স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রনে আলাদা বাহিনী হচ্ছে র‍্যাব

RAB_on_alertসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ শিগগিরই এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) পুলিশ থেকে আলাদা করার প্রস্তাব আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রস্তাব আনা হয়েছে র‌্যাবকে সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন করারও। এ ছাড়া বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের র‌্যাবে পদায়নের আগে গোয়েন্দা সংস্থার নিরাপত্তা ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। র‌্যাবে সংবলিত ওই প্রস্তাবনা অনুমোদনের জন্য একটি ফাইল খোলা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ফাইলটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে। তিনি ফাইলে অনুমোদন দেওয়ার পর র‌্যাবে সংস্কার আনার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে র‌্যাব পুলিশের একটি ইউনিট হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। র‌্যাবেও সংস্কার আনার চিন্তাভাবনা চলছে। নারায়ণগঞ্জে অপহরণোত্তর ৭ খুনের ঘটনার পর র‌্যাব সংস্কারের বিষয়টি সামনে চলে আসে। বিভিন্ন মহল থেকে র‌্যাবে সংস্কার আনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। র‌্যাব বিলুপ্তিরও দাবি ওঠে। তবে সরকার র‌্যাবকে বিলুপ্ত করে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলতে চায় না। র‌্যাবে সংস্কারের বিষয়টি সরকারি নীতিনির্ধারণী মহলে আলোচিত হয়ে আসছে।
গত মাসের শেষ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা র‌্যাবে সংস্কার আনতে আলোচনা শুরু করেন। এরপরই মন্ত্রণালয়ের পুলিশ অধিশাখা থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রস্তুত করে তা ফাইলে দেওয়া হয়। ওই ফাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী সিনিয়র সচিব সি কিউ কে মুস্তাক আহমেদ স্বাক্ষর করে অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়েছেন।
আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অর্ডিনেন্স, ১৯৭৯ সংশোধনকল্পে দ্য আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (সংশোধনী) অ্যাক্ট, ২০০৩ প্রণয়নের মাধ্যমে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) নামে স্বতন্ত্র ফোর্স গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। দ্য আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (সংশোধনী) অ্যাক্ট, ২০০৩ এর ৪ (৩) ধারা মোতাবেক র‌্যাব একটি কম্পোজিট ফোর্স হিসেবে গঠন করা হয়। র‌্যাব মূলত একটি বিশেষায়িত বাহিনী। স্বশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, জনপ্রশাসনের সিভিল সার্ভেন্টদের নিয়ে এই কম্পোজিট ফোর্স গঠন করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশবলে এ বাহিনীতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের ৪৪ ভাগ, পুলিশের ৪৪ ভাগ, বিজিবির ৬ ভাগ, আনসার ৪ ভাগ, কোস্ট গার্ড ১ ভাগ ও সিভিল প্রশাসনের ১ ভাগ সদস্য মোতাবেক কোটা বিভাজন করা হয়।
আইন, বিধি অনুযায়ী র‌্যাবের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ পুলিশ অধিদপ্তর। বর্তমানে এ বাহিনীর সদর দপ্তর ছাড়া মোট ১৪টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। এ বাহিনীর মঞ্জুরীকৃত জনবল ১১ হাজার ১০৩ জন। র‌্যাবে বর্তমানে সশস্ত্র বাহিনী-সিভিল সদস্যদের শৃঙ্খলাজনিত বিষয় নিজ-নিজ আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
র‌্যাবে সংস্কার আনার প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, র‌্যাব গঠনের কোটা বিভাজনে পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যাধিক্য অবস্থান দেখা যায়।
বিভাজনে সিভিল প্রশাসনের অনুপাত বৃদ্ধি হলে র‌্যাবের দায়িত্ব পালন ও জবাবদিহির ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা হবে। তাই র‌্যাবের অর্থ, ভূমি, মিডিয়া, ক্রয় ও আইনি ব্যবস্থাপনাসহ এ ধরনের অন্যান্য ক্ষেত্রে সিভিল প্রশাসনের সদস্যদের নিয়োগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
র‌্যাব একটি কম্পোজিট বাহিনী হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে পুলিশ বাহিনীর একটি ইউনিট হিসেবে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বাস্তবতা বলছে র‌্যাবের অপারেশনে পুলিশ বাহিনীর কোনও ভূমিকা কার্যকর নয়। তাছাড়া একটি কম্পোজিট ফোর্স অন্য একটি বাহিনীর অধীনে রাখা সংগত নয়। তাই র‌্যাব সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করে দেখেছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে আগত র‌্যাব সদস্যরা সরাসরি র‌্যাবে পদস্থাপিত হন। পুলিশ বাহিনীর পুলিশ সুপার এবং তদূর্ধ পর্যায়ের কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে র‌্যাবে পদায়ন হন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুলিশ অধিদপ্তর থেকে সরাসরি র‌্যাবে পদায়ন করা হয়। সরকারের বিদ্যমান প্রেষণ নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগে কর্মরত সদস্যরা প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণধারী মন্ত্রণালয়ে যোগদান করে পরবর্তী সময়ে প্রেষণের কর্মস্থলে প্রেরণ করা হয়।
তবে র‌্যাবে পদায়নের ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা ছাড়া অন্য সদস্যরা পদায়নে প্রেষণ নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না। এ অবস্থায় র‌্যাবে প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রেষণ নীতিমালা অনুসরণপূর্বক সব বাহিনী, বিভাগ থেকে আসা সদস্যরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পদায়নের জন্য ন্যস্ত ও মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিধিবিধান অনুযায়ী তাদের র‌্যাবে পদায়ন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
র‌্যাবে পদায়নের ক্ষেত্রে সব বাহিনী, বিভাগের সদস্যদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে নিয়োগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর কর্তৃক এবং বেসামরিক সদস্যদের জন্য এনএসআই ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) কর্তৃক নিরাপত্তা ছাড়পত্র দেওয়ার বিধান প্রবর্তন করার কথা বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও পর্যালোচনা করে দেখেছে, র‌্যাবে কর্মরত সামরিক সদস্যসহ অন্যান্য সিভিল সদস্য কর্তৃক একই ধরনের অনিয়ম-অপরাধের ক্ষেত্রে তাদের নিজ-নিজ মাতৃ বাহিনীর বিধিবিধান অনুযায়ী শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা-শাস্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। এতে একই বাহিনীতে কর্মরত সদস্যদের কৃত একই ধরনের অনিয়ম-অপরাধের ক্ষেত্রে বিচারে অসামঞ্জস্যতা দেখা যাওয়া সদস্যদের মধ্যে প্রভাব-প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। এ অবস্থায় র‌্যাবে কর্মরত সামরিক সদস্য এবং সিভিল ফোর্স থেকে আসা সব সদস্যের ক্ষেত্রে একই ধরনের শৃঙ্খলামূলক বিধিবিধান অনুসরণ করতে র‌্যাবের জন্য একটি বিশেষ বিধি (শৃঙ্খলা ও আপিল) প্রণয়ন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
র‌্যাব বিশেষ বাহিনী হওয়ায় এর কার্যক্রম অন্যান্য বাহিনী থেকে আলাদা। এ বাহিনীর কার্যক্রমে ব্যবহৃত অস্ত্র, যানবাহন, সরঞ্জামাদিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অনেক ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। এই বিবেচনায় পৃথক বাজেটের প্রস্তাব করা হয়েছে র‌্যাবের।
এই সুপারিশগুলো বিবেচিত হলে প্রস্তাব করা হয়েছে র‌্যাব সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান পরিবর্তনেরও।