প্রথম রাষ্ট্রপতিই ছিলেন না, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্টও ছিলেন
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রকৃত ইতিহাস বলার কারণে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমান আরও দাবি করেছেন, তার বাবা জিয়াউর রহমান শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক কিংবা প্রথম রাষ্ট্রপতিই ছিলেন না, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্টও ছিলেন।
বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখা আয়োজিত জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় তারেক রহমান এসব কথা বলেন। বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের আট্রিয়াম হলে এ সভা হয়।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপার্সন তারেক রহমান বলেন, ৭ নভেম্বর সেনা ও জনগণের মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সকল অপশক্তিকে পরাজিত করে জনগণ। এখন আবার এইসব পরাজিত অপশক্তি ধীরে ধীরে সংগঠিত হয়ে মহাজোটের নামে একজোট হয়েছে। তিনি সবাইকে এইসব অপশক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহবান জানান।
৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত পাঁচদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের চতুর্থ দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস। সভা পরিচালনা করেন কয়সর এম আহমেদ।
প্রায় দেড় ঘণ্টার বক্তৃতায় তারেক রহমান মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলেন। তিনি দাবি করেন, জিয়াউর রহমান জোর করে ক্ষমতা দখল করেননি এবং জাতীয় চার নেতা হত্যার সঙ্গে তার বাবার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। নিজের বক্তব্যের পক্ষে নানা তথ্য এবং যুক্তি তুলে ধরতেও চেষ্টা করেন তিনি।
স্থানীয় সরকারবিষয়ক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জেলহত্যার সঙ্গে জিয়া জড়িত বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার জবাবে তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেরাই জেলহত্যা দিবস পালন করে ৩ নভেম্বর। ওই হত্যাকাণ্ডের আগের দিন ২ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে সেনানিবাসের বাসায় গৃহবন্দী করেছিলেন। তার দাবি, জিয়া ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেননি। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খন্দকার মোশতাক এটি জারি করেছিলেন।
বর্তমান সরকারকে অবৈধ উল্লেখ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক বলেন, এই সরকার দাবি করছে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। অথচ গত ১ নভেম্বর সারা দেশে বিদ্যুতের সমস্যা দেখা দিলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল পাঁচ হাজার মেগাওয়াট এবং আমদানি করা বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল ৫০০ মেগাওয়াট।
বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন, ‘এই ইনু বাহিনী ১৯৭৫-এ শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পটভূমি তৈরি করেছিল এবং পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চেয়েছিল। সে কাজে ব্যর্থ হয়ে তারা এখন মিথ্যাচার ও ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে জিয়ার ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।’
তারেক বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আগস্ট থেকে নভেম্বর—এই কয়েকটি মাস ছিল ঘটনাবহুল এবং বিপৎসংকুল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা, সেনাবাহিনীতে চলে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান, খালেদ মোশাররফসহ সেনা অফিসার হত্যা, তাহের-ইনু চক্রের ষড়যন্ত্র এবং সিপাহী-জনতার সফল গণ-অভ্যুত্থানের পথ ধরে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।
তারেক আরও বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের মেধা ও বিচক্ষণতায় বাংলাদেশ অরাজকতা ও বিশৃংখলতা থেকে রক্ষা পেয়েছে। তারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, তাহের-ইনু চক্র চেয়েছিল জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে। ৭ নভেম্বর এই চক্রটি জনপ্রিয় সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের কাঁধে ভর করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চেয়েছিল। কিন্তু অসম সাহসী বিচক্ষণ ও দেশপ্রেমিক জিয়াউর রহমান ইনু-তাহের চক্রের পাতা ফাঁদে পা দেননি। নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ব্যর্থ হয়ে এরা এখন মিথ্যাচার ও ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে চায়।’