নীলার অন্ধকার জগতের নানা কাহিনী
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সুন্দরী, ল্যাস্যময়ী নীলা হাসি দিয়ে যে কারো মনে ঝড় তুলতে পারে। কিন্তু এই অপরুপা নারী কি কাউকে হত্যা করতে পারে ? হঠাৎ উত্তেজনা বশতঃ হত্যা নয় পরিকল্পনা করে ভারাটে খুনির মাধ্যমে হত্যা ? কেউ বিশ্বাস করুক আর না-ই করুক আদালতে স্বিকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে একটি হত্যা মামলার দুই আসামী স্বিকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে নূর হোসেনের বান্ধবী হিসেবে পরিচিত নীলার এ নির্মম চরিত্রের কথা।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার নীলাকে জুয়েল হত্যা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়। ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর জুয়েলকে হত্যা করা হয়। ২৭ অক্টোবর তার মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পরে গ্রেফতার করা মনা ডাকাত, সোহেল ও কালা সোহাগ ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। এদের মধ্যে মনা ডাকাত ও সোহেল তাদের স্বীকারোক্তিতে জুয়েল হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাউন্সিলর নীলার নাম জানায়।
জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর। নীলা সিদ্ধিরগঞ্জের হাজী আবদুল মোতালেবের মেয়ে। তার বাবাও আওয়ামীলীগের একটি ওয়ার্ড কমিটির নেতা।
আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়া আসামীদের জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নিার্বচনে জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা ৪,৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়। এরপরেই তার সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জের গডফাদারখ্যাত অপর কাউন্সিলর নূর হোসেনের সখ্যতা ও ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে। মূলত তখন থেকেই নীলা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। নোয়াখালীর উত্তর মাসুদপুর গ্রামের ফিরোজ খানের ছেলে জুয়েল ছিল নীলার মাদক ব্যবসার প্রধান অংশীদার। জুয়েলের মাধ্যমে নীলা ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া থেকে ফেনসিডিল এবং চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা এনে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতো। এভাবে ব্যবসা করতে গিয়ে জুয়েল নীলার কাছে ৪০ লাখ টাকা পাওনা হয়। এনিয়ে একদিন দু’জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এরপরই নীলা তার খুচরা মাদক বিক্রেতা মনা ডাকাত, সোহেল, কালা সোহাগ ও সোয়েবকে নিয়ে জুয়েলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। জুয়েলকে হত্যার জন্য তাদের ২ লাখ টাকা দেয় নীলা। নীলার নির্দেশ এবং পরিকল্পনায় ঘাতকরা গত বছরের ২৬ অক্টোবর রাতে জুয়েলকে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুঁড়ি এলাকায় জবাই করে হত্যা করে। হত্যার পর দেহ থেকে মস্তক আলাদা করে পাশের পুকুরে ফেলে দেয় ঘাতকরা।
২৭ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুঁড়ি এলাকা থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির মস্তক বিহীন দেহ ও পরে মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। ঐদিনই সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই জিন্নাহ বাদী হয়ে এ ব্যাপারে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। লাশ উদ্ধারের বেশ কয়েকদিন পর নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার উত্তর মাসুদপুর গ্রামের ফিরোজ খান সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এসে লাশটি তার ছেলে জুয়েলের বলে সন্দেহ করে।
পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলাম ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নীলার মাদক ব্যবসার অপর ৪ সহযোগি মনা ডাকাত, সোহেল, কালা সোহাগ এবং সাকিবকে গ্রেফতার করে। তাদের স্বিকারোক্তি থেকে পুলিশ নিশ্চিত হয় একটি জুয়েলের লাশ। আসামীরা জুয়েলকে হত্যার কথা স্বিকার করে হত্যাকান্ডের বিশদ বর্ননা দেয়। গ্রেফতারকৃতরা ঘটনার সঙ্গে কাউন্সিলর নীলার সম্পৃক্ততার কথা পুলিশকে জানায়। গ্রেফতারকৃত ৪ জনসহ মোট ৮ জন জুয়েল হত্যায় অংশ নেয় বলে তারা জানায়।
নীলার মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও সিদ্ধিরগঞ্জের কেউ ঘুনাক্ষরেও বিষয়টি জানতো না। তাছাড়া নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় নীলার ব্যাপারে কেউ নাকও গলাতো না। এ হত্যাকান্ডের পর বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়।
আদালতে স্বিকারোক্তিতে দুই হত্যাকারি নীলার নাম বললেও নীলা নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের ওই সময়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম নীলাকে গ্রেফতার না করতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সে সময়ের ওসি আবদুল মতিনকে নির্দেশ দেন। শুধু তাই নয়, আসামীদের দিয়ে আদালতে নীলাকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দেওয়ানোয় মামলার ওই সময়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলামকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা থেকে তৎকালীন পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম বদলী করে দেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, জুয়েল হত্যা মামলার আসামীদের স্বিকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনুযায়ী-ই নীলাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে আনা হয়েছে। তাকে আগে কেন গ্রেফতার করা হলো না এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে চাননি।
এদিকে এ ব্যাপারে নীলার পরিবারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য দাবী করেন, নূর হোসেন নীলাকে নিজ আয়ত্বে রাখার জন্য জুয়েল হত্যা মামলায় নীলাকে ফাসায়। প্রকৃতপক্ষে নূর হোসেন-ই তার কথা না শোনায় এ হত্যাকান্ড ঘটায়।