সিলেটীরা বাঙালি সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন : কবি আসাদ চৌধুরী
কবি তাবেদার রসুল বকুলের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন
বিশ্বনাথ প্রতিনিধিঃ দেশ বরেণ্য কবি আসাদ চৌধুরী বলেছেন, সিলেটীরা যেখানে গেছেন সেখানেই বাঙালি সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তারা শুধু সিলেটের, আসামের কিংবা বরাকের সংস্কৃতির মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেননি।প্রেম দ্রোহ আর কল্যাণের কবি তাবেদার রসুল বকুলের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সুলেমান হলে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসাদ চৌধুরী আরও বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর এখনও যদি কেউ না খেয়ে থাকে, যদি কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা যায়, তাহলে আমি এটাকে পূর্ণ স্বাধীনতা বলতে পারিনা।
পৃথিবী থেকে লজ্জা কমে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা সময় ছিল যখন মানুষের মধ্যে দয়া-মায়া ছিল। কিন্তু এখন তার সম্পূর্ণ বিপরীত। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে অস্ত্র। তারপরেই রয়েছে মাদক। দেশে সুষ্ঠু রাজনীতির অভাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে কেউ রাজনীতি করছে মতায় যেতে আর কেউ মতায় থাকতে। কিন্তু মানুষের জন্য কেউ রাজনীতি করছে না।
প্রবাসে থেকে তাবেদার রসুল বকুলের এই সাহিত্য কর্মকে অনুসরণীয় মন্তব্য করে আসাদ চৌধুরী বলেন, আমরা তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। প্রবাসে বসে দেশের শিার্থীদের নিয়ে বকুলের কাজের প্রশংসাও করেন কবি আসাদ চৌধুরী।
কবি তাবেদার রসুল বকুল’র পঞ্চাশ বছর পূর্তি উদযাপনকে কেন্দ্র করে সিলেটের কবি-সাহিত্যিকদের মিলন মেলায় পরিণত হয় শহীদ সুলেমান হল। নগরীর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও কবিরা শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে আসেন। কেউ ফুল নিয়ে আর কেউ উপহার নিয়ে বসে থাকেন সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত।
উদযাপন পর্ষদের সভাপতি বিশিষ্ট গল্পকার সেলিম আউয়ালের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কবি আবদুল মুকিত অপির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কবি রাগিব হোসেন চৌধুরী, উদ্ভিদ বিজ্ঞানী প্রফেসর আজিজুর রহমান লস্কর, সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আজিজুল মালিক চৌধুরী, বিশিষ্ট কবি মুকুল চৌধুরী, এমফিল গবেষক মামুন সিদ্দিকী, গবেষক হারুণ আকবর, দৈনিক জালালাবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আজিজুল হক মানিক। অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন সংবর্ধিত অতিথি কবি তাবেদার রসুল বকুল।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কলামিস্ট বেলাল আহমদ চৌধুরী, মদন মোহন কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল মো. রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক শান্তনু কুমার রায়, উপপরিচালক জাবেদ আহমদ, কবি মুহিত চৌধুরী, কবি বাছিত ইবনে হাবীব, কবি কামাল তৈয়ব, লেখক জাহেদুর রহমান চৌধুরী, কবি তাজুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল বাতিন ফয়ছল, মাসুম চৌধুরী, গৌছ সুলতান, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী এহিয়া, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সংগঠক জুলকার নাইন, আহমদ মাহমুদ ফেরদৌস প্রমুখ।
কবি তাবেদার রসুল বকুলকে নিবেদীত কবিতা পাঠ করেন কবি জান্নাতুল শুভ্রা মণি, লুৎফুর রহমান তোফায়েল, শামীমা কালাম, উম্মে তাসলিমা নিলা, মিনহাজ ফয়সল, খসরুর রশিদ, নাইমা চৌধুরী, মাসুদা সিদ্দিকা রুহি, সঈদ শাহী, কানিজ আমেনা কুদ্দুস, জুনায়েদ আহমদ তালুকদার, জালাল আহমদ জয় প্রমুখ।
কবি তাবেদার রসুল বকুলের জীবনী পাঠ করেন, কবি ও গল্পকার তাসলিমা খানম বীথি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কবি রাগিব হোসেন চৌধুরী বলেন, তাবেদার রসুল বকুল শুধু একজন কবি নন। তিনি একজন গবেষকও। বর্তমানে সবকিছুই ঢাকা কেন্দ্রীক হয়ে যাওয়ায় মফস্বলের খবর কেউ রাখে না। রাজধানীর বাইরেও যে অনেক ভাল কাজ হয় তাবেদার রসুল তার স্পষ্ট উদাহরণ।
অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কবি তাবেদার রসুল বকুল বলেন, প্রত্যেকটি মানুষের সফলতার পেছনে আরেকটি মানুষের প্রেরণা থাকে। আমার বেলায়ও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। এজন্য তিনি তার স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মনের তাগিদে লিখেন জানিয়ে বকুল বলেন, সাহিত্য মনকে সুন্দর রাখে। এজন্য প্রত্যেকেরই একটু একটু করে সাহিত্য চর্চা করা প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে গল্পকাল সেলিম আউয়াল বলেন, সেই প্রবাসে বসে শত ব্যস্ততার মাঝে তাবেদার রসুল বকুল সাহিত্য-সংস্কৃতিকে বাদ দেননি। তিনিই ইংল্যান্ডে বাঙালিদের প্রথম কবিতা উৎসব করেছিলেন। এজন্য তার মতো মানুষদের সম্মান জানানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন কবিকে ফুলদিয়ে শুভেচ্ছা জানায়।