মাই নেম ইজ খান অ্যান্ড আই অ্যাম অ্যা হিন্দু
সুরমা টাইমসঃ সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের প্রত্যেক এলাকাতেই হিন্দু-মুসলিম বিয়ে নিয়ে বেশ শোরগোল হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদীদের অভিযোগ মুসলিমরা কৌশলে হিন্দু মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করছে। এর একটি আলঙ্কারিক নামও দিয়েছে তারা- ‘লাভ জিহাদ’।
বিষয়টি নিয়ে দেশটিতে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। বিজেপি সরকারের কয়েক জন মন্ত্রীও বিষয়টিতে বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় এসেছেন। শুক্রবার বিতর্ক এড়াতে বিজেপি নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, তিনি বিষয়টি বোঝেন না।
তবে এই চিত্রটির ব্যতিক্রম দৃশ্য লক্ষ্য করা যায় আগ্রার খেরা সাধন এলাকায়। আগ্রা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের গ্রামটিতে হিন্দু-মুসলিম বিয়ে নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। সেখানে গেলে এমন অনেকের সঙ্গে দেখা মিলবে যার নামের সঙ্গে মুসলিম উপাধি খান রয়েছে অথচ আদতে তার ধর্ম হিন্দু। আবার অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাবে যার নামের সঙ্গে রয়েছে হিন্দু উপাধি অথচ তার দাবি সে একজন মুসলিম।
এর মূলটা প্রথিত রয়েছে মোঘল বাদশা আওরঙ্গজেবের শাসনকালের সঙ্গে। প্রচলিত গল্প অনুযায়ী, মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব আদেশ জারি করেন; হয় হিন্দুদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে না হয় তার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে। এর ফলে ভয়ে ভয়ে সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। তার অংশ হিসেবেই নামেরও মোসলমানিকরণ হয়। তবে ভেতরে ভেতরে তারা বয়ে চলতে থাকে পূর্ব পুরুষদের ধর্মকেই।
এ সম্পর্কে মুন্না লাল খান বলেন, প্রচলিত গল্প অনুযায়ী সম্রাট আওরঙ্গজেব আমাদের পূর্ব পুরুষদের মুসলিম হওয়া অথবা ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এক্ষেত্রে তারা প্রথমটি গ্রহণ করে। তবে ইসলাম ধর্মের তিনটি বিষয়ই শুধু তারা গ্রহণ করে। ছেলে শিশুদের মোসলমানি করা, হালাল মাংস খাওয়া এবং মৃতদের কবর দেয়া। এছাড়া বাকি সব আচারই হিন্দুদের মতই তারা পালন করত বলে জানান তিনি। সময়ের সঙ্গে সেই পরম্পপরা এখনো বদলায়নি।
ওই এলাকায় প্রত্যেকটি পরিবারেই দুই ধর্মের লোক রয়েছে। দেখা যাবে বড় দুই ভাই হিন্দু তো ছোট দুভাই মোসলমান। বিয়ে শাদীর ক্ষেত্রেও ধর্মকে কোনো গুরুত্ব দেয়া হয় না। বিক্রম সিং নামে এক হিন্দু বলেন, ‘আমার মা ছিল একজন মুসলিম আর আমার বাবা হিন্দু। আমার বোন আমার বাবার ধর্মকেই অনুসরণ করত তবে সে বিয়ে করেছে একজন মুসলিমকে।’
এক কথায় উত্তর: ভারতের ওই গ্রামটির চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে ধর্মকেন্দ্রিক কোনো বিবাদ নেই। সবাই ধর্মকে পাশ কাটিয়েই নিজের জীবন চালাচ্ছে। এছাড়া ধর্মকে কেন্দ্র করে করে যে মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ ও হানাহানির ঘটনা ঘটতে পারে সেটাও তাদের ধারণার বাইরে। একই কারণে, সাম্প্রতিক সময়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের কারণে আলোচিত লাভ জেহাদও তাদের কাছে সম্পূর্ণ অচেনা এবং অর্থহীন।