রায় নিয়ে মন্তব্য : পাকিস্তানের দূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ

pakistanসুরমা টাইমস ডেস্কঃ পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার আহমেদ হুসাইন দায়োকে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচার নিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের জন্য ঢাকায় নিযুক্ত দূতকে ডেকে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. মিজানুর রহমান তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খানের বক্তব্যকে বাংলাদেশ তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ বলেই মনে করছে।
বাংলাদেশে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর এ বিষয়ে নিসার আলীর প্রতিক্রিয়া পাকিস্তান জামায়াতের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।
তাতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে তা দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও পাকিস্তান ১৯৭১ সাল ও পরবর্তী পর্যায়ের ঘটনাবলী নিয়ে চুপ থাকতে পারে না।
“আমি এটা বুঝতে পারছি না, কেন বাংলাদেশ সরকার অতীতের কবর খুঁড়ে অশান্তি বাড়াচ্ছে এবং পুরনো ক্ষতগুলো আবার খুঁচিয়ে আলগা করছে।”
তার ওই বক্তব্যে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা গণজাগরণ মঞ্চ পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতসহ কূটনৈতিকদের বহিষ্কারেরও দাবি জানায়।
এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিসারের বক্তব্যকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগ্রহণযোগ্য’ হিসাবে উল্লেখ করে পাকিস্তানের দূতকে বাংলাদেশের অসন্তোষের কথা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে।
একাত্তরে সশস্ত্র যুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলাদেশের। ওই যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দোসর হয়ে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়েছিল, তাদের বিচার হচ্ছে দীর্ঘ চার দশক পর।
ওই বিচারের রায়ে জামায়াত আমির নিজামীর প্রাণদণ্ড হয়েছে। দলটির শীর্ষপর্যায়ের কয়েকজন নেতারও যুদ্ধাপরাধের জন্য সাজা হয়েছে।
এই বিচার চলার মধ্যেই পাকিস্তানের নেতাদের বক্তব্যের জন্য এ নিয়ে দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হলো।
এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী সে দেশের রাজপথে প্রতিবাদ জানায়।
নিসার আলী খান সে সময় বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের একজন অকুণ্ঠ সমর্থক ছিলেন কাদের মোল্লা। তার মৃত্যুতে প্রতিটি পাকিস্তানি শোকার্ত ও মর্মাহত।’
এরপর ‘ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের’ একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবও পাস হয়।
সে সময়ও পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলব করে তার কাছে বিষয়টি ব্যাখ্যা চেয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার আহমেদ হুসাইনকে তলবের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে জানিয়ে দিয়েছে যে, তার দেশে যারা রায় নিয়ে কথা বলছে, তাদের উচিৎ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানো।
অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব মিজানুর রহমান তাকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের পূর্ণ সমর্থন নিয়েই যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার ঘটনার বিচারহিনীতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছে।
বাংলাদেশে রায় নিয়ে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ এবং উসকানিমূলক বক্তব্যের বিষয়গুলো তুলে ধরে অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে বলেন, এ দেশের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কর্মকাণ্ড থেকে পাকিস্তান বিরত থাকবে বলেই বাংলাদেশ আশা করে।