দূর্ণীতির মহোৎসব ঘটিয়ে বিদায় নিয়েছেন এমসি কলেজ অধ্যক্ষ

সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজ সিলেটের অধ্যক্ষের পদটি শুরু থেকেই যুগে যুগে সুনামধন্য প্রাজ্ঞ ও উচু মানের ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন পন্ডিত ব্যক্তিরাই অলংকিত করে আসছেন। তাদেরকে এমসি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা অত্যান্ত শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন। আশা যাওয়ার এই পালা বদলে কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর ধীরেশ চন্দ্র সরকার প্রভাষক হিসাবে অত্র কলেজে যোগদান করে ৩০ বছর অতিক্রম করার পর অধ্যক্ষ পদের দায়িত্ব গ্রহন কালীন সময়ে শিক্ষার্থী সহ সর্বস্তরের মানুষের কলেজের উন্নয়ন শিক্ষার মানবৃদ্ধি ও ঐতিহ্য কে আরো সমৃদ্ধশালী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হলেও বাস্তবে দেখা যায় এর উল্টো চিত্র। তার কর্ম জীবনের ৩৩ বছর এমসি কলেজে অতিক্রম লগ্নে এমসি কলেজে দেখা যায় বিভিন্ন অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির মহোৎসব। এরপর অবসর গ্রহনের সুবাদে কলেজ থেকে তার বিদায়ী ঘন্টা বাজলো আজ। অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব কালীন সময়ে তার যে সব কর্মকান্ড শিক্ষার্থী অভিভাবক সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে ব্যথিত করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হল তিনি কলেজের প্রাক্তন কৃতি ছাত্র এম সাইফুর রহমানের নামটি কলেজের একাডেমিক ভবন থেকে মুছে ফেলেন। পরে স্থানীয় পত্রিকায় এই নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে নামটি পূর্ণবহাল করতে বাধ্য হন। তিনি দায়িত্ব থাকা কালীন সময়ে কলেজের নিরাপত্তা বিঘিœত হয়। যার প্রেক্ষিতে ভূটানী বিভাগ, অফিস এবং ঐতিহ্যবাহী কলেজের সেই পুরনো আমলের ঘন্টাটি সহ একাধিক বার চুরি সংগঠিত হয়। কলেজের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করার বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে কলেজে ভর্তি হলেও অধ্যক্ষ সহ বিভিন্ন শিক্ষকের প্রাইভেট পড়ানোর ব্যস্ততায় তাদের সেই স্বপ্নটি মরিচিকায় পরিনত হয়। কেননা অধ্যক্ষ হিসাবে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ক্লাস মুখী করতে পারেন নাই। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসেন অধ্যক্ষ প্রফেসর ধীরেশ চন্দ্র সরকার। কলেজের ছাত্রাবাসে অগ্নিকান্ডের আগের দিন দৈনিক জাতীয় পত্রিকায় ছাত্রাবাসের অস্থিতিশীল অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও অধ্যক্ষ কোন উদ্যোগ গ্রহন করেননি। তিনি ছিলেন সম্পন্ন নিষ্ক্রিয়। আগুন দেওয়ার ঘটনা জেনেও ঐ মুহূর্তে সম্পন্ন উদাসীন ছিলেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। অগ্নিকান্ডের সময় গণিতের প্রাইভেটের ব্যাচ পড়ানো নিয়ে ধোপাদিঘির উওর পাড়স্থ বাড়া বাসায় ব্যস্ত ছিলেন বলে তিনি নিজেই সাংবাদিকদেরকে অবগত করেন। আগুন দেওয়ার ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষের দেওয়া তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে লুকোচুরি করেন অধ্যক্ষ। এছাড়াও কলেজ ম্যাগাজিন খাতে প্রতি বৎসর ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা স্বত্তেও গত ৭ বছরে এমসি কলেজ থেকে কোন ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়নি। ২০১৩ সালের ফেব্র“য়ারী মাসে ছাত্র-ছাত্রী থেকে লেখা জমা নেওয়া স্বত্তেও কোন বই না কিনে বরাদ্দকৃত অর্থ আতœসাৎ করার অভিযোগ উঠে। সরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্যে প্রণীত সরকারি পরিপত্রকে সম্পন্ন অগ্রাহ্য করে রাজনৈতিক পরিচিত কয়েক শিক্ষক কে নিয়ে নিয়ম বহির্ভূত ও অবৈধ ভাবে ভর্তি কার্যক্রম উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের থেকে অর্থ আদায় করা হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। ২য় বর্ষের ফরম পূরণ কার্যক্রমে ইনকোর্স পরীক্ষার নামে আদায় করা হয় অতিরিক্ত অর্থ। সম্প্রতি কলেজের আইসিটি বিভাগের মাস্টার্স শেষ পর্বের ফরম পূরণ কার্যক্রমে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের কারনে শিক্ষার্থীরা দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন অনলাইন প্রসেসিং ফি ও নিয়ম বহির্ভূত ফি ও বেতন খ্যাতে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে মহাসড়ক অবরোধ সহ বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনের প্রেক্ষিতে অবৈধ অর্থ আদায়ের দাবিটি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন কলেজ অধ্যক্ষ। কলেজের বিভিন্ন দিবস উদযাপনের অযুহাতে এবং বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার নামে যথেষ্ট আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। তাছাড়া র্দীঘ দিনের লালিত পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠানটিতে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আনন্দ ঘন পরিবেশ থেকে বঞ্চিত রেখেও খরচের পাল্লা ভারি রাখার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও বিভিন্ন সময়ের অর্থ আতœসাৎ প্রেক্ষিতে সরকারের অডিট কার্যক্রমেও অধ্যক্ষের গুরুতর আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। কলেজের একাডেমিক অবনতি ও অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতায় এবং চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ায় শিক্ষকগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষক পরিষদে। কলেজ থেকে একচেটিয়াভাবে অর্থ আদায়ের কৌশল হিসাবে ছাত্র সংগঠনকে নিষ্ক্রিয় করার মানসে অপ-প্রয়াসের আশ্্রয় গ্রহন করেন। তারই প্রেক্ষিতে কলেজের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে জেলা ছাত্রলীগের বহি®কৃত সভাপতি পঙ্কজ পুরকায়স্থ দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে দেন এবং পঙ্কজ পুরকায়স্থ সাংগঠনিক পদটি হারান। তিনি এককভাবে আর্থিক সুবিধা ভোগ করেন। তাই এই অনিয়ম বহির্ভূত কর্ম-কান্ডের স্বাক্ষী না রাখার মানসে তৎকালীন উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আল হেলাল ভূঁইয়ার সাথেও বিরোধের সৃষ্টি করেন। এবং তাকে এমসি কলেজ থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্যে কৌশল অবলম্বন করেন। তাছাড়া অধ্যক্ষের অনিয়ম দূর্ণীতি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও তিনি সংযত হননি বিদায় শব্দটি অনাকাঙ্কিত, হুদয়, বিদারক এবং রুঢ় শোনালেও প্রফেসর ধীরেশ চন্দ্র সরকারের বিদায়ের চিত্রটি যেন ভিন্ন রূপ ধারন করেছে। এমসি কলেজের মত ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠের ঐতিহ্য গগন থেকে যেন কালো মেঘের ঘন-ঘটা দূরীভূত হতে চলছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মানস পঠে।