মাধবপুরে ট্রাক-মাইক্রো সংঘর্ষে নিহত ৩ : বিয়ানীবাজারে শোকের ছায়া

Street Accidentসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আন্দিউড়া উম্মতুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সোমবার ভোর ৬ টায় মাইক্রোবাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক স্কুল ছাত্রসহ ৩ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ৬ জনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের দুইজন সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরশহরের ফতেহপুর গ্রামে বাসিন্দা। ওই গ্রামের এক তরুণ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
এলাকাবাসী ও প্রত্যদর্শী সুত্রে জানা যায়, ওইদিন সকালে কুমিল্লা থেকে শায়েস্তাগঞ্জগামী মাছ ভর্তি মিনি ট্রাক (কুমিল্লা – ম- ৫১-০০৩৪) উল্লেখিত স্থানে পৌছলে বিপরিত দিক থেকে আসা একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো -চ -১৪ -১৯২৫) এর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ফতেহপুর গ্রামের সোনামুদ্দিন এর ছেলে রুবেল আহম্মেদ (২২) এবং কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার অনন্তপুর গ্রামের খলিল মুন্সির ছেলে রুহুল আমীন (১৪) মারা যান। অপরজন বিয়ানীবাজারে ফতেহপুর গ্রামের পংকী মিয়ার ছেলে এমরান হোসেন রাহেল (২৪) কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথে মারা যান।
গুরুতর আহতরা হলেন রিহাদ (১৪), শিহাম (২৩), মোস্তফা (৩০), অজ্ঞাত (২৮), বাশার(১৬), বাছির (৪০)।- তাদেরকে বি.বাড়ীয়া সদর সহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার এসআই কামাল হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
বিয়ানীবাজার পৌরশহরে শোকের ছায়া : এ দিকে, বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি জানান, বিয়ানীবাজার পৌরশহরের ফতেহপুর গ্রামে তিন বন্ধু রুবেল, রাহেল ও জাবেদ ইউরোপে যাবার উদ্দেশ্যে গত রবিবার রাতে বাড়ি থেকে বের হয়। ভোর হতে না হতেই গতকাল সোমবার সকাল সাতটার দিকে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগদিসপুর এলাকায় মাইক্রোবাসের সাথে কাভার্ড ভ্যানের মুখামোখি সংঘর্ষে রুবেল (২৪) ও রাহেল (২৩) মারা যায় এবং জাবেদ’র নিখোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ দুর্ঘটনায় খবর দুপুরে বিয়ানীবাজারে পৌছালে ফতেহপুর গ্রামসহ পুরো শহরের মানুষ শোকাহত হয়ে পড়েন।
তিন বন্ধুকে বহনকারি মাইক্রোবাসের (ঢাকা মেট্রো ১৪-১৯২৫) সাথে মাছ বোঝাই কার্ভাড ভ্যানের মুখামোখি এ সংঘর্ষে ভ্যান চালকও (নাম জানা যায়নি) নিহত হয়েছেন। আহত মাইক্রোবাস চালক সালেহ আহমদ (২৬) কে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশংকাজনক। নিহত এমরান হোসেন রাহেল ও রুবেল আহমদের মরদেহ গতকাল সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে পৌছায়। রাত নয়টায় বিয়ানীবাজার পিএইচজি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিহতদের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
সন্ধ্যার একটু আগে রুবেলের মরদেহ বাড়ি পৌছালে হৃদয়বিধারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। ঝাপিয়ে পড়ে আমার পুত্র বেঁচে আছে বলে চিৎকার করেন রুবেলের মা আমেনা বেগম। ছেলে মারা গেছে শুনে রুবেলের মা দিনের মধ্যে অনেকবার মুর্ছা গেছেন। জ্ঞান ফিরে এলে জানতে চান রুবেলের লাশ এসেছে কী না। একথা জানান রুবেল পিতা সুনাম উদ্দিন। তিনিও ছেলের মৃত্যুশোক সইতে পারছেন না। তাঁর ভাই-বোন স্বজনরাও শোকে কাতর। কেউই সান্তনা দেবার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। সাতটার দিকে বাড়ি এসে পৌছায় রাহেরের মরদেহ। ফতেহপুর গ্রামের পংকি মিয়ার পুত্র।
নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ইউরোপের দেশ বেলারুশের যাবার জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে রবিবার রাত তিনটার দিকে বাড়ি থেকে মাইক্রোবাসে করে তিন বন্ধু জাবেদ, রুবেল ও রাহেল রওয়ানা দেয়। হবিগঞ্জের মাধবপুর যাবার পর তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় পড়ে। ঘটনাস্থলে রুবেল এবং মাধবপুর হাসপাতালে নেয়ার পর রাহেল মারা যায়।
তবে জাবেদ আহমদকে কোথায়ও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হাইওয়ে পুলিশের উদ্ধারকৃত মরদেহের মধ্যে জাবেদকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি সারা দিন স্বচল ছিল। ফোনে এক ব্যক্তি কথা বললেও কোন পরিচয় দিচ্ছে না। রাত সাতটার দিকে মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।