দেশের পরিস্থিতি বিভীষিকাময়, জনগণের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই : আবু মালিহা
একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, খাদ্য, বস্ত্র, অন্ন বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। তদুপরি জীবনের সাথে আরোও একটি অন্যতম বিষয় হচ্ছে, ‘নিরাপত্তা’।
আজকে আমাদের দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে এতই উদ্বিগ্ন যে, জনগণ তথা সমাজের সকল স্তরের মানুষকে চরম হতাশার গহ্বরে নিমজ্জিত করেছে। দেশের সকল বিভাগ ও জন প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিরাপত্তার এক গুরুতর বিপদজনক পরিস্থিতি বিরাজ কছে। জনগণের ঘুমকে হারাম করেছে প্রতিটি কর্মকান্ডের নানা স্তরে। চাকুরী-বাকুরী, অফিস-প্রশাসনে এমনকি বাজারে এবং নিরাপত্তার বসত বাড়ীতে পর্যন্ত অনিরাপত্তাজনিত চরম অবস্থা বিরাজ করছে সর্বত্র। কেন এমন হচ্ছে, বর্তমান সরকারের জন প্রশাসনে কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ কেউ এর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারছে না। একে অপরকে দোষারূপ করে এর দায়ভার অন্যের ঘারে চাপাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন এ দেশে কোন সরকার নেই। এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর কোন কার্যকরী ভূমিকা নেই। বরং জনগণের পক্ষ থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিই যেন অনেক অপকর্মের দায়ভার চাপাতে চায় বা বিভিন্ন গণফোরাম বা সংবাদ সম্মেলনে এমনই বিবৃতি প্রদান করে যাচ্ছে সুশীল মহলের কোন কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বা মানবাধিকার সংস্থাগুলো। দেশ যেন গুম, খুন, অপহরণ সহ মারাত্মক অপরাধজনিত ভয়াবহ দুর্বৃত্তদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করছে। উদ্বেগ-উৎকন্ঠা নিয়ে আজকে আমাদের দেশের জনগণ চরম অনিরাপত্তা ও অনিশ্চয়তার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ঘর থেকে বের হলে এ নিশ্চয়তা নেই যে, ঘরে ফিরতে পারবে বলে! এ হেন ভীতিকর নৈরাজ্যপূর্ণ পরিবেশের জন্য কে দায়ী! সরকার না জনগণ? এ প্রশ্ন আজ জলন্ত হয়ে প্রতিটি মানুষের জিজ্ঞাসার অন্তহীন ব্যাকুলতা ফুটে উঠছে নির্বাক চাহনীতে! কে দেবে এর উত্তর বা প্রশ্নের সমাধান! আমরা কি কোন ভুতুরে রাষ্ট্রের অধিবাসী। কেন জাতির এ অপমানজনক পরিস্থিতি এবং কারা এর উদ্ভব ঘটাচ্ছে দানবীয় কায়দায়! মানবিকতা, ন্যায়, ইনসাফ, শান্তি ও নিরাপত্তা দেশ থেকে দিনে দিনে তিরোহিত হতে চলেছে। মানবীয় সভ্যতা ও সামাজিক শৃঙ্খলা কার ইঙ্গিতে যেন এ দেশ থেকে চিরবিদায় দিতে গভীর নীল নকশা প্রণয়ন করে যাচ্ছে। আমরা কি দিনে দিনে কোন পরাশক্তির ইচ্ছের শিকলে বন্দী হতে চলেছি! অজানা আশংকার ভয়ঙ্কর বিপদের ঘ্রান যেন পাচ্ছে দেশের জনগণ। স্বাধীন জাতি হিসেবে টিকে থাকার হিম্মৎ-কিস্মৎ বজায় থাকবে কিনা জনগণের সন্দ্বিগ্ধতা যেন বেড়েই চলেছে। হালে সারাদেশে জনজীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি গভীর ভাবে উঠে এসেছে রাজনৈতিকভাবে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের ৭ জন বিশিষ্ট নাগরিকের গুম এবং খুন হওয়ার বিষয়ে জনগণ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, বিশ্ব বিবেক স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিককালে আল জাজিরার সংবাদ মাধ্যম বাংলাদেশের মানবাধিকার লংঘন এবং জন নিরাপত্তার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক অংগনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নমুনা কী এই! খোদ প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে কোন কথা বলছেন না। শুধু সাফাই গেয়ে বিরোধী দলকে দোষারূপ করে যাচ্ছেন। ভাবখানা যেন ‘কেষ্ট বেটারই যত দোষ’। হায়রে, জাতির দুর্ভাগ্য!
একটি স্বাধীন দেশের সরকারের নৈতিক দায়িত্ব হল জনগণের সর্বক্ষেত্রে নিরাপত্তা প ্রদান করা এবং যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায় তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে আমরা কী দেখছি। হত্যা, সন্ত্রাস, গুম, অপহরণ, নারী নির্যাতন সহ নানা অপরাধ এখন নিত্যকার ঘটনায় পর্যবসিত হয়েছে। এ যেন সন্ত্রাস, গুম ও খুনের অভয়ারণ্য জনপদে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে সরকারের মদদে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে এ সমস্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা যখন ঘটে তখন দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা কোন পর্যায়ে চলে যায় এটা সহজেই অনুমেয়। অথচ বর্তমান সরকারের মন্ত্রীদের যথেচ্ছাচার ও অনৈতিক নানা ধরনের কর্মকান্ডের দ্বারা সমাজ দেহকে ক্যান্সার আক্রান্তের ন্যায় জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তার বারোটা বাজিয়ে চলেছে। নৈতিক অবক্ষয় আর দুর্নীতির বেড়াজালে দেশকে অক্টোপাসের কবলে নিয়ে গেছে রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলাকে পর্যুদস্ত করে। রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের ভাষায় সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো দলমতের উর্ধ্বে থেকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নৈতিকতার মান সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করা, নতুবা দেশের প্রশাসনিক শৃঙ্খলার দুর্বলতা ও অনৈতিকতার আচরণে সমাজকে কলুষিত করবে এবং সমাজের ভিতরে নৈরাজ্য ও অনিরাপত্তাজনিত ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করবে। যা বর্তমান দেশের চিত্র সে রকমেরই দৃশ্যপট ফুটে উঠছে। অতএব বর্তমান অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা জবর দখলকারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত দেশের শান্তি ও জনগণের জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কোন ভাবেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলেই দেশের বিরোধী দল সহ নির্যাতিত জনগণ মনে করে। এ সরকার ফ্যাসিষ্ট সরকার। জনগণের বন্ধু হওয়ার পরিবর্তে শত্র“তে পরিণত হয়েছে। সন্ত্রাস নির্ভর ও পেশী শক্তির মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে আছে আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট ও নব্য এ জায়নবাদী সরকার। ভিন দেশের প্রভুদের খুশি করতেই যে সরকার পেরেশান তাদের দ্বারা দেশ জাতির কোন কল্যাণ বা জনগণের সরকারে পরিণত হওয়া আদৌ সম্ভব নয়। দেশে নতুন নতুন গড ফাদারদের সৃষ্টি করাই হচ্ছে এ সরকারের মূল দায়িত্ব এবং দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধ্বংসের কারিগর। বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের ধর্মীয় ঐতিহ্যকে মুছে দিতে নানা ধরনের অপশক্তিদের সহযোগিতায় নীল নকশা প্রণয়ন করে চলেছে। ইসলামী মূল্যবোধ জাতীয় পরিচয়ের মূলে কুঠারাঘাত করে ধর্মীয় পরিচয়ের বৈশিষ্ট্যকে ভুলুন্ঠিত করে অভ্যন্তরীন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে ভারতীয় চানক্য নীতির অনুসরণে জাতিগত দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটাতে চায়। তাদের এ সমস্ত অশুভ ও দেশ ধ্বংসের পায়তারা করে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মেরুদন্ডহীন জাতিতে পরিণত করতে চায়। এতে করে সার্বভৌম রাষ্ট্রের জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদী সংকটাবর্তের দুঃখ যন্ত্রণার অমানিশার অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। এমন বিপদ আশংকার অশনি সংকেতই যেন ভবিষ্যতের পথ চলার চিন্তায় দেশের জনগণ ভারাক্রান্ত হচ্ছে। তবুও…. আশার আলো দেখতে দোষ কী! মহান মাবুদ আমাদেরকে হেফাজত করুন। অন্ধকার নয়, আলোর প্রভাত ফুটে উঠুক রাষ্ট্রের ভালে। এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিষ্ট, সভাপতি-সিলেট কেন্দ্রীয় লেখক ফোরাম। মোবা: ০১৭১৬৮৯৫৮২২