পাকস্থলীতে আড়াই কেজি চুল! (ভিডিও)
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ১২ বছরের এক মেয়ের পাকস্থলীতে আড়াই কেজি চুল পাওয়া গেছে! হঠাৎ করেই মেয়েটির শরীর খারাপ হয়েছিল। খেলেই বমি হয়ে যেত। পেটে শুরু হত অসহ্য যন্ত্রণা। প্রথমদিকে মনে করা হয়েছিল গ্যাসের সমস্যার কারণে এমনটা হচ্ছে। কিন্তু কাঁড়ি কাঁড়ি অ্যাণ্টাসিডেও উপশম না হওয়ায় মেয়েটির এক্স-রে, অ্যান্ডোস্কোপি, সিটি-স্ক্যান করা হয়। তখন দেখা যায়, পাকস্থলীর মধ্যে বাসা বেঁধেছে বেশ বড় আকারের একটি টিউমার। কিন্তু অপারেশনের পর ডাক্তারদের চোখ কপালে। হায়, এ-তো টিউমার নয় আড়াই কেজি ওজনের চুল! শিশুটির নাম নেহা সাউ। বাড়ি বালিগঞ্জের বন্ডেল গেট লাগোয়া লালকুঠি এলাকায়। নেহার বাবা আউধ সাউ ‘হিন্দুস্হান ইঞ্জিনিয়ারিং’- এর কর্মকর্তা। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের কলকাতায় শিয়ালদহের ইএসআই হাসপাতালে।
তিনি জানান, বছরখানেক আগে মেয়ের শরীর হঠাৎ খারাপ হয়। পেট ব্যথা শুরু হয়। নারীঘটিত কোনো সমস্যা ভেবে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাই৷ তিনি গ্যাসের ওষুধ দেন। কিন্তু তাতে ব্যথা কমেনি। পরে এক্স-রে করে ধরা পড়ে পেটের মধ্যে একটি টিউমারের মতো হয়েছে। আর দেরি না করে মেয়েকে নিয়ে শিয়ালদহ ইএসআইতে চলে আসি। গত সোমবার ডাঃ সোমনাথ ঘোষ, ডাঃ সুপ্রিয় রায় ও ডাঃ বিজয় বিশ্বাসরা অপারেশন করেন।
কিন্তু নেহার পেটে অত চুল এরো কী করে?
আউধ সাউ জানান, ছোট থেকেই নেহার চুল ছেঁড়ার বাতিক ছিল। বদ অভ্যাস ফেরাতে মা শীলা সাউ কয়েকবার মারধরও করেছেন নেহাকে। মায়ের মারে কয়েকদিন আগে মাথা ফেটেছে নেহার। তবু নিজেকে শোধরাতে পারেনি ষষ্ঠ শ্রেণির এই ছাত্রী। এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। এমন বদ অভ্যাস খুব একটা বিরল নয়।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায়, এই রোগের একটা নামও আছে, ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া। কিন্তু নেহার সমস্যা ছিল আরো গভীর। সে শুধু চুল ছিঁড়েই ক্ষান্ত হতো না তা মুখে পুরে নিতো। বছরের পর বছর সবার অলক্ষে এভাবেই চুল খেয়েছে সে। সেই চুলই পাকস্থলীতে গিয়ে হজমরসের সঙ্গে মিশে টিউমারের আকার নিয়েছে। তাই খেলে পেট ব্যথা, বমি হত নেহার। জানালেন শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালের সুপার ডাঃ প্রদীপ ভট্টাচায।
জানা গেছে, নেহার অপারেশন সফল হয়েছে। সে যাতে চুল খাওয়ার বদ অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারে তার জন্য বিশিষ্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ পৃথ্বীশ ভৌমিকের তত্ত্ববধানে কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে।
পৃথ্বীশ ভৌমিক জানান, শিশুদের মধ্যে ‘অখাদ্য’ খাওয়ার প্রবণতা বিরল নয়। কেউ মাটি খায়, কেউ সাবান। কেউ মাটির ভাড় তো কেউ দেওয়ালের চুন। নেহা খেত চুল। এটা এক ধরণের মানসিক রোগ। এ রোগটি সাধারণত ‘পিকা’ নামে পরিচিত ৷ উদ্বেগ থেকেই এই রোগের জন্ম হয়। পড়াশোনা বা অন্য কোনো বিষয়ে নেহার মনের উপর সম্ভবত চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। সেখান থেকেই এই রোগের উৎস।