‘বিরোধী দলের নই, আমি জনগনের প্রতিনিধি’
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ রোববার বিকেলে জয়পুরহাট জেলার রামদেও বাজিলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ১৯দলীয় জোট নেত্রী, বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
‘ঈদের পর সব ধরনের কর্মসূচি আসবে’
খালেদা জিয়া বলেন, আমরা আন্দোলনে নামব। কিন্তু যখন আন্দোলনে নামতে চাই, তখন ভয়ে আওয়ামী লীগ আমাদের ঘরের বাইরে যেতে দেয় না। তবে এবার আর ঘরে আটকে রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, আন্দোলন কর্মসুচি দেব ঈদের পর। কর্মসূচি দিলে কি আপনারা রাস্তায় নামবেন? আমিও আপনাদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকব। আমরা কর্মসুচিতে যদি বাধা দেয়া হয় তখন হরতাল অবরোধ সব ধরনের কর্মসুচি দেয়া হবে।
‘বাম-ডান, বড়-ছোট সবাই রাস্তায় নামুন’
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ১৯দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়া বলেন, আমরা সকল দলকে আহ্বান জানাই। বাম-ডান, বড়-ছোট সবাই বলছি। আসুন আমরা দেশ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হই। দেশ রক্ষার জন্য কাজ করি। তিনি বলেন, প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষের রাজনীতি বাদ দিয়ে দেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনীতি করতে হবে। তাতে দেশের উন্নতি হবে। তখন দেশে বিদেশী বিনিয়োগ হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সে জন্যই আমরা বলেছিলাম, দেশ বাঁচান, মানুষ বাঁচান। দেশের সব মানুষ বর্তমান অবৈধ সরকারের হাত থেকে বাঁচতে চায়। নিজেদের জীবন রক্ষা করতে চায়। আপনারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন।
‘বিরোধী দলের নই, আমি জনগনের প্রতিনিধি’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলে, আমি সরকারি দলের কিংবা বিরোধী দলের প্রতিনিধি নই। আমি জনগনের প্রতিনিধি। আর সেই জন্য ৯৫ ভাগ জনগন আমার সঙ্গে আছে। আবারও নিরপেক্ষ সরকারের কথা উল্লেখ করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ দল। আমাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোন নির্বাচন হতে পারেনা। আলোচনা আমাদের সঙ্গেই করতে হবে। আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না, হয়নি। উপজেলায় আমরা এগিয়ে ছিলাম। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে তারা এমন দুর্নীতি করেছে যে আর সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। এ আওয়ামী লীগ একটা দুর্নীতিবাজ সরকার। নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন দিতে হবে।
‘আওয়ামী লীগ সরকারের মাথা ঠিক নেই’
আওয়ামী লীগ জানে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন দিলে তাদের কি পরিনতি হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। এমনকি পাশের দেশের নির্বাচনেও সরকার পরিবর্তন হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের মাথা ঠিক নেই। তারা আবোল-তাবোল কথা বলছে। আওয়ামী লীগের পাশে জনগন নেই তাই তারা দিশেহারা। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, জনগণতো আপনাদের ভোট দেয়নি। তাই আপনারা জনপ্রতিনিধি নন। এ নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। তাই এটা কোন নির্বাচন হয়নি। ৫ই জানুয়ারীর ভোটে দেশের জনগন অংশ নেয়নি। তিনি বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন দিতে হবে। জনগণ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে যাতে ভোট দিতে পারে। আমরা সেই ভোট চাই। তারা তা দিতে পারেনি বলে সরকার অবৈধ।
আওয়ামী লীগের পুণঃর্জন্ম জিয়ার মাধ্যমে:
শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করে আওয়ামী লীগের মৃত্যু ঘটিয়েছিলেন। আর জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী লীগের পুনর্জন্ম দিয়েছিলেন। তী বলে, আজ আওয়ামী লীগ বলে জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করেছে। কিন্তু আসল কথা হলো- জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের পুনর্জন্ম দিয়েছে। কারণ জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগকে পুনরায় জন্ম দিয়েছে। নইলে ইতিহাসের পাতা থেকে আওয়ামী লীগের নাম মুছে যেত।
শহীদ জিয়ার মৃত্যুর পর বোরকা পরে পালাতে চেয়েছিলেন কেন?
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার ব্যাপারে শেখ হাসিনা জানতেন বলে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, আপনি দেশে আসার ১৩ দিন পর জিয়াউর রহমান মারা গেলেন কেন? তাহলে নিশ্চয় একটি কারণ আছে। জিয়াউর রহমানকে মানুষ এতো ভালোবাসত যে, তার জানাজা হয়েছিল অনেক বড়। সেদিন মানুষ যখন তার জানাজা পড়তে ঢাকায় জড়ো হয়েছিল, তখন আপনি কেন বোরকা পরে বর্ডার দিয়ে পালাতে চেয়েছিলেন? আপনার ভেতর কিসের ভয় কাজ করেছিল সেদিন?
জিয়াউর রহমান প্রথম মুক্তিযোদ্ধা – বিএনপি একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের দল
জিয়াউর রহমানকে প্রথম মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপিকে একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের দল দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, জিয়াউর রহমানই প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান ছিলেন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা আর আওয়ামী লীগে যারা আছেন, তারা হলেন- সীমান্ত পালানো মুক্তিযোদ্ধা। সুতরাং রণাঙ্গনে যুদ্ধের মর্ম তারা বুঝবে না। তাই জিয়াউর রহমানের প্রতি তারা এতো বিষোদগার করে।
‘হাসিনা গডফাদারের মা’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গডফাদারের মা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, গডফাদারের মা ক্ষমতায় থাকলে দেশের কোন মঙ্গল হবে না। আওয়ামী লীগের হাতে রক্ত। এরা খুনি। যাদের হাতে মানুষের রক্ত, তাদের হাতে দেশের মানুষে ভালো থাকতে পারে না। তাই আওয়ামী লীগের আমলে কোন ধর্মের মানুষই নিরাপদ নয়। তারা নিরিহ-নিরস্ত্র আলেমদের ওপর মধ্যরাতে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। হিন্দুদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বলে, যাই করি না কেন- তারা আওয়ামী লীগের বাইরে যাবে না। তাই আওয়ামী লীগের আমলে হিন্দুদের মেয়েরা ধর্ষিত হয়, তাদের বাড়িঘর দখল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট হয়। হিন্দুদের মন্দির ভাংচুর ও লুট হয়। এমনকি বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানরাও এ সরকারের আমলে নিরাপদ নয়। কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মের মানুষের উপর হামলা, বাড়িঘর লুট ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন। তাই সবাইকে বলবো, আপনারা বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হোন। শান্তিতে থাকবেন। কারণ আমরা সংখ্যাগুরু, সংখ্য লঘুতে বিশ্বাস করি না। আমরা সবার প্রতি সমান আচরণ করি। আমরা সবাইকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই দেখি।
‘মানুষ খুনের জন্য হাসিনাকে জবাবদিহি করতে হবে’
জয়পুরহাটের সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, মানুষ খুনের জন্য শেখ হাসিনাকে জবাবদিহি করতে হবে। দেশ এখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিনত হয়েছে। আমাদের দলের (বিএনপি) ৩১০ জনকে হত্যা করেছে, ৫৬ জনকে গুম করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত সরকার এবং সরকারের বাহিনী। এই র্যাবকে আমরা গড়েছিলাম জঙ্গি দমনে। আমাদের আমলে র্যাবে ভাল ভাল অফিসার নিয়োগ দিয়েছি। কোন রাজনৈতিক বিবেচনা করিনি। সে সময় র্যাব বড় বড় জঙ্গি ধরেছে। অথচ এই সরকার জঙ্গি ধরতে পারেনি। বরং সরকারদলীয় লোকরা জঙ্গি ছিনিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেনÑ কিভাবে নারায়ণগঞ্জ, নীলফামারী, লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাটে গুম-খুন করা হচ্ছে। জনগনকে মারার জন্য র্যাবকে গঠন করা হয়নি। এসব ঘটনার সঙ্গে র্যাবের তারেক, জিয়াসহ আরও অনেকে জড়িত। তারা এখন ঘাপটি মেরে আছে। খালেদা জিয়ার তার বক্তব্যে ব্যাবের সমালোচনা করে এর বিলুপ্তি দাবি করেন।
‘শেখ হাসিনাকে ধরলেই ফরমালিনের খবর বেরিয়ে আসবে’
তিনি বলেন, ফরমালিনের জন্য শেখ হাসিনাকে ধরা উচিৎ। হাসিনাকে ধরলেই ফরমালিনের খবর বেরিয়ে আসবে। আমে ফরমালিন দেওয়ার জন্য হাসিনাই দায়ী। ফরমালিনের নামে এভাবে আম নষ্ট করা যাবেনা। আমে ফরমালিন দাতাকে খুঁজে বের করতে হবে।
‘এখন সরকারই তো বিএনপির কাছে বৈধতা চায়’
আদালতের প্রতি প্রশ্ন রেখে খালেদা জিয়া বলেন, ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত ১৫৪জন নাকি বৈধ। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, মানুষের আন্দোলনের প্রতিষ্ঠিত এবং মানুষের আন্দোলনে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য সেটা কেন আদালতের দৃষ্টিতে বৈধ হবে না। এখন সরকারই তো বিএনপির কাছে বৈধতা চায়। তিনি বলেন, বিচারকরা নিজেদের মতো রায় দিতে পারছেন না, আওয়ামী লীগ তাদের ইচ্ছেমতো রায় দিতে বাধ্য করছে। এখন দেশে দুই রকমের বিচার। বিরোধী দল হলে এক রকমের, আওয়ামী লীগের হলে অন্যরকম। এক দেশে দুই রকমের বিচার চলতে পারে না। বিদেশিরাও বিচার ব্যবস্থায় আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। তিনি বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিরপেক্ষভাবে বিচার করুন, জনগণ আপনাদের সঙ্গে আছে।
‘আওয়ামী লীগ সুইস ব্যাংকে টাকা জমিয়েছে’
সরকারের দূর্নীতির কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, এ আওয়ামী লীগ একটা দুর্নীতিবাজ সরকার। আওয়ামী লীগ জনগণের টাকা চুরি করে আত্মসাৎ করেছে। তারা পদ্মা সেতু, শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চুরি করেছে। কাগজে বের হয়েছে সুইচ ব্যাংকে এ বছর রেকর্ড পরিমান অর্থ বাংলাদেশ থেকে রাখা হয়েছে। দুদক সাহেবকে বলছি? আমনারা কি এক চোখা, আপনারা এখন দেখছেন না কেন? এই টাকা কাদের, কারা এত টাকা রেখেছেন। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা জানতে চাই দুদক কেন শুধু বিএনপিকে দেখে তারা আওয়ামী লীগকে কেন দেখে না। তারা কি চোখ বন্ধ করে আছে? তিনি বলেন, ফরমালিনের নামে কৃষকের ফল ধ্বংস করা হচ্ছে। অথচ দেশে ফরমালিন আমদানী করছে শেখ হাসিনা। তাকে ফরমালিন আমদানীর জন্য ধরা উচিত।
‘গ্রামীণ ব্যাংক ড. ইউনুসকে ফিরিয়ে দেবে বিএনপি’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, যারা সন্ত্রাসকে সম্মান করে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবেনা। আমরা সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান করি। আওয়ামী লীগ সম্মানিত ব্যক্তিদের অসম্মান আর সন্ত্রাসীদের সম্মান দেয়। আমি ড. ইউনুসকে বলতে চাই বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আপনার গ্রামীণ ব্যাংক আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ দেয়। তারা নারীদের ঋণ দিয়ে দেশের উন্নয়ন করেছে। ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনুস নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। এরজন্য জাতি হিসেবে আমাদের গর্বিত হওয়া উচিৎ। কিন্তু আওয়ামী লীগ এ সম্মানিত লোককে অপমাণ করে তাদের ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ শেখ হাসিনা সন্ত্রাসী শামীম ওসমানকে শেল্টার দেয়।
জয়পুরহাটবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা:
জয়পুরহাটবাসীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ভারিবৃষ্টি উপেক্ষা করে আপনার এখানে এসেছেন। আপনাদের দেখে আমি সাহস পাচ্ছি। এই জয়পুরহাটে সরকার পতন আন্দোলনে ১২ জন শহীদ হয়েছেন, অসংখ্য লোক আহত হয়েছেন। তাদের অনেককে আমরা আর্থিক সহযোগীতা করেছি। আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে সাহসি ভূমিকা রাখার জন্য জয়পুরহাটবাসীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।