পত্রিকা বাতিলের ক্ষমতা চায় সরকার : সমালোচনায় মুখর চিন্তাশীল বিশ্লেষকরা
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সংবাদপত্রের প্রকাশনা বাতিলের ক্ষমতা ফেরত চাচ্ছে সরকার। সাবেক প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন সরকারের আমলে বিলুপ্ত করা সেই ধারাটি ফেরত আনার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। এ নিয়ে অনেকেই তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। এ ইস্যুতে সমালোচনা হয়েছে সংসদেও।খোদ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
সরকারের এ উদ্যোগের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন সমাজের চিন্তাশীল মানুষও।বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে সংবাদপত্রের প্রকাশনা বাতিলের ক্ষমতা ব্যক্তির হাতে চলে যাবে।সরকার এখন ধর্মীয় উন্মাদন সৃষ্টির জন্য দায়ী সংবাদ মাধ্যমের জন্য এই ধারাটি ফেরত আনার কথা বললেও এর অপপ্রয়োগের আশঙ্কা রয়েছে ব্যাপকভাবে।তারা বললেছন, যে কোনো অজুহাতে সরকার সংবাদপত্রের প্রকাশনা বাতিল করে দিতে পারে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক পন্থা হতে পারে না।
এ প্রসঙ্গে তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ড. সাদেকা হালিম বলেন, সংবিধানের ৩৯ (১)ধারায় স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ রয়েছে। তবে ৩৯ (২) ধারায় এও বলা হয়েছে, জনজীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারে এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাবে না। এটা মেনে চলা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বর্তমানে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির স্বার্থে ব্যবহার হচ্ছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা মোটেও ঠিক নয়। পত্রিকার মালিকরা ব্যবসায়ী। তারা তাদের স্বার্থে সংবাদপত্রকে ব্যবহার করছে। এজন্য গণমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সাংবাদিকতার ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা দরকার।
সাদেকা হালিম বলেন, সংবাদপত্রের প্রকাশনার ক্ষেত্রে শক্তিশালী নীতিমালা থাকতে হবে।প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করতে হবে। বর্তমান প্রেস কাউন্সিল একটি দন্তহীন বাঘ। প্রতিষ্ঠানটির কার্যকর ভূমিকা থাকা দরকার। এ নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের সাবে ভিসি ড. ইমাজউদ্দিন আহমেদও।তিনি বলেন, সংবাদপত্রের প্রকাশনা বাতিলের ক্ষমতা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে না দিয়ে সব পত্রিকা বন্ধ করে দিক সরকার। এটা স্রেফ সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের বহিঃপ্রকাশ।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার চাচ্ছে দেশে যেন কোনো সংবাদপত্র না থাকে। তাহলে তাদের একক আধিপত্য কায়েম করা সম্ভব হবে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সংবাদপত্র কি সরকারের প্রশংসা করার জন্য? এটা সরকারের মুর্খতা। একটা অর্বাচীন সিদ্ধান্ত। যা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা হয় না। ১৯৭৫ সালেই এ প্রক্রিয়া চালু হয়েছিল। সেই বাকশাল প্রকিয়ায় ফিরে যেতে চাচ্ছে সরকার।
এদিকে, সংবাদপত্রের প্রকাশনা বাতিল করার ক্ষমতা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে ফিরিয়ে দেয়া বিষয়ে সংসদেও আলোচনা হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কিছুই জানে না।
মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ-৪ আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ পীর ফজলুর রহমান সংসদে বলেন, সংবাদপত্র বন্ধের ক্ষমতা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফিরিয়ে দিলে তা রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহৃত হবে। সরকারের এ পদক্ষেপ এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় দেয়া তিন জোটের রূপরেখার পরিপন্থী। সরকারি দলের কোনো নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হলে তিনি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সে সংবাদপত্রটি বন্ধের ব্যবস্থা করবেন। সুতরাং এ আইন করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, ঢাকার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দেয়া এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রবিরোধী কিংবা ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত হানে, এমন কোনো বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে সেই পত্রিকার প্রকাশনা বাতিলের ক্ষমতা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দেয়া হোক। আাগামী ৮ থেকে ১০ জুলাই অনুষ্ঠেয় জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বিষয়টি উত্থাপিত হবে।
তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, জেলা প্রশাসন এটা কেন চাইছে এবং কার ইচ্ছায় চাইছে, তা তিনি বলতে পারেন না। তবে তাঁরা চাইলেই তো আর হবে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, তথ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে কিছুই জানেন বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন। সুতরাং আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।