মোহে পড়ে সম্মানহানী, নীতি বিসর্জন… : তাওসিফ ফারহান

– টুনটুনি

– জান… কেমন আছো?
– তোমার জন্য একটা গুড নিউজ আছে, আজ আব্বু-আম্মু বাসায় নেই, তুমি জলদি চলে আসো না জান!
– এখুনি আসছি! অপেক্ষা করো।

এরপরের অংশটুকু না বললেও চলবে।

প্রেম। ঘৃণ্য প্রেমের অল্প একটু নমুনা। আজকাল আমাদের বয়সী, কিংবা তার চেয়ে একটু বড়দের হালচাল। নোংরামি, নিজের নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন, তারপর যে বাবা সারাজীবন খেটেখুটে একটা সম্মানজনক অবস্থানে গেলেন, তার সব সম্মান একেবারে ধুয়ে দেয়া- আজকালকার মেয়েদের ও ছেলেদের এমনই ঘটছে। বারবার, একেরপর এক!

Tawsifবরাবরই, মানসম্মানের হানি ঘটে মেয়ের বাবার। ঘটনাচক্রে সবক্ষেত্রেই ছেলেটা হয় বখাটে কিংবা রাস্তার লোফার শ্রেণির, যার লেখাপড়া, মেধা, কিংবা যোগ্যতা বলতে কিছু থাকে না। থাকে আজেবাজে সাঙ্গপাঙ্গ, বড়জোড় বাইক, সানগ্লাস, আর মেয়েদের পেছনে ঘোরার ‘যোগ্যতা’। ফেসবুকে ফটোশপে ঘষামাজা করা নানান স্টাইল দেখিয়ে তারা মেয়েদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে।
যে মেয়ে ছোট থেকে ঘরের চারদেয়ালে থেকে মা-বাবার কোলে বসে খাচ্ছে আর ঘুমোচ্ছে, তার কি দোষ? সে প্রেম-ভালবাসার কি বোঝে?
সুতরাং তার ‘প্রেমিক’ হয় ঐ রাস্তার মোড়ে বসে থাকা বখাটেটা। তারপর নীতি, ধর্ম, মর্যাদা, সম্মান, ইজ্জত, সবকিছুকে বিসর্জন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সজ্ঞানে বুঝে উঠতে দেরী কিরে মেয়েরা, এরমধ্যেই যা দূর্ঘটনা ঘটার তা ঘটে যায়। অল্লক’জন সঠিক রাস্তায় ফিরতে পারে,
কিন্তু কেউ পালিয়ে যায়, কেউবা মা-বাবাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণা দেয়। কারণটা কহুব স্বাভাবিক, ঐ বখা ছেলের কোন ভবিষ্যত থাকে না, সম্পর্কেরও কোন সুন্দর ও সামাজিক ভবিষ্যত থাকে না।

প্রেম করুক, ভাল কথা। ছেলে ভাল হলে তো সমস্যা দেখি না। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বলে তো একটা বিষয় আছে! ছেলের পরিবার ভাল, পরিচয় ভাল, অবস্থান ভাল- এমন হলে কি কোন সমস্যা ছিল?

অবশ্য আরেকটা সমস্যা আছে, মেয়েরা আবার স্টাইলিশ ‘ড্রিমবয়’ খোঁজে! এগুলো কিন্তু হিন্দি সিনেমার প্রভাব!
ভাল ছেলেরা কতটা স্টাইলিশ হয় জানি না। বেশি হয় না।

অবৈধ প্রেমের কারনে জীবনটাই নষ্ট হয়ে যায়। প্রেমের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে অনেক ছেলে মেয়ে আত্মহত্যাও করে। একটু চিন্তা করে বল তো! যে প্রেম- বন্ধু বান্ধবদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে, যে প্রেম মহা মূল্যবান জীবন ধবংস করে, যে প্রেম আত্মহত্যা করতে উদ্ধুদ্ধ করে- সে প্রেম কি কোন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ করতে পারে? না পারে না কখনোই না। চোখের সামনে এসব লোমহর্ষক ঘটনা দেখেও, পত্র পত্রিকা ও বই পুস্তকে এত শিক্ষনীয় ঘটনা পড়েও, এত ওয়াজ-নসিয়ত ও উপদেশের পরেও যে সব ছেলে-মেয়ে প্রেম করে তাদের ব্যাপারে এককথা বলা যায়, তাদের জ্ঞানের কমতি আছে, বুদ্ধির অভাব আছে। অথবা বলা যায়, তাদের চেতনা শক্তি ও বুদ্ধি বিবেক লোপ পেয়েছে।

কেন এসব অসামাজিকতা? জীবনের একটা সঠিক অর্থ বুঝতে পারে না কেন সবাই? কিসের এত মোহ?
ফেসবুক, মোবাইল, কম্পিউটার – এসব আমাদেরকে অনেককিছু দিয়েছে হয়তো, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে বেশিরভাগ মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ। আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে অসামাজিক হয়ে গেছি, নোংরা হয়ে গেছি।

নিজের মনেও একটা দুঃখের স্মৃতি আছে, তাই কখনো কিছুকিছু দৃশ্য ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’র মত লাগে, তাই এসব লিখে ফেলি। আর কি করার সামর্থ্য আছে? তবু যদি কারো মানসিকতা বদলায়… । আর গভীরে গিয়ে কিছু বলার মত রুচি নেই। ঘেন্না হচ্ছে। প্রথমাংশের লাইনগুলো একটা বাংলাদেশী নাটক থেকে নেয়া। কিন্তু দুঃখজনক হল, নাটক-সিনেমার চেয়ে বাস্তবে এমন নোংরা কীর্তিকলাপ আরো বেশি ঘটছে।

আল্লাহ, আমাদের হেফাযত করুন। সবাইকে সঠিক বোধবুদ্ধি দিন। ভালপথে চলার অ ভালিভাবে থাকার তৌফিক দিন। এছাড়া আর কিছু বলার নেই। নীতিবর্জন করার এই সমাজে ভাল হয়ে থাকতে চান যেসব মানুষ, তারাও বড্ড অসহায়।

সৈয়দ তাওসিফ মোনাওয়ার ফারহান
সম্পাদক, সুনামগঞ্জ মিরর ( www.sunamganjmirror.com )
শিশু-সংগঠক