আতশবাজী পোড়ানো নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ১০ (ভিডিও)

Captureসুরমা টাইমসঃ কালসী ও আশপাশের বেশ কয়েকটি রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, নিহতদের মধ্যে ৩ জন শিশু, ২ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ রয়েছে। এসব লাশ এখন ক্যাম্পের ভেতর বিহারিদের একটি অফিসে রয়েছে। ষ্তাহনীয়রা জানান, ১০ জনের মধ্যে চারজনই এক পরিবারের। এছাড়া অন্যএক পরিবারের রয়েছে ২ জন। এদের মধ্যে একজনের নার আব্দুল কাদের (৯) বলে জানা গেছে।
রাজধানীর মিরপুরের কালসি রোডস্থ নতুন রাস্তা মোড় এলাকায় শবে বরাতের আতশবাজী ফোটানোর ঘটনা নিয়ে স্থানীয় দুপক্ষের সংঘর্ষ এবং পুলিশের সঙ্গে বিহারীদের সংঘর্ষে ৯ জন নিহত হবার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার ফজরের নামাজের পর এলাকার কিছু বিহারী যুবক আতশবাজি ফোটাতে শুরু করলে স্থানীয় দুটি পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনো সংঘর্ষ চলছে। বেশ কিছু বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে ও ভাঙচুর চালানো হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিহারি কলোনিতে আগুন ধরিয়ে দিলে শিশুসহ নয়জন দগ্ধ হয়ে মারা যায়। এর মধ্যে ছয় জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত চারজন শিশু। একটি টেলিভিশনের ফুটজে দেখা যায় এক ব্যক্তি একটি শিশুর আগুনে পোড়া নিয়ে লাশ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। শিশুটির সারা শরির আগুনে পুড়ে গেছে।
এ ছাড়া দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও পুলিশের রাবার বুলেটে আরো অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১০ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে তিনজন হলেন- পুলিশের সোর্স আসলাম (৪৫), স্থানীয় পানের দোকানদার বদরুদ্দিন (৪৫) ও স্কুল ছাত্র আরজু। সংঘর্ষ শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুড়লে ওই গুলিতে আহত হন এরা সবাই। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, রূপনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জুবায়ের।
এদিকে সংঘর্ষের সুযোগে কিছু অসাধু লোকজন সেখানকার দোকান-পাট ভাংচুর করে লুট করে এবং বিহারীদের বস্তিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পল্লবী থানার ডিউটি অফিসার এসআই নুরুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। তবে হতাহতের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে মিরপুর-১২ নম্বরের কুর্মিটোলার পাকিস্তানি ক্যাম্পের জয়েন্ট সেক্রেটারি আব্দুস সাত্তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানান, নিহতদের মধ্যে ৩ জন শিশু, ২ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ।
এদিকে ফারজানা নামে এক অগ্নিদগ্ধ নারী ঢামেকে এসেছেন। তার মুখ, শরীরসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ আগুনে পুড়ে গেছে। তিনি মিরপুর-১২ এর কুর্মিটোলা ক্যাম্পে বসবাস করেন।
ফারজানাকে ঢামেকে নিয়ে আসা প্রতিবেশী নুরুদ্দিনসহ কয়েকজন জানান, ফারজানার ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। তারা শুনেছেন, ফারজানার মা—বোনসহ পরিবারের চারজন ঘরে আটকা পড়ে মারা গেছেন। সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনার পর বিহারি ক্যাম্পে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। ক্যাম্পের মধ্যে থাকা হতাহতদের উদ্ধারসহ অভিযুক্তদের আটকের জন্য পুলিশের এই অভিযান চলছে বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মারা গেছে শিশুসহ ১০ জন। লাশগুলো রাখা হয়েছে কালশীর মোনাপাড়া বিহারি ক্যাম্পের ভেতরের একটি ক্লাবে। সেখানে শত শত নারী-পুরুষ লাশগুলো ঘিরে রেখেছে। পুলিশ ওই ক্যাম্পে অভিযান শুরু করে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে। এর কিছুক্ষণ আগে মিরপুর ডিওএইচএসের পাশের রাস্তা,বিহারী ক্যাম্পের ভেতর ও আশপাশের এলাকা থেকে অন্তত ৫০ জন বিহারিকে আটক করা হয়েছে। ক্যাম্পের ভেতরে বিহারিরা সংঘবদ্ধ হয়ে অবস্থান নিয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে মোনাপাড়া ক্যাম্প এবং আশপাশের এলাকায়। যেকোনো সময় পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।