সুনামগঞ্জে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের টার্গেট প্রবাসী ও ধণাঢ্য পরিবারের তরুণরা
সীমান্তবর্তী এলাকা সহ আরো ৩ উপজেলায় ছড়ানো হয়েছে ইয়াবা ব্যবসার ফাঁদ
হাবিব সরোয়ার আজাদ: সুনামগঞ্জ জেলা শহর এমনকি জেলা শহরের বাহিরে অন্যান্য কোন কোন উপজেলায় ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে গত বেশ কিছু ধরে এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সচেতন মহলে । এরই মধ্যে শহরতলির মাইজবাড়ি এলাকা থেকে ৬০ পিস ইয়াবাসহ ২ ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব -৯ সুনামগঞ্জ ৩ সিপিসি ক্যাম্পের টহল দল। বিভিন্ন সুত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা শহরের ধনাঢ্য, প্রবাসী অধ্যুষিত ও সীমান্ত এলাকার তরুণদের টার্গেট করেই মুলত মদ,গাঁজা হেরোইনের সামাজ্যে নতুন করে নতুন নেশা হিসাবে মরণ নেশা ইয়াবা বিক্রির ফাঁদ পেতেছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। উঠতি বয়সী তরুণরাও নেশার ব্র্যান্ড বদলাতে মদ,গাঁজা, হেরাইনের মত পুরণো নেশার ব্র্যান্ড বদল করে ক্রমশ ঝুঁকে পড়ছে ইয়াবার প্রতি। জেলা সদর ছাড়াও সীমান্তর্তী এলাকা সহ আরো ৩ উপজেলায় ছড়ানো হয়েছে ইয়াবা ব্যবসার ফাঁদ
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি সূত্রে জানা গেছে, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল শহরের বিভিন্ন এলাকার তরুণদের, প্রবাসী অধ্যূষিত ও সীমান্তবর্তী এলাকা টার্গেট করে ইয়াবা বিক্রির জাল বিস্তার করেছে বেশ কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ী। এরা রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও সিলেট থেকে বিশেষ কৌশলে সুনামগঞ্জে ইয়াবা নিয়ে এসে জেলা শহর ও অন্যান্য উপজেলা গুলোতে ইয়াবা সরবরাহ করে আসছে।
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রাম, কক্সবাজারের টেকনাফ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও সিলেটের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুনামগঞ্জের কিছু তরুণ অভিজাত পাড়ার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক ও সখ্যতা গড়ে উঠেছে। হত দরিদ্র বেকার কিছু পুরুষ ও মহিলাকে ক্যারিয়ার হিসাবে বিভিন্ন কৌশলে ব্যবহার করে সুনামগঞ্জ জেলা শহর, জেলার শিল্প নগরী ছাতক, প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর, জেলার বালি পাথর ব্যবসা ও কয়লা আমদানির শুল্ক ষ্টেশন অধ্যুষিত আরেক ধণাঢ্য এলাকা তাহিরপুরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট, মোল্লাপাড়া, বারহাল, মধুয়ারচর এবং সীমান্তবর্তী টেকেরঘাটের বড়ছড়া শুল্ক ষ্টেনশন, বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা ও পুটিয়া এবং চারাগাঁও সীমান্তের চারাগাঁও শুল্ক ষ্টেশন এলাকায় ইয়াবা পৌঁছে যাচ্ছে নিরাপদে। জেলার বাহিরে মরণ নেশা ইয়াবা পরিবহনে ভাড়ায় চালিত বেশ কিছু নিদ্রিষ্ট্র মোটর সাইকেল চালক সহযোগীতা করছে বলেও জানা গেছে। জেলা শহর ও জেলা শহরের বাহিরে যেসব এলাকায় ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে এমন তথ্য একটি বিশেষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছে।
এলাকাবাসীর দেয়া তথ্যের ভিক্তিতে তাহিরপুর থানা পুলিশ ইতিপুর্বে মধুয়ারচর গ্রামের আব্দুল বারিকের পুত্র আলী নূর (৩০) নামের এক হেরোইন ও ইয়াবা বিক্রয়কারীকে গ্রেফতার করেছিলো পরে তার দেহ তল্লাশী করে মদ-গাঁজা পাওয়া গেছে দেখিয়ে মামলা ডায়রী ভুক্ত করে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। শহরতলির মাইজবাড়ি গ্রামের মোটরসাইকেল আরোহী ফজলু মিয়ার পুত্র হুমায়ুন রশীদ (১৮) ও দোয়ারাবাজার উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মমতাজ আলীর পুত্র নুর মোহাম্মদকে (২০) আটক করে র্যাব।
র্যাব-৯ সুনামগঞ্জ ৩ সিপিসি ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দেশের যেসব এলাকা থেকে সুনামগঞ্জে ইয়াবা ঢুকছে তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং ইয়াবা বিক্রয়কারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব সদস্যরা তৎপর রয়েছে।
৮-বর্ডারগার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল গোলাম মহিউদ্দিন খন্দকার বলেন, থাইল্যান্ড, মায়ানমার থেকেই দেশে ইয়াবা ঢুকে থাকে। ভারতের মেঘালয় সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা প্রবেশ করার কথা নয়, তবুও ইয়াবা যেন কোনভাবেই বাংলাদেশে না ঢুকে তার ওপর নজর রাখতে পুরো সীমান্তের জওয়ানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশীদ বলেন, সুনামগঞ্জে ভারতীয় মদ,গাঁজা বিক্রি হয় কিন্তু হেরাইন বা ইয়াবা বিক্রেতা রয়েছে এমন তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। শহরতলির মাইজবাড়ি থেকে রবিবার ইয়াবাসহ দুই ব্যবসায়ী আটক হওয়ার পর জেলার সদর সহ অন্যান্য থানা পুলিশকেও এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।