৩৭টি কারাগার নেটওয়ার্কের বাইরে রাখতে চায় প্রশাসন

Sylhet Jailসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ কারাগারে ফ্রিকোয়েন্সি জ্যামার বা তরঙ্গ প্রতিরোধক যন্ত্র দিয়ে আসামিদের মোবাইলফোন ব্যবহার ঠেকানো যাচ্ছে না। টাকা থাকলে কারাগারে সব মেলে- এমন কথা বহুদিন ধরে প্রচলিত। কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা যতই কঠোর হোক কেন নানা কায়দায় আসামিরা মোবাইল ব্যবহার করছে। এটি ঠেকাতে এখন কারাগার এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করতে চায় কর্তৃপক্ষ।
দেশের কারাগারগুলোতে এটি করা গেলে ভেতর থেকে মোবাইলের মাধ্যমে চাঁদাবাজি ও অপরাধী চক্র নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি বন্ধ হবে বলে মনে করছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের সব কারাগার এলাকায় সব মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক বন্ধের বিষয়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) চিঠি দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। ঈদুল আযহার পর মোবাইল অপারেটরগুলো এবং কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
কারা মহাপরির্দশক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, নির্দিষ্ট এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করা মোবাইল অপারেটরদের পক্ষে সম্ভব। তাহলে আমরা কেন মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে কারাগারের ভেতরে জ্যামার বসাবো এবং কেন আসামিদের অপরাধের সুযোগ দেয়া হচ্ছে বলে ব্লেম (অপবাদ) নেবো। এজন্য পুরো কারা প্রশাসন এলাকায় নেটওয়ার্ক বন্ধের বিষয়ে বিটিআরসিকে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছি।
তিনি বলেন, কারা প্রশাসন এলাকার কোথাও মোবাইল ব্যবহার করতে দেয়া উচিত নয়। এতে আশপাশের এলাকায় বাসিন্দাদের মোবাইলফোন ব্যবহারে কোনো অসুবিধা হবে না এবং একেবারে সুনির্দিষ্ট এলাকায় অর্থাৎ কারাগারের সীমানায় নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা সম্ভব বলে দাবি করেন তিনি।
বিটিআরসির পরিচালক (তরঙ্গ) এসএম ওয়াহিদ বলেন, আমরা কারা মহাপরিদর্শকের চিঠি পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গেলে প্রথমে তাদের সঙ্গে বসে কারা এলাকার সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। এরপর মোবাইল অপারেটরগুলোর সঙ্গে বসে কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
সংশ্লিষ্ট তথ্য মতে, সারা দেশে প্রায় ৬৭ হাজার কয়েদি রয়েছে। অনেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি মোবাইনফোনের মাধ্যমে নিয়মিত বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ করছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক বন্ধের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। দেশের ৩৭টি জেলখানাকে মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে রাখতে চায় কারা কর্তৃপক্ষ।
কারাগার থেকে মোবাইলের মাধ্যমে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি ও অপরাধী চক্র নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি অনেক পুরনো। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এখন অনেক কয়েদি স্মার্টফোন দিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিও কল করে দেশ-বিদেশে যোগাযোগ করতে পারছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এমন এক বন্দি বলেন, এক কারারক্ষীকে ঘুষ দিয়ে তিনি কারাগারের ভেতরে স্মর্টফোন ঢোকাতে পেরেছেন। তবে বিভিন্ন সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গেলে তাকে ঝামেলায় পড়তে হতো। নানা কায়দায় গোপনে তিনি মোবাইলে ফেসবুক ব্যবহার করতেন।
ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা এরই মধ্যে জঙ্গি ও সাধারণ কয়েদিদের কারা অভ্যন্তরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছেন।
গত জুলাইয়ে ৩৭টি কারাগারের ৩৬৬ জন কর্মচারীর বদলি হয়। তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই কয়েদি ও জঙ্গি নেতাদের তথ্য আদান-প্রদান, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং মোবাইলফোন ব্যবহারে সহযোগিতা করার অভিযোগ ছিল।
কারা অভ্যন্তরে থেকে কেউ যাতে মোবাইল ফোনে কথা বলতে না পারে সে জন্য প্রতিটি কারাগারে জ্যামার মেশিন বসানো হয়। জ্যামার মেশিন চালু থাকলে নির্ধারিত সীমানার মধ্যে মোবাইলফোনের ফ্রিকোয়েন্সি বা নেটওয়ার্ক কাজ করে না। এ সময় ওই সীমানার মধ্যে কেউ মোবাইলফোনে কথা বলতে পারে না।
গত ডিসেম্বরে কারা মহাপরিদর্শক হিসেবে যোগ দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন। তিনি কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিভিন্ন দুর্বল দিক খুঁজে বের করেন। তার এ প্রচেষ্টার ফলাফল হিসেবে মোবাইলফোনে কথা বলার ভয়াবহ তথ্য-প্রমাণ বেরিয়ে আসে। কাশিমপুর কারাগারে কুখ্যাত বন্দির সেল থেকে মোবাইফোন উদ্ধার হওয়ার পর পুরো কারা প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। ফাঁস হয়ে যায় জ্যামার মেশিনের কারচুপির গোপন বিষয়।
ওই ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট বন্দি তার সেলের মধ্যে থাকা অব্যবহৃত বাথরুমের খোলা পাইপে সুতার মধ্যে বেঁধে সব সময় মোবাইল ফোন ঝুলিয়ে রাখতেন। যখন বিদ্যুৎ চলে যেত তখন তিনি দিব্বি মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। এভাবে দেশের বিভিন্ন কারাগারের মধ্যে প্রভাবশালী বন্দিরা প্রতিদিনই মোবাইল ফোনে কথা বলে থাকেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত প্রথম সারির বন্দিদের নিজস্ব মোবাইল ফোন রয়েছে। এছাড়া অন্যদের টাকার বিনিময়ে একশ্রেণীর কারারক্ষী মোবাইল ফোন সরবরাহ করে থাকে।
কারাগারে বিদ্যুৎ চলে গেলে মোবাইল ফোন সচল হয়। কারণ বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর চালু হয় ঠিকই। কিন্তু জেনারেটরের পাওয়ারে জ্যামার মেশিন কাজ করে না। অনেকটা সুপরিকল্পিতভাবে এ ধরনের দুর্বল ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। কারাগারের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে গোপনে চলছে এসব।