শ্যালিকার সাথে অনৈতিক সম্পর্কে খুন হলেন ইমাম ও অটোরিকশা চালক!
বালাগঞ্জ প্রতিনিধিঃ শ্যালিকার সাথে অনৈতিক সম্পর্কের বলি হয়েছেন সিলেটের বালাগঞ্জের পূর্ব বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব আব্দুল হামিদ ওরফে কালা হুজুর (৫৫)। তার সাথে থাকায় প্রাণ দিতে হয়েছে উপজেলার কাশিপুর গ্রামের মৃত বাহার উলাহর ছেলে সিএনজি চালক আরশ আলীরও (৩০)। ইমাম হামিদের শ্যালিকা বালাগঞ্জের ইলাশপুরের বড়চর গ্রামের আফিয়া বেগমের (৪০) ছেলেরা শনিবার দিবাগত রাতে এই দু’জনকে হত্যা করে। আফিয়ার স্বামী ফিরোজ আলী বর্তমানে সৌদি প্রবাসী। এ ঘটনার জানাজানি হওয়ার পর বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আফিয়া বেগমের বাড়ি ঘেরাও করে ভাঙচুরের চেষ্টা চালায় হাজার হাজার মানুষ। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
এ ঘটনায় পুলিশ আফিয়া বেগম, তার ছেলে মারজানুল আলম শিমুল (২২), শাকিল আহমদ ( ২০) ও শারমিনকে (১৮) আটক করেছে।
আফিয়া বেগমের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়- ইমাম আব্দুল হামিদ ওরফে কালা হুজুরের সাথে আফিয়ার অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে তিনি আফিয়ার মেয়ে শারমিনের সাথেও অনৈতিক সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেন। এ ব্যাপারে হামিদকে বাধা দেয়া হয়। বাড়িতে না আসতেও নিষেধ করা হয়। কিন্তু তিনি কোনো বাধা-নিষেধ মানেননি। শনিবার দিবাগত রাতে আবারও হামিদ তাদের বাড়িতে এলে আফিয়া বেগমের ক্ষুব্দ ছেলেরা তাকে হত্যা করে।
এসময় সিএনজি অটোরিক্সা চালক আরশ আলীকে ইমামকে রেখে চলে যেতে বলা হয়। কিন্তু তিনি না যাওয়ায় তাকেও হত্যা করা হয়। পরে লাশ দুটি ঘরের বাথরুমের বাথটাবের নীচে গর্ত করে মাটি চাপা দিয়ে উপরে পাকা ঢালাই দেয়া হয়।
এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়- ইমাম আব্দুল হামিদ ওরফে কালা হুজুর সম্পদশালী ব্যক্তি। ধন-সম্পত্তির কারণেও তাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাত ১০টার দিকে বালাগঞ্জ পূর্ব বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ আব্দুল হামিদ ওরফে আব্দুস শুকুর কালা হজুর বালাগঞ্জ বাজার থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে তাজপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
রোববার ভোর ছয় টার দিকে ওসমানীনগরের তাজপুর ইউনিয়নের কাজীরগাঁও এলাকা থেকে পুলিশ পরিত্যক্ত অবস্থায় সিএনজি অটোরিকশাটি উদ্ধার করেছে। পরে উভয় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় পৃথক জিডি দায়ের করা হয়। নিহত ইমামের ছোট ভাই আব্দুল খালিক কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ভাইয়ের মোটা অংকের টাকার আত্মসাত করার জন্য তাকে খুন করা হয়েছে। আমি খুনদের ফাসি চাই। ইমাম ও চালকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় উভয় পরিবারে চলছে শোকের মাতম বালাগঞ্জ পুর্ব বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ আব্দুল হামিদ ওরফে আব্দুস শুকুর কালা হুজুর (৫৫) ও অটোরিক্সা চালক আরশ আলী (২৫) গত ১৮ অক্টোবর রাতে নিখোজ হন। এর পর থেকে নিখোজদের আত্মীয় স্বজনদের দফায়-দফায় জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের বাড়ীতে পুলিশের পক্ষ থেকে গোপন তল্লাশী করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিকরা পুলিশকে তথ্য দেয় যে, হুজুর প্রায়ই রাতের বেলা তিনির শালীর বাড়ীতে যেতেন এবং শালীর বড় ছেলে মারজানুল আলম শিমুল (২২) সার্বক্ষনিক হুজুরের সাথে থাকত। সে হুজুরের আশয়-বিষয়সহ অর্থনৈতিক বিষয়াদি দেখাশুনা করত। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে নিখোঁজ ইমামের শালী আফিয়া বেগমের স¦ামী ফিরোজ মিয়ার বাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইলাশপুর বাজার সংলগ্ন বড়চর গ্রামে গিয়ে সন্দেহজনক ভাবে তল্লাশী করেন বালাগঞ্জ থানার এস আই অরুপ কুমার চৌধুরী। তল্লাশীকালে ইমামের শালী ও শালীর ছেলে-মেয়ের সাথে কথা বলেন। এ সময় তারা অসলগ্ন কথা বার্তা বলেন। তাদের এক জনের কথার সাথে অন্যজনের কথার কোন মিল পাওয়া যায়নী। এতে তাদের প্রতি সন্ধেহ আরও ঘনিভুত হয়। তাদের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে এস আই অরুপ কুমার চৌধুরী ঘরের অবহৃত বাথরুমের মধ্যে সদ্য নির্মিত একটি স্থাপনা দেখতে পান। দারোগা অরুপ বালাগঞ্জ থানার ওসি অকিল উদ্দিন আহমদকে বিষয়টি অবগত করার ওসি একদল পুলিশ সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। লাশের সন্ধান পাওয়ার হাজার হাজার উতসুক জনতা বড়চর গ্রামের ঐ বাড়ীতে ছুটে যান। এসময় স্থানীয় উত্তেজিত জনতা বাড়ীতে ব্যাপক ভাংচুর করতে থাকে। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিশ। উত্তেজিত জনতাকে বার বার নিভৃত করার করার চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নী। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য কয়েক দফায় সিলেট থেকে কয়েক প্লাটুন ফোর্স অনা হয়। লাশের সন্ধানের খবর জানতে জানার পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সিলেটর পুলিশ সুপার (ডিবি) রওশনুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার দক্ষিন সার্কেল গোপাল চক্রবর্তী, বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদাল মিয়া, ভাইস চেয়ার চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী আছগর, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের দায়িত্ব পালনকারী ইউএনও আশরাফুর রহমান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী আনহার মিয়া, ওসমানীনগর থানা আওয়ালীগের সেক্রেটারী আবদাল মিয়া, ওসমানীনগর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর, সমাজ সেবক সাইয়িদ আহমদ বহলুল, সদর ইউপি‘র চেয়ারম্যান এম এ মতিন, হাজী আব্দুল নুর, লুতফুর রহমান, জুনেদ মিয়া সহ এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারন এবং বিভিন্ন গনমাধ্যমের কর্মীরা। সন্ধা ৬টার দিকে লাশ দুটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে কড়া পুলিশ প্রহরায় ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাটানো হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বালাগঞ্জে এই চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনায় জনমনে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বালাগঞ্জের ইতিহাসে সর্বকালের শ্রেষ্ট ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অনেকেই। এদিকে নিখোজদের সন্ধান দাবীতে গতকাল মঙ্গলবার বালাগঞ্জে দিন ব্যাপি বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসুচী পালন করা হয়। এসব কর্মসুচীতে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো বালাগঞ্জ। কর্মসুচীর মধ্যে দোকান-পাঠ বন্ধ রেখে ব্যবসা বিরতি পালন, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সকাল সন্ধা পরিবহন ধর্মঘট ও প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।