এক যুগ ধরে গাছে গাছে রাত কাটান আমেনা!

Amena on the Treeসুরমা টাইমস ডেস্কঃ প্রায় এক যুগ ধরে গাছে রাত কাটিয়ে আসছেন আমেনা বেগম। দিনের যে সময় গাছে উঠেন পরদিন ঠিক সেই সময় গাছ থেকে স্বেচ্ছায় নেমে আসেন তিনি। যদি বিকেল ৪টায় উঠেন তাহলে ভোর ৪টায় নেমে আসেন। গাছ থেকে নামার পরেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে বাড়িতে নিয়ে বিশ্রামে রাখলে আবার সুস্থ হয়ে যান।’
৩৫ বছর বয়সের ওই নারীর বসবাস সাভারের রেডিও কলোনি এলাকাতেই।প্রায় প্রতিটি রাত কোন না কোন গাছেই কাটে তার। কিন্তু আত্মসম্মানের কথা বিবেচনা করে বিষয়টি গোপন রেখে চলেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। জ্বিনের প্রভাবে তিনি গাছে রাত কাটায় বলে ধারণা তাদের।
বৃহস্পতিবার রাতে পৌরসভার রেডিও কলোনি এলাকার অদূরে মিলিটারি ফার্মের বনে ওই নারীর সন্ধান পায় স্থানীয়রা। এ সময় এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এ সংবাদ। স্থানীয়দের পাশাপাশি পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সেনা সদস্যরাও ছুটে যান ঘটনাস্থলে।
অক্ষত অবস্থায় ওই নারীকে উদ্ধারে তত্পরতা চালাতে থাকেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিন্তু ওই নারী নিজেই বিপত্তি ঘটান এই তত্পরতায়। নিজেকে জ্বিন দাবি করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের উল্টো শায়েস্তা করতে থাকেন তিনি।
সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পরিবারের সদস্যরাও। ইচ্ছার বিরুদ্ধে গাছ থেকে তাকে নামানো হলে যেকোন অঘটন ঘটতে পারে– এমন আশংকার কথা ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের জানিয়ে গাছেই তাকে থাকতে দেয়ার অনুরোধ করেন তারা।
আমেনার মেয়ে রুবিনা বেগম বলেন, জ্বিনের কারণেই গাছে রাত কাটানোর অভ্যাস মায়ের। মাঝে মাঝে তার কথার সুর পরিবর্তন হয়। তখন পরিবারের কাউকে তিনি চিনতে পারেন না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে অনেক কবিরাজের শরণাপন্ন হয়েছি আমরা। কিন্তু লাভ হয়নি। জ্বিনের প্রভাবে তিনি এখনও গাছে রাত কাটিয়ে আসছেন।
রুবিনা আরো বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে কথার সুর পরিবর্তন হয়ে যায় মায়ের। তখনি বুঝতে পারি তার উপর জ্বিন ভর করেছে। বিকেল ৩টা নাগাদ ঘর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ব্যাকুল হন তিনি। এক সময় আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে পড়েন। রাতে সংবাদ পাই মিলিটারী ফার্মের বনে একটি উঁচু আম গাছে উঠেছেন মা।
রাত ৮টার দিকে আম গাছে ওই নারীর অদ্ভুত কথোপকথন শুনতে পান এক পথচারী। এসময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে টহলরত পুলিশকে বিষয়টি জানান তিনি। পুলিশ ওই গাছের নিচে গিয়ে বার বার তাকে নেমে আসার আহবান জানালেও তাতে সাড়া দেননি। রাত ৯টায় ঘটনাস্থলে যান সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) দীপক কুমার সাহা। অবস্থা বেগতিক দেখে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন তিনি। মিলিটারি ফার্মের সেনা কর্মকর্তারাও ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তত্পরতা শুরু করে দেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী গাছে উঠে ওই নারীকে নামিয়ে আনার প্রস্তুতি নেন তারা। কিন্তু তারা গাছে ওঠা শুরু করলেই প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে গাছটি ঝাঁকুনি দিতে থাকেন ওই নারী। এ সময় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের খেয়ে ফেলারও হুমকি দেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নিচে নেমে আসতে বাধ্য হন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
এ সময় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ওই মহিলাকে গাছ থেকে নামাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। পরবর্তীতে পরদিন ওই মহিলা তার নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী গাছ থেকে নামলে পরিবারের সদস্যরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যান।