নূর হোসেনকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের পরোয়ানা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ধরতে রেড ওয়ারেন্ট জারি করেছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল। ফ্রান্স ভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি মঙ্গলবার বিকালে তাদের ওয়ানটেড পারসনের রেড ওয়ারেন্ট পাতায় নূর হোসেনের নাম যুক্ত করে। এর আগে রেড ওয়ারেন্টভুক্ত করতে গত ২২শে মে পুলিশ সদর দপ্তরকে চিঠি দেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসন। পরে পুলিশ সদর দপ্তর রেড ওয়ারেন্টের জন্য ইন্টারপোলকে চিঠি দেয়। নূর হোসেন বর্তমানে ভারতে পালিয়ে আছে বলে নিশ্চিত হয়েছে র্যাব। ওয়ারেন্ট পাতায় নূর হোসেনের জন্মতারিখ দেয়া হয়েছে ১৯৬০ সালের ১০ই জানুয়ারি। জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জ। উচ্চতা ১ দশমিক ৬১ মিটার। ওজন ৬২ কেজি। চুল রঙিন। তার বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, গুম, অপরাধে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নূর হোসেনের বিরুদ্ধে রেড ওয়ারেন্ট ইস্যু করলো ইন্টারপোল। এর আগে পলাতক অবস্থায় ২০০৭ সালের ১২ই এপ্রিল নূর হোসেনের বিরুদ্ধে রেড ওয়ারেন্ট জারি করেছিল ইন্টারপোল। তখন ইন্টারপোলের নিজস্ব ওয়েব সাইটে নূর হোসেনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, বিস্ফোরক ও প্রাণনাশের হুমকিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয়। ২০১১ সালের মার্চে ইন্টারপোল সে ওয়ারেন্ট তুলে নেয় সরকারের অনুরোধে।
নূরের মালিকানাধীন বাস থেকে ৩টি রিভলবার উদ্ধার: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডার মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের মালিকানাধীন পরিবহনের একটি বাস থেকে তিনটি রিভলবার, ২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ও ৫ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার গর্ভীর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল টেকপাড়া এলাকায় পার্কিং করা নূর হোসেনের মালিকানাধীন এবিএস পরিবহনের একটি বাস থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়। অস্ত্রগুলো গাড়িচালকের সবার স্থানের পাশে টুলবক্সে ছিল।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলাউদ্দিন সোমবার রাত ১টায় অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়। তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ অভিযানে অনেকগুলো বাস তল্লাশি করা হয়। এর মধ্যে একটি বাসের চালকের পাশের সিটের নিচ থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
সেভেন মার্ডারের পর থেকেই সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল থেকে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চলাচল করা নূর হোসেনের মালিকানাধীন এবিএস পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরে বাসগুলো শিমরাইলের টেকপাড়া এলাকায় নূর হোসেনের বাড়ির পাশের একটি বালুর মাঠে রাখা হয়।
এর আগে গত ১৫ই মে আদালতের নির্দেশে সিদ্ধিরগঞ্জে নূর হোসেনের বাড়ি থেকে মালামাল ক্রোকের সময় ৮ রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার, শটগানের ৮ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছিল। এরও আগে উদ্ধার করা হয়েছিল বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল।
গত ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোড থেকে অপহৃত হয় নাসিক কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ ৭ জন। পরদিন ২৮শে এপ্রিল নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে অপর কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা করেন। ৩০শে এপ্রিল বিকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জন এবং ১লা মে সকালে একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে নূর হোসেন ও তার ক্যাডাররা।
আবারও শামীম ওসমানকে গ্রেপ্তারের দাবি আইনজীবীদের: নারায়ণগঞ্জে এডভোকেট চন্দন সরকারসহ আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় আদালতপাড়ায় আইনজীবীদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির ব্যানারে আদালতপাড়ায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় আইনজীবীরা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান।
গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালতে জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনের সামনে সাত খুনের ঘটনায় খুনিদের শাস্তিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানববন্ধন কর্মসূচিতে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, মামলার তদন্তের কাজ ধীরগতিতে চলছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধীর হয়ে গেছেন। তিনি আরও বলেন, র্যাবের এক কর্মকর্তা নাকি শামীম ওসমানকে বলেছেন- আমরা ফাঁসলে আপনিও ফেঁসে যাবেন। শামীম ওসমানের এ কথাটির অর্থ একটি শিশু বাচ্চাও বোঝে। হত্যাকা-ের সঙ্গে শামীম ওসমান জড়িত আছে বলেই র্যাব কর্মকর্তার এমন হুমকি। ফেনীর হত্যা ঘটনায় অভিযুক্তকে আশ্রয় দেয়ার অপরাধে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাহলে নূর হোসেনকে পালিয়ে যেতে সাহায্যকারী শামীম ওসমানকে কেন গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। আর সরকার যদি আন্তরিক হয় তাহলে হত্যাকারীদের আওতায় আনা হবে।
এ সময় বক্তব্য রাখেন জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম, আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, এডভোকেট আওলাদ হোসেন প্রমুখ।
ওদিকে আদালতপাড়ায় সম্মিলিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সাত খুনের ঘটনায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট আনিসুর রহমান দীপু বলেন, সাত খুনের মামলাটি ভিন্নদিকে প্রবাহিত করতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে জড়িয়ে নানা প্রকার বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। তিনি আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের সমালোচনা করে বলেন, তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, হত্যা ঘটনায় করা মামলার ৬ আসামির মধ্যে একজন আওয়ামী লীগের। তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হলেও অপর ৫ আসামি বিএনপির। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তাদের দল কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
৩০ দিনেও এজাহারভুক্ত কেউ গ্রেপ্তার নেই: এদিকে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও নাসিক কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজন অপহরণ ও হত্যার ৩০ দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু গ্রেপ্তার হয়নি ওই ঘটনার মূলহোতা কাউন্সিলর নূর হোসেন। এমনকি মামলার অপর ৫ আসামিও। হাইকোর্টের নির্দেশে র্যাবের সাবেক তিন কর্মর্তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে রিমান্ড নেয়ার পর পরে ওই তিন র্যাব কর্মকর্তাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। হত্যাকা-ের শিকার প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে গত ২৮শে এপ্রিল (অপহরণের পরদিন) ফতুল্লা মডেল থানায় নাসিকের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান করে ৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫-৬ জনের নামে মামলা করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলো সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়া, ঠিকাদার হাসমত আলী হাসু, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাজু, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আশিক ও ইকবাল হোসেন।
মামলার এক মাস পরও এজাহারভুক্ত কোন আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নিহত নজরুলের পরিবারসহ অন্যরা। যদিও সোমবার দুপুরে পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, মামলার যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। সেই প্রমাণ আপনারা দেখেছেন।
সূত্র মতে, ৬ আসামির মধ্যে ২৮শে এপ্রিল ইয়াসিন মিয়া সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। আমিনুল ইসলাম রাজু ঘটনার ১৫ দিন আগ থেকেই ভারতে। বাকি চারজনের মধ্যে প্রধান আসামি নূর হোসেনও ভারতে পালিয়ে গেছেন। হাসমত আলীকে গ্রেপ্তারের ঘটনা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী একবার স্বীকার করলেও পরে তাকে নিয়ে সৃষ্টি হওয়া ধূম্রজালেরও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি পুলিশের পক্ষ থেকে। অন্য দুই আসামির বিষয়েও কোন সদুত্তর মেলেনি।
শামীমের পক্ষে শহীদ চেয়ারম্যানের সাফাই: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারের সঙ্গে স্থানীয় এমপি শামীম ওসমান জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান। গতকাল ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন তিনি। এ সময় লিখিত বক্তব্যে শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, সাত খুনের মূল আসামিদের রক্ষা করতে একটি মহল মাঠে নেমেছে। তারা মামলাটিকে অন্য ধারায় প্রভাবিত করতে নানামুখি অপচেষ্টা করছে। পুরো ঘটনাটি নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা হচ্ছে। মামলাটি নিয়ে নোংরা রাজনীতির আশ্রয় নিচ্ছে। শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, শামীম ওসমান যে সাহসিকতার সঙ্গে শর্ষের ভূতের কথা বলেছেন সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে জানতে পেরেছি তাকেও থ্রেট করা হয়েছে। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নূর হোসেনের সহযোগী, মামলার অন্যতম আসামি ও সাবেক এমপি গিয়াসের ক্যাডার ইকবাল হোসেন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দু’দিন আগে নজরুলকে র্যাব ১০ দিয়ে গ্রেপ্তার করেছিল। তখন শামীম ওসমানই তাকে তদবির করে ছাড়িয়ে এনেছিল। কয়েক মাস আগে নূর হোসেন ও ইয়াসিন মিলে একটি হত্যা মামলায় নজরুলকে জড়িয়ে দিতে চেয়েছিল তখন শামীম ওসমানই নজরুলকে সেভ করেছে। এখন এই ঘটনায় শামীম ওসমানকে জড়িয়ে মামলা তদন্তের গতিপথ ভিন্নদিকে ধাবিত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি শামীম ওসমানের সঙ্গে সাত খুনের এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি নূর হোসেনের একটি ফোনালাপ প্রকাশিত হয়েছে। ওই ফোনালাপে শামীম ওসমান নূর হোসেনকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অভিযোগ উঠলেও শামীম ওসমান বলেছেন, তিনি নূর হোসেনকে আদালতে আত্মসমর্পণ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর তার অবস্থান জানার জন্য সিলের (ভিসা) কথা বলেছিলেন। এরপর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে সাত খুনের মামলায় শামীম ওসমানকে গ্রেপ্তারের দাবি ওঠে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, যারা রেকর্ড প্রকাশ করেছে তারাই এই হত্যার সাথে সম্পৃক্ত। যদি তারা জেনেই থাকলো নূর হোসেন যেদিন শামীম ওসমানের সঙ্গে কথা বলেছে সেদিন সে ধানমন্ডিতে ছিল আর আগের দিন গুলশানে ছিল, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করা হলো না কেন? পরে কেন বলা হলো নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে গেছে। শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, ফেনীর একরাম হত্যাকা-ের ঘটনায় মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে পরিকল্পনাকারী, হত্যাকারীসহ প্রায় ১০ জন আসামিকে র্যাব গ্রেপ্তার করে ফেললো আর নূর হোসেনের অবস্থান জানার পরও তাকে ধরতে পারলো না একথা দেশের কোন বোকাও বিশ্বাস করবে কিনা সেটা আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি। নিশ্চয় তারা নিজেদের রক্ষা করতে নূর হোসেনকে ভারতে পাচার করেছে, শামীম ওসমান নয়। তিনি বলেন, আমরা যখন নজরুলকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম তখন নজরুলের বন্ধু ইদ্রিস আমাকে ফোন করে বলেন, শিবু মার্কেট এলাকা থেকে নজরুলকে তুলে নিয়ে গেছে র্যাব। এ কথা শোনার পর শিবু মার্কেট এলাকায় ছুটে যাই। সেখানে দুই বালু শ্রমিক আমাদের জানায়, সকাল থেকে র্যাব-১১ লেখা দু’টি গাড়ি ওই ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়েছিল। বেলা সোয়া একটার দিকে তারা দু’টি প্রাইভেটকার থেকে বেশ কয়েকজনকে নামিয়ে র্যাব’র মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছেন। ইতিমধ্যে জনপ্রশাসনের তদন্ত কমিটির কাছে প্রত্যক্ষদর্শীরা সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলার আগেই শামীম ওসমান মিডিয়ার সামনে বলেছিলেন শর্ষের মধ্যে ভূত থাকতে পারে। নূর হোসেনের একার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়। কোন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। শামীম ওসমানের মতো আমিও সাহস করে বলেছিলাম এই কাজ করা হয়েছে। সাংবাদিক ভাইদের অনুসন্ধান আর সরকারের পদক্ষেপে আমাদের দু’জনের কথাই সঠিক হয়েছে। এর প্রমাণ, ঘটনার পরপরই র্যাব’র অভিযুক্তদের প্রত্যাহার করে নেয়া এবং মাননীয় হাইকোর্টের নির্দেশে এই অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা। এছাড়াও ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়ার পর পুলিশ অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েই তাদের হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে এবং আবারও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, নূর হোসেনের সঙ্গে শামীম ওসমানের কথা বলা যদি অপরাধ হয় তবে তার ব্যাখ্যা শামীম ওসমান দিবেন কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো- এই ফোন আলাপ নিয়ে এত তোলপাড় শুরু হলো কিন্তু আমরা নূর হোসেনের সঙ্গে মেয়র আইভীর ঘনিষ্ঠ লোক ও সিটি কর্পোরেশনের অঘোষিত মেয়র ঠিকাদার আবু সুফিয়ান, বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ী চান মিয়া, কিলার সেলিম, নূর হোসেনের বডিগার্ড হাসানের কথাবার্তার রেকর্ড প্রকাশ করলাম সেটা নিয়ে সবাই নীরবতা পালন করছেন কেন? ওই রেকর্ডে প্রকাশ্যে বলা হচ্ছিল, নিজে বাঁচতে হলে দুই-একটাকে মেরে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে মাথা খেয়ে ফেলবো। ভিক্ষুক মারলেও ৩০২, শামীম ওসমানকে মারলেও ৩০২ আর শেখ হাসিনাকে মারলেও ৩০২। অথচ এখন পর্যন্ত আবু সুফিয়ান বা তার সাথের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না কেন? তাহলে কি এরাই ছিল পরিকল্পনকারী এবং অর্থের যোগানদাতা। এদেরকে কি সেই মহলই রক্ষা করছে। যদি ঐ রেকর্ডে শামীম ওসমান এসব কথা বলতেন তবে কি সকলে নিশ্চুপ হয়ে থাকতো? তাছাড়া যে ফোন আলাপের রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে সেখানেও নূর হোসেন বলছিল সে শামীম ওসমানের কথা শোনেনি, সে অনেক ভুল করেছে।
লিখিত বক্তব্যের একাংশে শহীদ চেয়ারম্যান কিছু মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন চ্যানেলের টক শো’তে নারায়ণগঞ্জের ঘটনা নিয়ে এমন কোন মন্তব্য করা উচিত নয়, যাতে মামলার তদন্তটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত না হয়। শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, এক পত্রিকাকে রাব্বি সাহেব বলেছেন, নজরুলসহ সাত অপহরণের ঘটনা র্যাব করেছে কিনা তিনি নাকি জানেন না। নারায়ণগঞ্জের কেউ ভাঙা রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেন। অথচ, প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষ্য দিচ্ছেন, পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে আর উনি জানেন না কে করেছে। উনিও শুধু শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে বলছেন। এখন বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছি যে, অভিযুক্ত এমএম রানা যখন নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের ইনচার্জ ছিল তখন রাব্বির বাসায় তাদের কয়েকজনের আড্ডা বসতো বলে যে প্রচার রয়েছে তা সত্য। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়া শেষে শহীদ চেয়রম্যান দ্রুত উঠে যান। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান। কোন প্রশ্নেরই উত্তর দেননি তিনি।