বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটে আকস্মিক বন্যা
পাথর শ্রমিকরা বেকার : আমন ফসলের ক্ষতি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ তিন দিনের টানা অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সিলেট-সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অকস্মাত বন্যা দেখা দিয়েছে। আকস্মিক বন্যায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও সুনামগঞ্জের কয়েকটি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কারনে দেশের বৃহৎ পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জ, উৎমা ও শারপিন টিলায় পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। ফলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। প্রবল প্রবল বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমার পানি বিপদ সীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক স্থানে আমন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।
কোম্পানীগঞ্জ
উপজেলায় বন্যার পানিতে ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০-৪০টি গ্রামের প্রায় ৫০ সহস্রাধিক মানুষ পানি বন্দি রয়েছে। ধলাই ও সোনাই নদীর উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক পাথর শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। সোনাই নদীর পূর্ব তীরে ভাঙ্গনের সৃষ্টির ফলে ছনবাড়ি গ্রামটি ৩-৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ছনবাড়ি গ্রামের সহস্রাধিক লোক মারাত্মক দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করায় গরু ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা।
ছনবাড়ি গ্রামের আলাউদ্দিন, আব্বাস উদ্দিন ও আনোয়ার হোসেন জানান, পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সোনাই নদীর পূর্ব তীরে বিশাল ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়ে তাদের গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ মাচাং বেঁধে বসবাস করছে। এদিকে গত বৃহস্থপতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে ধলাই নদীতে একটি পাথরবাহী নৌকা বন্যার স্রোতে তলিয়ে যায়। নৌকার ৫ জন শ্রমিক সাঁতরে নদীর তীরে উঠতে সম হলেও নৌকাটির কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি
আমাদের প্রতিনিধি জানান, গোায়াইনঘাটে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে উপজেলার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকের বসত ঘরে পানি উঠায় গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পিয়াইন ও সারী নদী দিয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের কারনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাত থেকে উপজেলার নিম্নাঞ্চল গুলোতে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত— উপজেলার পুর্ব জাফলং, আলীরগাঁও, রুস্তমপুর, ডৌবাড়ী, লেঙ্গুড়া, তোয়াকুল ও নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের রাস্তাঘাট ও বাড়ি ঘর পানিতে প্লাবিত হয়। এতে করে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। যার ফলে উপজেলা সদরের সাথে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অপরদিকে পাহাড়ী ঢলের তোড়ে উপজেলার নয়াগাঙ্গের পাড় ও বাউরবাগ হাওড় গ্রামের নদীর তীরবর্তী বসত বাড়ি ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে। এদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিছনাকান্দি ও জাফলং এ দু‘টি পাথর কোয়ারীর সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা সময় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের তি হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম জানান, পানি বৃদ্ধির খবর পেয়ে সাথে সাথে ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি জরুরী সভা করা হয়েছে। সভায় উপজেলার প্রত্যকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিক ভাবে মোকাবেলা করে দ্রুত রিপোর্ট প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, প্রবল প্রবল বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমার পানি বিপদ সীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১২৫ মিলিমিটার গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার হাওর-বাওড় ও নদ নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হচেছ নিম্নাঞ্চল। তিগ্রস্থ হচেছ ঘরবাড়ি,পানি বন্দী হয়ে পড়েছে জেলার তাহিরপুর ও দোয়ারা উপজেরার অর্ধ শতাধিক গ্রাম। জেলার তাহিরপুর উপজেলার গোলাবাড়ি, জয়পুর, লামাগাও, ছিলাইন তাহিরপুর, মাটিয়ান, বড়দল, রতনশ্রী, নবাবপুর, ভোরাঘাটমহ প্রায় ৩০ টি গ্রাম।
দোয়ারা উপজেলার রাার ডামের পাশে বেরিবাঁধ ভেঙ্গে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ২০ টি গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ২ দিনের বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার সবকটি ছোটবড় নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। হাওর গুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মানুষের র্দূভোগ বেড়েছে। কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের উপ-পরিচালক আবুল হাসেম জানান, জেলার তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ৩৫০০ একর আমন ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
বিশ্বম্ভরপুর
আমাদের প্রতিনিধি জানান, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যায় কবলিত। ১৪ আগষ্ট রাত থেকে উজান থেকে নেমে আসা পানি বাড়তে থাকলে নিম্নাঞ্চল সমূহে বন্যা দেখা দেয় উপজেলার বাদাঘাট (দঃ) ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রাম পার্শ্ববর্তী একটি পাকা ব্রীজ ধেবে যায় এছাড়াও পাহাড়ী ঢলে দুই দিক ভেঙ্গে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাদাঘাট (দঃ) ইউ/পি চেয়ারম্যান এড মোঃ ছবাব মিয়া, উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আবদুল হাই ব্রীজটি পরিদর্শন করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. সুলেমান তালুকদার জানান, বড় আকারের বন্যা না হলেও ফতেপুর ইউনিয়নের ও বাদাঘাট (দঃ) ইউনিয়নে পাহাড়ী ঢলে বেশ কিছু তিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ী ঢলের বন্যায় পলাশ, ধনপুর ও সলুকাবাদ ইউনিয়নের আংশিক তিগ্রস্ত হয়েছে।