অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এসপিটিআই’র এমডি নিপা আটক
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ প্রতারনার অভিনব ফাঁদ তৈরী করে একটি ভূঁয়া কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের জামানত ও শিক্ষার্থী ভর্তি করে তারা এ বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারকরা পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে সোমবার বিকালে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সোমবার বিকাল ৩টার দিকে নগরীর দরগা গেইট এলাকার রাজা ম্যানশনের ২য় তলায় সিলেট প্রফেশনাল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটে এ ঘটনা ঘটে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। কিন্তু তার আগেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটক বন্ধ করে কয়েকটি কক্ষ ও আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। পুলিশ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আয়শা সিদ্দিকা নিপাকে আটক করে কোতোয়ালী থানায় নিয়ে যায়। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কথিত প্রিন্সিপাল আমিনুল ইসলাম (চেয়ারম্যান নিপার স্বামী) সোমবার এ ঘটনার আগেই পালিয়ে যান।
আমিনুল ইসলামের পালিয়ে যাবার খবর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা উক্ত প্রতিষ্ঠানে এসে জড়ো হন। সিলেট প্রফেশনাল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটে এ ঘটনার খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এসময় ভূক্তভোগীরা তাদের সাথে এ প্রতারণার কথা জানান।
সিলেট প্রফেশনাল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটি নগরীর দরগা গেইট এলাকার রাজা ম্যানশনের ২য় তলায় অবস্থিত। ৩/৪টি শ্রেণীকক্ষ, ১টি অভ্যর্থনা কক্ষ ও ১টি অধ্যক্ষের কক্ষ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে। বছর কয়েক আগে এটি ভাড়া নেন নিপা আক্তার ও তার স্বামী। সোমবার বিকাল ৩টার দিকে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এসে জড়ো হন। পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা জানান এই প্রতিষ্ঠানের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। নিয়মিত ক্লাসও হয় না এখানে। ৩ বছর যাবত প্রায় এভাবেই চলে আসছিল এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত নাজমিন বেগম সোমবার ঘটনাস্থলে ডেইলি সিলেটকে জানান, শিক্ষক হিসেবে তাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে জামানত নিয়ে চাকুরী দেয়া হয়েছে। নিয়োগপত্রে মাসিক বেতন উল্লেখ করা হয় ১১হাজার ৬শ টাকা। গত সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ থেকে প্রায় আড়াই মাস চাকুরী করার পরও তারা কোন টাকাপয়সা পাননি।
প্রথম দফায় গত আগস্ট মাসে স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০ জনকে এরকম নিয়োগ দেয়া হয়। প্রত্যেকের কাছ থেকে একই হারে জামানত নেয়া হয়েছে বলে নাজমিন জানান।
অভিযোগকারী শিক্ষকরা আরো জানান, পরবর্তীতে এভাবে আরো ৪জনকে ৩০ হাজার টাকা করে জামানত নিয়ে একই হারে বেতন নির্ধারণ করে নিয়োগ দেয়া হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে নিয়োগকৃত ২০ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৭জনই মহিলা এবং বাকী ৩জন পুরুষ। এছাড়া পরবর্তীতে নিয়োগকৃত ৪জনই মহিলা। উক্ত সূত্রমতে ২০ জনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে ১০ লাখ টাকা ও ৪ জনের কাছ থেকে ৩০ হাজার করে ১লাখ বিশ হাজার টাকা মোট ১১লাখ বিশ হাজার টাকা শিক্ষকদের কাছ থেকেই হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় দেড়শ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বিভিন্ন মেয়াদী কোর্সে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে যা প্রায় ৪০ লাখ টাকা।
সিলেট প্রফেশনাল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট এর ওয়েবসাইট http://sptibd.com/ এ গিয়ে নানাবিধ বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পাওয়া গেছে। উক্ত সাইটে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে আয়শা সিদ্দিকা নিপার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। একই সাথে উক্ত সাইটে রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য লোভনীয় অনেক অফার। তাদের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়ও একটি শাখা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের হাতে অবরুদ্ধ হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আয়শা সিদ্দিকা নিপা এসব অভিযোগের ব্যাপারে কোন বক্তব্য না দিলেও পরবর্তীতে তিনি পুলিশি উপস্থিতিতে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। সিলেট কোতোয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম জানান-পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আয়শা সিদ্দিকা নিপাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।