একুশে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ড. মনসুর খান আর নেই

ড. মনসুর খান। ছবি- এনা।
ড. মনসুর খান। ছবি- এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা: প্রবাসের সর্বজন শ্রদ্ধেয় একুশে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ এবং খান’স টিউটোরিয়ালের প্রতিষ্ঠাতা ড. মনসুর খান আর নেই। তিনি গত ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টা ৩৪ মিনিটে ( নিউইয়র্ক সময়) চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে…… রাজেউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬১ বছর। তিনি স্ত্রী নাঈমা খান, একমাত্র সন্তান ইভান খান, আত্মীয়- স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মরহুম ড. মনসুর খানের স্ত্রী নাঈমা খান এনাকে জানান, গত ১৫ দিন আগে ড. মনসুর খান নিম্যুনিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে লংআইল্যান্ডের নর্থশোর ম্যানহাসেট ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ভর্তি হয়। তিনি আরো জানান, নিম্যুনিয়া কন্ট্রোল হলেও ক্যান্সারের কারণে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় ৩০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার। তার অবস্থার চরম অবনতি হলে তিনি গত ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টা ৩৪ মিটিরে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। কম্যুনিটির প্রিয় মুখ ড. মনসুর খানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো কম্যুনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মৃত্যুর খবর শুনে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে মোমনসহ কম্যুনিটির সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ তার লংআইল্যান্ডের বাসায় ছুটে যান।
এদিকে ড. মনসুর খানের দুটো নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় গত ১ সেপ্টেম্বর। প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশীদের সর্ব বৃহৎ মসজিদ জ্যামাইকা বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টারে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে এবং জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশনের উদ্যোগে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় তারই গড়া প্রতিষ্ঠান খান’স টিউটোরিয়ালের সামনে বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসে। তার দুটো জানাজাতেই শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তাকে শেষবারের মত দেখার জন্য কম্যুনিটির সর্বস্তরের জনগণ ছুটে আসেন। নামাজে জানাজার পূর্বে বক্তব্য রাখেন তারই সন্তান ড. ইভান খান। তিনি তার বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। আরো বক্তব্য রাখেন জেবিবিএ’র কর্মকর্তা হারুণ ভুইয়া। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ঠিকানার সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি সাবেক এমপি এম এম শাহীন, ঠিকানা প্রেসিডেন্ট সাঈদ- উর রব, জেবিবিএ’র সভাপতি মহসীন আলী, সাধারণ সম্পাদক আবুল ফজল দিদারুল ইসলাম, ড. রফিক আহমেদ, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসানসহ জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশীরা। নামাজে জানাজা শেষ মরহুমের লাশ ২ সেপ্টেম্বর সকালে লংআইল্যান্ডের ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল মুসলিম গোরস্তানে দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে ড. মনসুল খান মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। দুইবার তার বনমেরু ট্রান্সফøান্ট করা হয়। তৃতীয় বার ট্রান্সফাট করা সম্ভব না হলেও কিমো থ্যারাপির মাধ্যমে তিনি মোটামুটি ভালই ছিলেন, ১২ বছর মরণব্যাধি ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে বেঁচে ছিলেন এবং জ্ঞানের আলো বিতরণ করছিলেন কিন্তু ১ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুকোলে ঢলে পড়েন।
উল্লেখ্য, ড. মনসুর খানের জন্ম চট্টগ্রামে হলেও বড় হয়েছিলেন ঢাকাতেই। তার বাবা খানে আলম খান ঢাকার ডিভিশনাল কশিনার ছিলেন। তিনি ১৯৮৫ সালে স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে আমেরিকায় এসেছেলিন। লেখাপড়া শেষ করে নিউইয়র্ক সিটিতে দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষকতা করে কম্যুনিটির কল্যাণে ১৯৯৪ সালে খান’স টিউটোরিয়ালের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ২০১২ সালে একুশে পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে শোকাহত পুরো বাংলাদেশী কম্যুনিটি।