কতৃপক্ষের নির্দেশে কমলগঞ্জে সাড়ে ৩ সহস্রাধিক প্রাচীন বৃক্ষ কর্তন

Komolgonj Tea Gardenমৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ কমলগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি চা বাগান কর্তৃপক্ষ নিজ প্রয়োজনে মূল্যবান প্রজাতির ৩ সহস্রাধিক প্রাচীনতম বৃক্ষরাজি কর্তন করেছেন । কর্তনকৃত কিছু গাছ উদ্ধারে ব্যবহৃত হয়েছে হাতি। চাম, জাম, শিরিষ সহ বিভিন্ন প্রজাতির ৩৬শ গাছ এক সাথে কর্তন করায় পাখির আবাসস্থল ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। তবে চা বাগান ব্যবস্থাপক গাছের ভালোর জন্যই গাছ গুলো বিক্রি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি চা বাগানের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে শমশেরনগর-শ্রীমঙ্গল সড়কপথ। সড়কপথের পশ্চিম পাশে জাতীয় উদ্যান ও পূর্ব পাশে এম. আহমদ টি কোম্পানীর ফুলবাড়ি চা বাগান। বিশাল এই বাগানে চা গাছের ছায়াবৃক্ষ হিসাবে প্রায় দীর্ঘ ৫০ থেকে একশ’ বছরের চাম, জাম, শিরিষ সহ মূল্যবান প্রজাতির গাছ গাছালি গড়ে উঠেছে। মাগুরছড়া গ্যাস কূপটিও ফুলবাড়ি চা বাগান এলাকায় রয়েছে। ফলে ১৯৯৭ সনে মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরনের প্রভাব, বন্যপ্রাণি, পাখির আবাসস্থল ও খাবার ছাড়াও চা গাছের ছায়াবৃক্ষ হিসাবে গাছগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুলবাড়ি চা বাগানের শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, গত জানুয়ারী মাসে চাম, জাম, শিরিষ সহ পুরনো ৩ হাজার ৬ শত গাছ ৪ কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে কোম্পানী এসব গাছ বিক্রি করেছে। জানুয়ারী থেকে এখন পর্যন্ত মহালদার কেটে ফেলা ঐসব গাছের খন্ডাংশ নিয়ে নিচ্ছেন। এমনকি হাতি লাগিয়েও গাছ উদ্ধার করা হচ্ছে। পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সম্পাদক নূরুল মোহাইমিন মিল্টন বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা প্রাচীন বৃহদাকার গাছগুলি পাখিদের বিচরন ভূমি। বিশেষত শকুনের অবাধ বিচরন ভূমি হিসাবে প্রাচীনতম গাছগাছালি খুবই প্রয়োজন। কিন্তু প্রাচীনতম বৃহদাকার এসব গাছগুলো এখন আর চোখে পড়ে না। তার উপর এই এইসব গাছগুলি কমে গেলে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার নয়।
লাউয়াছড়া বন্যপ্রাণি বিভাগের বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মরতুজ আলী বলেন, পশুপাখির বাসস্থান ও তাদের খাবারের জন্য প্রাচীনতম গাছগুলি খুবই প্রয়োজন। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে এক সাথে এতগুলো গাছ কেটে ফেলা খুবই দুঃখজনক। বন্যপ্রাণি বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, টি গার্ডেনের আলাদা একটা ইকো সিষ্টেম রয়েছে। সে জন্য তাদের বিষয়ে কিছু মন্তব্য করা যাচ্ছে না। ফুলবাড়ি চা বাগান ব্যবস্থাপক মো. লুৎফুর রহমান ৩৬শ গাছ বিক্রির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বয়স বেশি হয়ে যাওয়ায় গাছের ভালোর জন্যই বন বিভাগের অনুমতি ক্রমে এগুলো বিক্রি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অন্য দশটি চা বাগানের চেয়ে ফুলবাড়ি চা বাগানে গাছ অনেক বেশি রয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু জানতে চাইলে তিনি কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গলস্থ মহকুমা বন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ জামান বলেন, উর্দ্বতন কর্তপক্ষের নির্দেশে ফুলবাড়ি চা বাগানের গাছ বিক্রির অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি।