মফস্বলের গন্ডি পেরিয়ে বৃহৎ পরিমন্ডলে নাট্যাভিনেতা তোফা

Chor Kabo-Moyej Paglaএসএমএ হাসনাত: প্রতিশ্রুতিশীল ও প্রতিভাবান নাট্যাভিনেতা নজরুল ইসলাম তোফা। মফস্বল শহরের গন্ডি পেরিয়ে নিজ গুনে স্থান করিয়ে নিয়েছেন জাতীয় পরিমন্ডলে। অভিনয়করছেন শিমুল সরকারসহ নামী-দামী পরিচালকদের নাটকে। ইতোমধ্যে নাম কুড়িয়েছেন সুধিমন্ডলে। বর্তমানে শিমুল সরকারের পরিচালনায় ‘মামার হাতে মোয়া’ এখন একুশে টেলিভিশনে প্রতি মঙ্গলবার ও বুধবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে প্রচার হচ্ছে। আমাকে টাইটেল সংয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। এবারের ঈদ আকর্শন হিসাবে `হারিয়ে তোমায়’ মিউজিক্যাল ফিল্মটি ২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর সকাল ৯.৩০ মিনিটে গাজী টেলিভিশন (Gtv)’র অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয়েছে। ছোটবেলাতে কাঁদামাটি মেখে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ায় মায়ের হাতে মার খেতে হয়েছিল। কিন্তু নাটকের চরিত্রের জন্য পরিচালক তাকেনিজ হাতে কাঁদা মাখিয়ে দেন।

এ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি আনন্দিত এ কারনে যে, অভিনয়ের জায়গা খোঁজে পেয়েছিলাম। তিনি নিজের সম্পর্কে বলেন, প্রায় প্রতি বছরই আমার হাতে পুরস্কার আসতো। একটি ঘটনা আছে, ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতায় সেই ছোট বেলার গায়ে কাদা মেখে মুক্তিযোদ্ধা সেজে মার হাতে মার খেয়েছি। কারণ মা বলছিল ‘এতো কিছু ভাল বিষয় থাকতে গায়ে কাদা মাখিস ক্যান’। কথাটি আজও ভাবায়, আজও গায়ে কাদা মাখি অর্থাৎ মাখিয়ে দেন পরিচালক শিমুল ভাই। ফিরে যাই সেই স্মৃতি মায়ের বকুনীর কাছে গাঁয়ের মানুষের কাছে। তারা আমাকে আজও ভালোবাসে তবে এই ভালোবাসার ভাগীদার পরিচালক শিমুল ভাই। লিখছি আর ভাবছি, জীবনের স্মৃতি অনেক …..আনন্দ অশ্রুও ঝরবে অনেক। তাই বাঁচি যতদিন একটু একটু করে লিখেযাই, আমার কথা আমিই লিখি, নিজের ঢাক ফাটে ফাটুক। একটি কথা বলতে ইচ্ছে করছে আজীব অভিনয়ের মাঝে বাঁচতে চাই। পাগল মন যে কোন চরিত্র চায়, যে কোন চরিত্র খুঁজে। অভিনয় ছাড়া বাঁচি কি করে সচেতন,অবচেতন, অচেতন ভাবে অভিনয়আমার জীবনের মৌলিক জায়গা দখল করে থাকে। গুরুকে খুজি মনেপ্রানে, মন একটু বিনদন খুঁজে দিনে রাতে। বই পড়ি আর একা একা অভিনয় করি। আমার বন্ধু তেমন নেই বললেই চলে,তাই একা চলি। মান্য করেতে চাই গুরুকে। আছে তিনি আমার মনে, থাকবেনও চিরকাল। আমার মনের গহিনে ভাব জগতে অন্ধকারের আলো..অভিনয় গুরু নাট্যকার, সাংবাদিক, গ্রাফিক্স এডিটর এবং পরিচালক যিনি তিনি হচ্ছেন শিমুল সরকার।ছোটবেলা থেকেই চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি অভিনয়কে বেশ গুরুত্ব দিয়ে আসছেন বলেই আজও অভিনয় করছেন। স্কুলজীবনে কিছুটা সময় কবিতা, ছড়া লিখার চর্চা একটু আধটু জন্মেছিল আবার তা আবৃত্তিও করেছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। বর্তমানেমিডিয়া নাটক করেন বলেই একটি নাটক লিখেছেন তবে তা টেলিফিেল্ম রূপায়িত করলেই ভাল হবে বলে মনে করেন। নাটকটির নাম ‘সেই তো ভালোবাসা’। এখন আর ছড়া-কবিতা কাগজে লেখার সময় হয় না কারন অভিনয়কে জীবনের রসে ভাসিয়ে দিতেছেন বলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে পা দিয়েই থিয়েটার চর্চায় মনোনিবেশ করেছিরলেন। বর্তমানে নাট্যচর্চায় বিভিন্ন ভাবে ব্যস্ত থাকছেন। যেমন মিডিয়া নাটক, ডকুমেন্টারী এবং মিউজিক ভিডিওতে কাজ করে যাচ্ছেন।

মিডিয়াতে অর্থাৎ চ্যানেল আই’য়ে তার অভিনিত নাটক ২০০৫ সালে প্রচার হয়েছিল ‘এবং একজন নারী’। তাছাড়া ডাইরেকটর, চোরকাব্য, শাস্তি, সাহস সঞ্চয় ব্যুরো, এরং মামার হাতের মোয়া। প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেতা নজরুল ইসলাম তোফা মঞ্চ নাটক ও পথ নাটক অনেক করেছেন প্রায় সবগুলোর পরিচালনায় ছিলেন আজকের মিডিয়া পরিচালক ও নাট্যকার শিমুল সরকার। উল্লেখ্য যে উৎপল দত্তের ‘রাইফেল’ নাটক এর রহমত চরিত্রটি পরিচালক শিমুল সরকার তাকে দিয়ে করিয়ে ছিলেন। অনেক কষ্টসাধ্য এই চরিত্র তোলে ধরতে পরিচালক শিমুলকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে বলে জানালেন তিনি। তিনি শংঙ্কর বঙ্গ্যোপাধ্যায় এর উপন্যাসকে নাট্যরুপ করেছিলেন সাইমুন জাকারিয়া পরিচালনা করেছিলেন শিমুল সরকার সেখানেও কাজ করছেন। শিমুল সময়োপযোগি ইমপ্রোভাইজেশন প্রডাকশন তৈরী করে তাকে দিয়ে খুব সহজেই করাতেন। যেমন: রোদের আধার, সিগনাল আনলিমিটেড ওয়ান, ও সিগনাল আনলিমিটেড টু ইত্যাদি।পরিচালক শিমুল ভাই নির্দেশনা দিয়েছেন ফুটপাত, পাগলা গারদ, দাও ফিরে সে অরন্য, বাঁশ, হয়তো নয়তো, বোবো, যায় দিন ফাগুনো দিন, মে দিবস, জরিমন, ইতিহাসের পাতা থেকে, একটি অবাস্তব গল্প, মড়া, অতৃপ্ত আত্মা, হোল্লাবোল প্রভৃতি নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন।

তাছাড়া অন্য পরিচালকের কাছে নাটকের কাজ করেছেন। যেমন: কবর, জীবন নদীর তীরে, ফাইনাল বিয়ে, বহমান, ক্ষ্যাপা পাগলের প্যাচাল, চক্রব্যূহ, ফিরে আসবে ইত্যাদি। রাজশাহীতে অবস্থানের কারণে রাজশাহীর স্থানীয় নাট্য কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া পড়ে তার। তাদের সঙ্গেও নাটকের আলাপ আলোচনা হয় এবং দু’একটি ভিডিও এবং মঞ্চ নাটক করেন তিনি। ভন্ড উপ্যাখান, ভাগ্যের পরিহাস, উপেক্ষিত রিক্সাওয়ালা। পরিচালক শিমুল সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম এ্যাবষ্টাকধর্মী নাটক নাট্যদুয়ার সংগঠনে চালু করেছিলেন বলে সেখানে আমি অভিনয় করেছিলাম। সেসব নাটকে পরিচালক শিমুল সরকার পুরো স্ক্রিপটে কি ঘটবে তা মুল এ্যাকশানগুলো নাটকের শুরুতে করিওগ্রাফিতে ফুটিয়ে তুলতেন। আমার জীবনের শ্রেষ্ট করিওগ্রাফি উৎপল দত্তের রাইফেল নাটকে করেছি এবং মজা করে উপভোগ করেছি। নাটক করতে হলে নাটক পড়তে হয় এবং দেখতে হয়। যা তিনি শিখেছেন পরিচালক শিমুলের কাছ থেকে। তাই আজও তার পথ অনুসরণ করে যাচ্ছেন নজরুল
ইসলাম তোফা। বাংলাদেশ-ভারত নাট্য পরিচালক ও লেখকদের অনেক বই সংগ্রহে রেখেছেন, সময় পেলে পাতা উল্টানোর চেষ্টা করেন এবং ইচ্ছা পোষন করেন নাটক সংক্রান্ত বই গুলো বিশেষ কোন মুহুর্ত প্রদর্শনী করার। গ্রামেও যাত্রা, নাটক করেছিরেন। তবে পূর্নাঙ্গভাবে চর্চা বুঝতেন না। সেগুলো চর্চা এখন জীবনকে অনেক আনন্দ দেয়। সেই যাত্রা, নাটকগুলো অবশ্য স্কুল অনুষ্ঠানে করেছিলেন প্রতি বছর। আবির ছড়ানো মোর্শিদাবাদ, অনুসন্ধান, এই পৃথিবী টাকার গোলাম, সাঁখা দিওনা ভেঙ্গে, জেল থেকে বলছি, লোহার জাল, মন্দির থেকে মসজিদ, গরীবের ছেলে, প্রেমের সমাধি তীরে ইত্যাদি নাটক করেছেন স্কুলে। শাহারিয়ার চয়নের সাড়া জাগানো ফ্লাশ মব দিয়ে টি- ২০ বিশ্বকাপ এর বাতিক্রমধর্মী এবং আকর্ষনীয় ভিডিওতে ২০১৪ সালের ২৭ মার্চে তিনি অভিনয় করেছেন। কন্ঠশিল্পী সোহেল এসকে ও রুলিয়া সুলতানার যৌথ মিউজিক্যাল ফিল্ম ‘হারিয়ে তোমায়’ এতে মডেল হয়েছেন ড্রিম মেকিং প্রোডাকশনের ব্যানারে। মিউজিক্যাল ফিল্মটি পরিচালনা করেছেন শাহারিয়ার চয়ন। পরিচালক বসন্ত বাশার এর চারুকলা বিভাগের প্রাচ্যকলা গ্রুপের ‘ওয়াশ পেইন্টিং’ নিয়ে একটি ডকুমেন্টরীতে সাক্ষাতকার দিয়েছেন।