নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয়, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

Black out Dhaka, Bangladeshgসুরমা টাইমস ডেস্কঃ জাতীয় গ্রিডে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে চরম দুর্যোগে পড়েছে বাংলাদেশ। বিদ্যুতের প্রতীক্ষায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় প্রতিটি মুহূর্ত পার করছে দেশবাসী। ভারত থেকে সরবরাহকৃত লাইনে ত্রুটি দেখা দেয়ায় জাতীয় গ্রিডে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সারাদেশে একযোগে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে।
এরপর মেরামত কাজ চলার মধ্যেই বিকালে আবার গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়। ফলে সন্ধ্যা নামার পর থেকে অন্ধকারে ডুবে যায় রাজধানী ঢাকাসহ গোটা দেশ। এর মধ্যে সামান্য পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ হলেও তা চাহিদার তুলনায় নগন্য।
শনিবার সকাল ১১ টা ২৯ মিনিটে জাতীয় গ্রীডে বিপর্যয়ের কারণে সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ শিল্প প্রতিষ্ঠান।
এতে সিলেট বিভাগের পাওয়ার গ্রিড কোম্পানী অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) আওতাধীন ৭টি সব স্টেশন ব্রাক্ষণবাড়িয়া, হবিগঞ্জের শাহজিবাজার, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, নগরীর কুমারগাঁও এবং সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় অবস্থিত সাব স্টেশনগুলো বন্ধ ছিল। ফলে ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার অন্তর্গত এলাকাগুলোতে প্রায় তিন ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল না।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানী অব বাংলাদেশ লিমিটেডের সিলেট জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছারুল হক নাজনী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বেলা আড়াইটার দিকে একে একে পূণরায় বিভাগের ৭টি সাব স্টেশন চালু করা হয়েছে।
বিদ্যুতের এমন বিপর্যয় আগে কখনো ঘটেছে বলে কেউ স্মরণ করতে পারেননি। এর আগে বিভিন্ন সময় জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক বিভ্রাট, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা দেখা দিলেও তা ছিল আংশিক। শনিবারের মতো একযোগে সারাদেশ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে যাওয়া আগে কখনো দেখেনি দেশবাসী।
বিপর্যয়ের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৯টি, নরসিংদীর ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬টি ইউনিটই বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ভেড়ামায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ত্রুটির কারণে সবকটি ইউনিটে একযোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে, দেশের ইতিহাসে বড় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর মানুষের মধ্যে উদ্বেগের পাশাপাশি নানা ধরনের গুজবও ছড়িয়ে পড়ে। এর কারণ তদন্তে একটি কমিটি করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে কবে নাগাদ বিদ্যুত আসবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কেউই।
যোগাযোগ করা হলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমরা রিকভারির কাজ করছি, তবে সময় লাগবে।’
সাড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জনে সরকারি ঘোষণার মধ্যেই এ বিপর্যয় জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ভারত থেকে আমদানি করা কেবল ৫০০ মেগাওয়াটের সংযোগ লাইনে ত্রুটির কারণে জাতীয় গ্রিডে এ বিপর্যয় বিশেষজ্ঞদেরও ভাবিয়ে তুলেছে।
অন্যদিকে, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ বিপর্যয় চরম রূপ নিয়েছে। নগর-কেন্দ্রিক পানি সংকট বিপাকে পড়েছে শহরবাসী। চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানসহ জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। কেরোসিন, ডিজেল ও মোমবাতিসহ দুর্যোগ মোকাবিলার প্রাথমিক প্রস্তুতিও ফুরিয়ে এসেছে।