প্রসাসনের সম্মতিতে কাটা হচ্ছে ক্রিকেট স্টেডিয়ামের টিলা

১৫ টি ট্রাক দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে মাটি, প্রতিদিন বখরা নেয় পুলিশ

Sylhet Stadiumসুরমা টাইমস ডেস্কঃ রাতের আধারে কেটে ফেলা হচ্ছে লাক্কারতুরাস্থ সিলেট ভিাগীয় স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশের সবচেয়ে উঁচু টিলা। সিলেটে পাহাড় টিলা কাটার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছে না টিলা কর্তনকারীরা। প্রতি রাতে এক্সেভেটর দিয়ে টিলা কেটে ট্রাক দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে মাটি। তবে সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা, পুলিশ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা টিলা কাটার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। যদিও টিলা কর্তনকারীর দাবি, বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তার অনুমতি নিয়েই কাটা হচ্ছে টিলাটি। আর স্টেডিয়ামের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিনই টিলা কাটায় নিযুক্ত ঠিকাদারদের কাছ থেকে বখরা নিয়ে যায় স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশ। সরেজমিনে বাদামবাগিচা এলাকার ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দক্ষিন পাশের ফটকে (মিডিয়া গ্যালারির সামনে) গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি রাতে ২ টি এক্সেভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে টিলা। টিলা কাটায় নিযুক্ত রয়েছেন প্রায় ২০ জন শ্রমিক। নাম্বার প্লেটবিহীন ও নাম্বার প্লেটসহ ১৫ টি ড্রাম ট্রাক দিয়ে রাতেই সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে টিলার মাটি।
প্রতিটি ট্রাকের সামনেই লাল কাপড়ে লেখা রয়েছে- ‘ সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামের মাটি অপসারনের জরুরী কাজে নিয়জিত’।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, টিলা কাটার সাথে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ, আওয়ামীলীগের পদধারী নেতাকর্মী ও প্রশাসন জড়িত। তারা জানান, দিনের বেলা মাটি অপসারনের কাজ বন্ধ থাকে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় বেলাল নগর হাউজিং প্রকল্পের চেয়ারম্যান আবাসন ব্যবসায়ী বিপ্লবী মুজিবুর রহমান এই টিলাটি কর্তন করছেন। টিলা কাটার জন্য তিনি নিযুক্ত করেছেন ৫ জন ঠিকাদার। এই ঠিকাদারদের মাধ্যমে প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে শুরু করে ভোর ৬টা পর্যন্ত টিলা কেটে ট্রাকে করে মাটি অপসারণ করা হয়।
টিলা কাটা ও মাটি অপসারনে নিযুক্ত ঠিকাদাররা হলেন – ছালেক মিয়া, ফকির মিয়া, মান্নান মিয়া, লিয়াকত ও জলিল মিয়া। মাটি সরিয়ে নেওয়ার কাজে ঢাকা মেট্রো-১১-৩২৯২,ঢাকা মেট্রো-ভ-১১-৩৬৪৮, সিলেট-ড-১১-২০৮৪,সিলেট-ড-১১-২০৮৫, ঢাকা মেট্রো-ভ-১১-৩৩৭৮ সহ আরো ১০ টি নাম্বার প্লেটবিহীন ড্রাম ট্রাক ব্যবহৃত হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামের ফটকে কর্মরত এক নিরাপত্তরক্ষী জানান, ২ মাস থেকে প্রতি রাত ১০টা থেকে শুরু করে ভোর ৬টা পর্যন্ত টিলাটি কাটা চলছে। প্রতি রাতে আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ির টহল পুলিশ এখানে এসে ঠিকাদারদের কাছ থেকে টিলা কাটার বখরা নিয়ে যায়। মাটিবাহী ট্রাক চলাচলে রাস্তায় যাতে কোন বাধা সৃষ্টি না হয় সে দিকেও নজর রাখে পুলিশ।
লাক্কাতুরার বাসিন্দা তাহের উদ্দিন জানান, ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভিতরের সবচেয়ে বড় (৩ নম্বর ) টিলাটি রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হচ্ছে। টিলা কাটার বিষয়টি যাতে এলাকাবাসী বুঝতে না পারে সেজন্য স্টেডিয়ামের দেয়ালের ভেতরে এক্সেভেটর ঢুকিয়ে ভেতর দিকে কাটা হচ্ছে।
টিলা কাটায় নিযুক্ত ঠিকাদার ছালেক মিয়া বলেন, সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মাটি অপসারণের কাজে আমাদের ৫ জনকে আবাসন ব্যবসায়ী বিপ্লবি মুজিবুর রহমান নিযুক্ত করেছেন। আমরা তার নির্দেশেই মাটি অপসারন করছি।
ঠিকাদার জলিল মিয়া বলেন, বিপ্লবি মুজিবুর রহমান আমাদের জানিয়েছেন টিলা কেটে মাটি অপসারণের অনুমতি নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিপ্লবী মুজিবুর রহমান বলেন, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলের অনুমোতিতে টিলাটি কাটা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে শফিউল আলমের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
এ বিষয়ে বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও বিসিবি’র পরিচালক শফিউল আলম নাদেলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ট্রেজারার সহিদ চৌধুরী জুয়েল বলেন, দুই মাস ধরে আমি স্টেডিয়ামে যাইনি। ফলে স্টেডিয়ামের ভিতরে কি হচ্ছে তা আমার জানা নেই। টিলা কাটার বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে দাবি করেছেন বিমানবন্দর থানার ওসি শাহ জামানও। তিনি বলেন, যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, সরকার টিলা কাটার অনোমুতি কাউকেই দেয়নি। সিলেটে টিলা কাটার ব্যাপারে উচ্চ আদালতেরও নিষেধাজ্ঞা আছে। সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সৌর্ন্দয্য বিনষ্ট করে কেউ টিলা কেটে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তথ্যসূত্রঃ নিউজ মিরর