কানাইঘাটে ৯ বছরের শিশু ইমরানের খুনীদের বিচার চেয়ে অজোরে কাদলেন মা : কাঁদালেন

Picture 01কানাইঘাট প্রতিনিধি: কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির বড়কেওড় গ্রামের হতদরিদ্র বিধবা মহিলা রমিজা বেগম তার ৯বছরের নিষ্পাপ শিশু সন্তান ইমরান আহমদের নির্মম হত্যা কান্ডের আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করার পরও কোন বিচার না পেয়ে অজোরে কাদঁলেন। আর কাদাঁলেন উপস্থিত সবাইকে। ১মাস পূর্বে মামলা দায়ের করার পরও সন্তান হত্যার বিচার না পেয়ে অসহায় রমিজা বেগম ও তার স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশিরা গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় কর্মরত সাংবাদিকদের শরণাপন্ন হয়ে শিশু ইমরান হত্যার বিচার চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এসময় চোখের সামনে ছেলের নির্মম হত্যা কান্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে মা রমিজা বেগম বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন। রমিজা বেগম জানান, তার স্বামী ইসাদ আলী প্রায় ৯ বছর পূর্বে বজ্রপাতে মারা যান। এরপর থেকে প্রতিবন্ধী ১০ বছরের সন্তান কামরান (১০), ছোট ছেলে ইমরান (০৯) এর মুখে দু’মুঠো খাবার জুটাতে মানুষের বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে ঝিয়ের কাজসহ অন্যান্য কাজ করে কোন রকমে জীবন যাপন করছেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রমিজা বেগম বলেন, গত ৩০মার্চ ছোট ছেলে ৩য় শ্রেণির ছাত্র ইমরানকে সাথে নিয়ে বেলা দেড়টায় কাজের উদ্দেশ্যে নারাইনপুর গ্রামের রফিক উদ্দিন চৌধুরীর বাড়ীতে যান। রফিক চৌধুরীর বাড়ীতে মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক একই গ্রামের মাহমদ আলীর পুত্র মোহাম্মদ আলী ও মৃত নিছার আলীর পুত্র রইছ আলী গংরা আমাকে মাটি কাটার কাজে সহযোগিতা করার জন্য বলেন। আমি মাটি কাটার কাজ শুরু করলে আমার ছেলে ইমরান না বুঝে মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত এক শ্রমিকের রক্ষিত কাপড় ও ব্যবহৃত জিনিসে হাত দিলে মাটি কাটার সাথে জড়িত শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে আমার ছেলেকে ধরতে যায়। এসময় মোহাম্মদ আলী একটি লোহার সাবল দিয়ে আমার ছেলের মাথায় স্বজোরে আঘাত করলে মাথার মগজ বের হয়ে কান-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে তাকে। একপর্যায়ে শ্রমিক রইছ আলী ও আলেক আহমদ রুল দিয়ে ইমরানকে এলোপাতাড়ি পিঠিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তখন আমার চোখের সামনে ছেলের উপর এমন বর্বর দৃশ্য দেখে আমি অজ্ঞান হয়ে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়ি। রমিজা বেগমের সাথে আসা হত্যাকান্ডের প্রত্যেক্ষদর্শীরা সাংবাদিকদের জানান, একপর্যায়ে হত্যাকারীরা শিশু ইমরানকে মাটি চাপা দিয়ে লাশ গুম করার চেষ্টা করলে তারা এগিয়ে এসে শিশু ইমরানকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় মমতাজগঞ্জ বাজারে পল্লী চিকিৎসক মারুফ আহমদের ফার্মেসীতে নিয়ে আসেন। তখন মারুফ আহমেদ ইমরানকে মৃত ঘোষনা করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওমেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু হত্যাকারী ও তাদের সহযোগীরা ময়না তদন্তে পাটাতে বাধা প্রদান করে। হত্যাকারীদের স্বজন প্রভাবশালী ফারুক আহমেদ উপস্থিত সবাইকে জানান, আমি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছি। থানায় এজাহার করিতেছি। এরকম কূট-কৌশল অবলম্বন করে ফারুক আহমেদ আসামী ও তাদের আত্মীস্বজনদের দিয়ে নিহত ইমরানের লাশ তড়িঘড়ি করে দাফন করায়। লাশ দাফন করার সময় নিহত ইমরানের পরিবার ও আত্মীয় স্বজন কেহ উপস্থিত ছিলেন না। পর দিন ১লা এপ্রিল নিহত ইমরানের দাদী তৈয়বী বিবি ও চাচী হয়জুন নেছা কানাইঘাট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করিতে চাইলে প্রভাবশালী ফারুক ও জনৈক ওয়ারলেছ মাষ্টার হত্যাকারীদের প্ররোচনায় ভয়ভীতি দেখাইয়া অভিযোগ দিতে বাধা প্রদান করেন। এরপর গত ৩ এপ্রিল নিহতের চাচা মশাইদ আলী জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে ইমরানের হত্যাকারী এবং লাশ দাফনের সাথে জড়িত নারাইনপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী (১৯), রইছ আলী (৫৫), আলেক আহমদ (২৭), শিল্পী বেগম (৩৪), আছিয়া বেগম (৫২), মাহমদ আলী (৩৮), আহমদ আলী (১৬), হবিব আহমদ, ছোটফৌদ গ্রামের ফারুক আহমদ (৪০), কেওটি হাওর গ্রামের আলা উদ্দিন (৪৮), মিকিরপাড়া গ্রামের সিরাজ উদ্দিন (২৫)সহ ১১জনকে আসামী করে একটি অভিযোগ দেন। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে কানাইঘাট থানার এসআই কামাল হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলে উক্ত হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী, স্বাক্ষীসহ এলাকার শতাধিক লোকজন শিশু ইমরানের লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেন। পরে এস.আই কামাল মামলার বাদী মুশাহীদ আলী ও নিহত ইমরানের স্বজনদের থানায় ডেকে এনে বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তির পরামর্শ দেন। এতে করে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতরা ইমরানের অসহায় পরিবার ও তার স্বজনদের নানাভাবে হুমকি ধমকি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন শুরে করে। অসহায় বিধবা রমিজা বেগম সন্তান হত্যার সুষ্ঠু বিচার না পেয়ে গত ২২এপ্রিল সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কানাইঘাট আদালতে বাদী হয়ে উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সমূহ অভিযোগ এনে একটি হত্যা মামলার দরখাস্ত করেন। বিজ্ঞ আদালত তদন্ত পূর্বক আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল চৌধুরীকে নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের অভিযোগ পেয়ে থানার ওসি (তদন্ত) বজলার রহমান গত ১৯মে পুণরায় হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গেলে মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে ইমরান হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়ে স্বাক্ষ্য দেন এলাকার শতাধিক নারী পুরুষ। স্বাক্ষ্য দেন মামলার স্বাক্ষীরাও। তদন্তের সময় পুলিশ হত্যাকান্ডের সাথে ব্যবহৃত লোহার ১টি সাবল মামলার ১নং আসামী মোহাম্মদ আলীর ঘর থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। উপস্থিত সবাই আরো জানান, ইমরানের অসহায় স্বজন ও এলাকার লোকজন আদালতে দরখাস্ত মামলাটি এফআইআর করে আসামীদের গ্রেফতার করার জন্য ওসি তদন্ত বজলার রহমানের সাথে যোগাযোগ করলেও তিনি তাদের পুণরায় তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। ইমরানের মা রমিজা বেগম, চাচী হয়জুন নেছা, চাচা মুশাহীদ আলী, মনোহর আলী, নুরুল ইসলাম, ফখর উদ্দিনসহ উপস্থিত লোকজন কান্নাজড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে মামলা দায়েরের ১মাস পেরিয়ে গেলেও এ ব্যাপারে আসামীদের বিরুদ্ধে কোনধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় খুনীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হুমকি দিয়ে বলেছে কাজের মেয়ের বেটাকে মেরেছি, এবার তোদের ও মারব। টাকা হলে সবকিছু হয়। ইমরানের মা রমিজা বেগম ছেলের নির্মম হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়ে বার বার মুর্চা গিয়ে বলেন, ৯ বছর আগে স্বামী বজ্রপাতে মারা গেছেন। স্বামী মারা যাওয়ার তিনদিন পর আমার ইমরানের জন্ম হয়। সে বাপের মুখ দেখতে পারে নি। সেই বাঁছাধনকে আমার চোখের সামনে হত্যা করা হয়েছে। খুনীদের বিচার না হলে সেই কষ্ট কীভাবে সহ্য করব। গরীব বলে কী, কোথাও গিয়ে বিচার পাবনা। প্রকাশ্যে আমার আদরের ধনকে মামলার আসামীরা হত্যা করেছে। জোরপূর্বক লাশ দাফনও করেছে। আমি আল্লাহর কাছে এর বিচার চাই। প্রধান মন্ত্রী আমার ছেলের খুনীদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিবেন। খুনীদের বিচার হলে আমার ইমরানের আত্মা শান্তি পাবে। এব্যাপারে থানার ওসি (তদন্ত) বজলার রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শিশু ইমরান হত্যাকান্ডের ব্যাপারে আদালতে দায়েরকৃত অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্ত পূর্বক আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।