নেই। চুক্তিপত্র করলে সমিতির লীজ বাতিল হয়ে যাবে। এভাবেই চুক্তিপত্র না দিয়ে জলমহালটি আব্দুল মনাফ গংদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকেই জলমহালটির ভুগদখল করে আসছেন আব্দুল মনাফ গংরা। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো এ জলমহালটিতে কাঁটা, কোপা, মাছের খাদ্য, পাহারাদার নিয়োগসহ যাবতীয় রক্ষনাবেক্ষণ করে আসছেন আব্দুল মনাফ গংরা। গত ২ নভেম্বর জলমহাল থেকে মাছ সংগ্রহ করতে গেলে আব্দুল মনাফকে বাধা প্রদান করেন প্রভাতি সমিতির সেক্রেটারী তিতু রঞ্জন ও আমিরুল, আনোয়ার হোসেন, হেলাল, সামছুদ্দিন গংরা।
এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে দুই শিশুসহ উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হয়। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সাবেক ইউপি সদস্য ইন্তাজ আলী মেম্বার ও ইশ্রাব আলী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। তা স্বত্বেও আমিরুল গংরা তিতু রঞ্জনকে দিয়ে আব্দুল মনাফ গংদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। আব্দুল মনাফ গংদের পক্ষে রুশন আলী বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় কাউন্টার মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে পুলিশ রহস্যজনক কারণে একপেশে মনোভাব প্রদর্শন করছে। আহত ব্যক্তিরা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়লেও এ নিয়ে থানা পুলিশের কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এছাড়া দায়ের করা মামলায় আসামি গ্রেফতার না করে বরং উল্টো আহত লোকদের মারপিট করে থানা পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করে হয়রানি করা হচ্ছে। কাউন্টার মামলার পর থেকে গোটা জাঙ্গাইল বীরকুলি গ্রাম প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে। এ সুযোগে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ সুপরিকল্পিতভাবে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা সৃজন করেছে। গত ৮ নভেম্বর রাত ৩টার দিকে বীরকুলি গ্রামের মনির উদ্দিনের স্ত্রী ছালেহা বেগম ছেলে মেয়ে নিয়ে ঘুমন্ত ছিলেন। পুলিশের ডাক শুনে তিনি ভয়ে একা ঘরের দরজা খুলতে চাননি। এতে পুলিশ দরজা ভেঙ্গে ছালেহা বেগমের ঘরে প্রবেশ করে ছালেহা বেগমকে মারপিট করে আহত করে । পুলিশের বন্দুকের আঘাতে ছালেহা বেগমের বাম হাতে মারাত্বক জখম হয়। গোয়াইনঘাট হাসপাতালে নিয়ে ১২টি সেলই ও অল্প কিছু ঔষধ পত্র দিয়ে তাকে এসল্ট মামলায় আটক দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরন করে পুলিশ। এ সময় পাশের ঘরের দুই স্কুলছাত্র ও মহিলাসহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। যাবার পথে কয়েক রাউন্ড ফাকা রাবার বুলেট ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে পুলিশ । পরবর্তিতে সংবাদপত্রে গোয়াইনঘাটে মনাফ বাহিনীর হামলায় ওসিসহ ১৯ পুলিশ আহত শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা , পরিকল্পিত ও বানোয়াট। ঐদিন পুলিশের সাথে কোনো ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। অথচ থানায় দায়ের করা হয় পুলিশ এসল্ট মামলা। যার নং- এসল্ট মামলা নং ১২/২৫৯। ঐ মামলায় গ্রামের নারী শিশু, স্কুল ছাত্র ও শিক্ষকসহ এজাহার নামীয় ৬০ জন এবং অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ স্থানীয় সোনার বাংলা উচ্চবিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে এবং প্রতিভা বিদ্যানিকেতনের শিক্ষক আবুল কালামকে ধরে নিয়ে যায়। এছাড়া বীরকুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফখরুল ইসলাকেও পুলিশ এসল্ট মামলায় আসামি করা হয়।
এদিকে আমিরুল ইসলাম গংদের বিরুদ্ধে তাদের অপকর্ম তুলে ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা রুশন আলী বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৬/২৫৩। অথচ পুলিশ এ মামলার কোনো আসামিকে গ্রেফতার না করে রুশন আলীর ছেলে বীরকুলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিক ফয়সল আহমদকে গ্রেফতার করে বিনা অপরাধে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। এভাবেই গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ বীরকুল গ্রামবাসীকে হয়রানি করছে। পুলিশে মদদদাতা এলাকার প্রভাবশালী আমিরুল বাহিনীর প্রধান আমিরুল ইসলাম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ বীরকুল গ্রামের নিরীহ মানুষকে পুলিশি হয়রানী থেকে রক্ষা করতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা রুশন আলী । সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন,বীরকুল গ্রামের আজিুজুর রহমান,ফরিদ উদ্দিন,হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।