সুনামগঞ্জে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের মামলার বাদী ও ভিকটিমকে আসামী করার পায়তাঁরা

১১ বছরের নাবালিকা শিশু কন্যাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মিথ্যা স্বাক্ষ্য আদায়ের অপচেষ্টা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের মামলার বাদী ও ভিকটিমকে আসামী করার পায়তাঁরা চলছে। এ নিয়ে বাদী পক্ষের অভিযোগের তীর এখন মামলার সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ভিকটিমের ১১ বছরের নাবালিকা শিশু কন্যাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মিথ্যা স্বাক্ষ্য আদায়ের অপচেষ্টা সহ সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনলেন বাদী।
সংশ্লিস্ট সুত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর ভোর রাতে সুনামগঞ্জ শহরের বলাকা আবাসিক এলাকার আব্দুল লতিফের পুত্র মোঃ এমদাদুল হকের বাসায় স্থানীয় একদল সস্ত্রাসী ঘরের দরজা ভেঙ্গে বসত ঘরে প্রবেশ করে এমদাদকে দা দিয়ে কুপাতে থাকে। স্ত্রী আয়েশা খানম ডলি স্বামীকে বাচাঁতে এগিয়ে আসলে সস্ত্রাসীরা তাকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ সময় ভিকটিমের নাবালিকা মেয়ে হাবিবা হক শোভা ,নুসরাত জাহান বৈশাখী ও জান্নাতুল ফেরদৌসী আশা পাশে থেকে ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করে। আংশকাজনক অবস্থায় এমদাদ ও তার ৮ মাসের অন্ত:সত্বা স্ত্রী ডলিকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় এমদাদুল হকের বড়ভাই আব্দুল অদুদ বাদী হয়ে প্রথম দিকে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর রাতে একটি মামলা দায়ের করেন। পরর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ অক্টোবর গর্ভের সন্তান ও ১৭ অক্টোবর ডলি মৃত্যু বরণ করলে সম্পুরক এজাহারের মাধ্যমে আরো ২ জনকে অভিযুক্ত করে পৌর শহরের হোসেন আহমদ রাসেল,আব্দুস সালাম,রেজাউল,সুনু মিয়া, মাহাতাব উদ্দিন জগলু সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে জোড়া খুনের মামলা দায়ের করা হয়। যা সুনামগঞ্জ মডেল থানার মামলা নং-৫.তারিখ ০৬/১০/২০১৩ ইং। ধারা ১৪৩ /৪৪৭/ ৪৪৮ /৩২৩/ ৩২৪/ ৩২৬/ ৩০৭/ ১১৪/ ৩৪/ ৩০২/ ৩১৩ দন্ডবিধি।
মামলার বাদী আব্দুল অদুদ অভিযোগ করে বললেন, মামলার অভিযুক্ত আসামীরা তাদের কুট কৌশল অবল¤œন করে আমার সাক্ষর জালিয়াতি করে আদালতের মাধ্যমে মামলাটিকে তদন্তের জন্য সিআইডিতে স্থানান্তর করায়। আমি আদালতে পুন:রায় আবেদন জানিয়েছি মামলাটির তদন্তরভার থানা পুলিশে ন্যাস্ত করার জন্য। মামলাটি তদন্তের জন্য থানা পুলিশে ন্যাস্ত করার জন্য স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়েও বাদী পৃথক ভাবে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। চলতি বছরের ২৮ জুন চট্রগ্রামের সিআইডি এক্সপার্ট বাদীর স্বাক্ষরের এক্সপার্ট রির্পোট কনস্টেবল সুজনের মাধ্যমে গ্রহন করলে ও অদ্যবধি পর্য্যন্ত তা আদালতে দাখিল করা হয়নি। আব্দুল অদুদ আরো জানান, মামলাটি সিআইডি সিলেট জোনের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার তদন্তের দায়িত্বভার পাবার পর পরই প্রভাবশালী মহলের ইশারায় আসামী পক্ষের সঙ্গে যোগসাজস তৈরী করে এখন জোড়া খুনের মামলায় আমাকে ও আমার ভাই ভিকটিমকে এমদাদুলকে উল্টো আসামী করার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, এ মামলা সিআইডিতে স্থানান্তরের জন্য আমি কোন আবেদন করিনি, বিষয়টি আমি স্বরাষ্ট মস্ত্রনালয় ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমস্ত্রীকে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে অবহিত করেছি।
ভিকটিম এমদাদুল হক জানান, আমার বাসার ভাড়াটিয়া জাহাঙ্গীর আলম রনিকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে গত ১৫ জুলাই সিলেট সিআইডি অফিসে নিয়ে মারধর করে মিথ্যা স্বাক্ষী আদায় করা হয়। একই কায়দায় গত ২১ জুলাই্ দুপরে সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তার সোর্সরা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী আমার ১১ বছরের নাবালিকা শিশু কন্যা হাবিবা হক শোভা(১১) কে ভাত খাওয়া থেকে টেনে হেছরে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে জোড়পূর্বক গাড়িতে করে সিলেট সিআইডি অফিসে নিয়ে যায়। তাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোড়পূর্বক মিথ্যা স্বাক্ষ্য আদায়ের অপচেষ্টা সরুপ নানা হুমকি ধমকি দেয়া হয়। বর্তমানে নাবালিকা মেয়ে শোভা ভয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। ঐ ঘটনার পর থেকে আমার অপর দুই শিশু কন্যা নুসরত জাহান বৈশাখী ও জান্নাতুল ফেরদৌসী আশাও ভয়ে আতংঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এমদাদুল হকের অভিযোগ, সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা অদৃশ্য শক্তির ইশারায় মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আমাকে ও মামলার বাদী আমার বড় ভাইকে আসামী করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট সিআইডি জোনের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মেহেরুন নেছা পারুলের বক্তব্য জানতে গতকাল বুধবার বেলা পৌনে দু’টায় তার ব্যাক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি শিশু কন্যা শোভা ও বাসার বাড়াটিয়া জাহাঙ্গীরকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাক্ষ্য আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বললেন, মামলার তদন্ত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে , তদন্তের স্বার্থে আপাতত কিছু বলা যাবেনা জানিয়ে তিনি আরো বলেন পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনের করে সব তথ্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানানো হবে।