লতিফের বিক্রি করা ৪৮ প্রতিষ্ঠান ফিরে পাচ্ছে সরকার

Latif Siddikiসুরমা টাইমস ডেস্কঃ সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর আমলে অবৈধভাবে বিক্রি হওয়া ৪৮টি সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকানা ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এবিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতও চাওয়া হয়েছে।
মহাজোট সরকারের আমলে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সুপারিশে ৪৮টি সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি বিনা দরপত্রে বিক্রির প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ বেআইনি বলে প্রতিবেদন দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
গত মঙ্গলবার তার (লতিফ সিদ্দিকী) স্ত্রীর নামে ঢাকায় বরাদ্দ দেয়া চট্টগ্রাম সমিতির জমির বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। অন্যদিকে কুমিল্লার চিশতী টেক্সটাইল মিলস ফিরিয়ে নিতে অফিস আদেশ জারি করবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
এরপর পর্যায়ক্রমে বাতিল করা হবে কুষ্টিয়ার মোহিনী মিলস লিমিটেড ও গাজীপুরের মসলিন কটন মিলস বিক্রি সংক্রান্ত চুক্তিপত্র। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে অবৈধভাবে বিক্রি হওয়া আরও ৪৫ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রাম সমিতির ইজারা বাতিলের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া শুরু হল। তিনটি বড় টেক্সটাইল মিলের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। বিক্রি বাতিল করার বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে তারা। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে এ তিনটি মিলের বিক্রি বাতিল করে অফিস আদেশ জারি করা হবে। অনিয়মের মাধ্যমে যেসব সরকারি সম্পদ ব্যক্তি মালিকানায় বিক্রি করা হয়েছিল তা পর্যায়ক্রমে সরকার ফেরত নেবে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক যুগ্মসচিব ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, লতিফ সিদ্দিকী ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শের তোয়াক্কা না করে একক সিদ্ধান্তে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করেন। কোনো নিয়মনীতি না মানায় লতিফ সিদ্দিকীর রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় নেই। সরকারি এসব সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় কোনো নিয়মকানুন মানা হয়নি।
জানা যায়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি বেসরকারিকরণের ক্ষেত্রে আইন, বিধি ও চুক্তির শর্ত মানা হয়েছিল কিনা তা যাচাই করতে সম্প্রতি একটি কমিটি গঠন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক পবন চৌধুরীকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটি গত ৩১ আগস্ট বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদনে মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ৪৬টি অনিয়ম তুলে ধরে বলা হয়- আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন (২০০৯-১৩) বিশালাকারের তিনটি বস্ত্রকলসহ পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন ৪৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হয়। এগুলো হস্তান্তরে কোনো নিয়মকানুন মানা হয়নি।
গত ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে অনিয়ম করে বিক্রি করা সম্পত্তি ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় চট্টগ্রাম সমিতিকে দেয়া জমির ইজারাসহ বড় তিনটি বস্ত্রকল বিক্রির নথিপত্র মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর মধ্যে প্রথমেই চট্টগ্রাম সমিতির ইজারা বাতিলের মতামত এলে গত মঙ্গলবার ইজারা বাতিল করে অফিস আদেশ জারি করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
ইতিমধ্যে কুমিল্লার চিশতী টেক্সটাইল মিলসহ অন্য দুটি মিলের বিষয়েও বিক্রি বাতিল করতে আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়েছে। আগামী সপ্তাহে এ ধরনের আরও তিনটি নথি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে। তা ফেরত আসার পর বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে পাঠানো হবে।
চট্টগ্রাম সমিতির ইজারা বাতিল করে জারি করা চিঠিতে বলা হয়, মতিঝিলে নিশাত জুট মিলের এই জমির পরিমাণ ১১ কাঠা ১৩ ছটাক। পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে এটি তালিকাভুক্ত করার পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় শর্তসাপেক্ষে তা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কাছে ন্যস্ত করে। তবে শর্ত ছিল বাড়ি বা প্লটটি কখনও বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না। আর উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এরপরও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আইনবহির্ভূতভাবে একক সিদ্ধান্তে জমিটি চট্টগ্রাম সমিতির নামে ইজারা দেয়ার নির্দেশ দেন। চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি ও মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকীসহ চারজনের নামে এ ইজারা দলিল করা হয়।