সংবাদ প্রকাশ করাই কাল হলো নির্ভীক সম্পাদক মুজিবুর রহমানের

Sabuj-Sylhetসুরমা টাইমস ডেস্কঃ সবুজ সিলেটের সম্পাদক ও প্রকাশক মুজিবুর রহমান। একজন নির্ভীক সম্পাদক হিসেবে তার খ্যাতি কোন অংশই কম নয়। সত্য সংবাদ প্রকাশে আর অপরাধের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশে তিনি সবসময় দেখিয়েছেন সাহসিকতা। কোন দিনই তাঁর পত্রিকার কোন প্রতিবেদকে বাধা প্রদান করেননি সত্য সংবাদ প্রকাশে। দিয়েছেন সাহস। সবুজ সিলেট পত্রিকায় একাধিকবার অবসর প্রাপ্ত এক সেনা সদস্যের নানান অপকর্মের প্রতিবেদন প্রকাশই কাল হলো নির্ভীক এই সম্পাদকের জন্য। আর ওই অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যই হলেন ষড়যন্ত্রমূলক মামলার বাদি। যে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় সবুজ সিলেট সম্পাদক মুজিবুর রহমান আজ কারাগারে। গতকাল সোমবার দৈনিক সবুজ সিলেট পত্রিকার সম্পাদক মুজিবুর রহমান মুজিবসহ তিনজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। সিলেট মহানগর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক মো. শাহেদুল করিম একটি মামলায় তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টম্বর শাহপরান থানার খদিম চৌমুহনীর বারাকাত ভবনের হাজী শফিক উদ্দিনের ছেলে জুবের আহমদ বাদী হয়ে সিলেট চিফ-মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে সবুজ সিলেটের সম্পাদক মুজিবুর রহমান মুজিব ও জেলা স্বেচ্ছা সেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মওদুদুল হক মওদুদ, সেলিম আহমদ, আব্দুল জলিল ও জয়নাল আহমদসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে দরখাস্ত মামলা করেন। আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানাকে নিদের্শ দেন। তৎকালিন ওসি আতাউর রহমানের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পড়ে থানার এসআই শাহিন উদ্দিনের উপর। শাহীন উদ্দিন সঠিক তদন্ত না করেই ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে সিআর মামলা নং ১২৫/২০১৪ চালু করেন। এরপর সবুজ সিলেটের সম্পাদক মুজিবুর রহমান মুজিব ও জেলা স্বেচ্ছা সেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মওদুদুল হক মওদুদ, সেলিম আহমদ, আব্দুল জলিল ও জয়নাল আহমদ উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের জামিন নেন। উচ্চ আদালত চার সপ্তাহ পর নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেয়ার নিদের্শ দেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক গতকাল সোমবার তারা সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। আদালত সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ তিন জনের জামিন না মঞ্জুর করে তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ওই মামলার নেপথ্যে রয়েছে মামলার বাদী জুবের আহমদের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ। ২০০৯ সালের ২৬ মে মঙ্গলবার সবুজ সিলেটে ‘বেপরোয়া এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যের দাপট’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে কিছু অংশ তোলে ধরা হল। সংবাদে প্রকাশ করা হয়, কখনো সেনা কর্মকর্তা, কখনো র‌্যাব সদস্য আবার কখনো পুলিশের বন্ধু পরিচয় দিয়ে গোটা সিলেটজুড়ে দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন জনৈক ব্যক্তি। জুবের আহমদ নামের এ ব্যক্তির দাপটে অসহায় সময় কাটাচ্ছেন সিলেটের নিরিহ কিছু মানুষ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে জুবের শুরু করেছেন বেপরোয়া চাঁদাবাজি। ভূমি দখল থানার দালালিসহ একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছেন তিনি। তার অপকর্মের যেই বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে তাকেই দেখিয়ে দিচ্ছেন কঠিন হাত। ২০০৯ সালের ১৪ জুন রোববার ‘নাজমুলের মায়ের কান্না আজও থামেনি, জুবেরের প্রতারনায় পথে বসেছেন অনেকেই’ শীর্ষক আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর জুবের বাহিনী সবুজ সিলেটের সহকারী ম্যানেজার জয়নাল আহমদ ও গাড়ি চালকের উপর হামলা চালিয়ে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ২০০৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জয়নাল বাদি হয়ে জুবের আহমদসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-৪৫। তারিখ-১০/০৯/০৯। একই বছর ৫ অক্টোবর সবুজ সিলেট সম্পাদকের ছোট ভাই হাবিবুর রহমান তাফাদারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক একটি মামলা দায়ের করেন জুবের। ওই মামলাটি মাননীয় আদালত খারিজ করেদেন। এরপর থেকেই জুবেরের মিশন শুরু হয় সবুজ সিলেট সম্পাদকে ফাঁসানোর। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আদালতে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। যা পরবর্তীতে চলতি বছরের সিআর মামলা নং ১২৫ হিসেবে নতিভূক্ত হয়। মামলায় আসামী করা হয় সবুজ সিলেট সম্পাদক ও ম্যানেজার জয়নাল আহমদকেও। এছাড়া ওই মামলায় আসামী করা হয় আরো ৫জনকে। যে মামলায় গতকাল সবুজ সিলেট সম্পাদকসহ ৩ জনকে কারাগারে পাঠান আদালত।