দ্বিধা বিভক্ত সিলেটে জাতীয় পার্টি
এন.এইচ.শিপুঃ থেমে গেছে সিলেট জাতীয় পার্টির সকল কার্যক্রম। জেলা ও মহানগর জাপার সকল কার্যক্রম স্তবির থাকায় সাংগঠনিক কাজে অলস সময় পাড় করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। দলের কেন্দ্রীয় সিলেটের নেতাদেরও একই অবস্থা। অনেকেই রয়েছেন দল থেকে বিচ্ছিন্ন। কেউ আবার আখের গোছাতে ছুটছেন দলীয় এমপিদের কাছে। কার্যক্রম বিহীন চলছে বর্তমান সংসদের বিরোধী দলটি। এদিকে দলের একটি অংশ ভিড়ছেন কাজী জাফর আহমদের জাতীয় পার্টিতে। সম্প্রতি এরশাদের আস্তাভাজন হিসেবে পরিচিত দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিকও চলে গেছেন এরশাদকে ছেড়ে। সিলেট থেকে দলের বড় একটি অংশ আনুষ্টানিকভাবে যোগ দেবেন কাজী জাফরের জাতীয় পার্টিতে-এমন তথ্য দলীয় নেতাদের। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সিলেটে দলটির ভাঙন ধরে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছিল সিলেট জাতীয় পার্টিতে। ওই সময় নিরব থাকা সিলেটের জাপা নেতারা উজ্জীবিত হয়ে উঠেন। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকায় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মহাজোট ত্যাগ করার ঘোষণা দেয়ায় উজ্জীবিত হন জাপার তৃণমূল কর্মীরাও। একই সাথে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে জাপার সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরাও সরব হয়ে উঠেন। সিলেটের ১৯ আসনের মধ্যে জাপা ৬ টি আসনে তাদের দল থেকে প্রার্থী ঠিক করে রাখে। এর মধ্যেও ছিল নানা সংশয়-শঙ্কা। কিন্তু নির্বাচনের কিছু দিন আগে জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় রাজধানীর সামরিক হাসপাতালে। তবে, এরশাদকে আটক করা হয়েছে দাবি জানিয়ে সিলেটে পৃথক মিছিল, মিটিং আর স্বরকলিপি দেওয়া হয় সংশ্লিষ্টদের কাছে। এরই মধ্যে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন। সিলেটের নেতাকর্মীরা মনোনয়ন জমা দেন জাপার ব্যানারে। জাপার কিছু কেন্দ্রীয় নেতা সিলেটে মনোনয়ন জমাকারিদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের কথা বলেন। তারা বরাতদেন খোদ জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের। ওই সংবাদে অনেকে নির্বাচনের আগে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। নির্বাচনে অংশ নেন রওশন এরশাদ পন্থিরা। আর এরশাদ অনুসারিরা নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান। এরপর থেকে সিলেট জাপায় বন্ধ হয়ে যায় দলের রাজনৈতিক সকল কার্যক্রম। এরশাদপন্থি কেন্দ্রীয় জাপার ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লা সিদ্দিকী দলের কোন কার্যক্রমে দেখা যাচ্ছেনা দীর্ঘ দিন থেকে।
জেলা জাপার পুর্নাঙ্গ কমিটি থাকলেও নেই কোন কর্মসূচি। তারা দলের পক্ষ থেকে কোন মিটিং, সভা-সমাবেশ করেননি দীর্ঘদিন থেকে। দীর্ঘদিন আগে ঘোষিত মহানগর জাপার আহবায়ক কমিটি আজও পুর্নাঙ্গ কমিটিতে রূপ নেয়নি। আহবায়ক কমিটির নেতারা দলের কোন কার্যক্রমে নেই। বিরোধী দল হলেও সরকারের আলোচনা বা সমালোচনায়ও তারা নেই। জেলা ও মহানগর জাপার আহবায়ক কমিটির আহবায়ক-যুগ্ম আহবায়করা কেউ রয়েছেন আইন পেশায় ব্যস্ত আর কেউবা ব্যবসা-বানিজ্য নিয়ে। শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ নেই তৃণমূল নেতাদের। আর সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় জাপার যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া ও সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় জাপার যুগ্ম-মহাসচিব ও সিলেট জেলা সভাপতি সেলিম উদ্দিনের আচল ধরে আছেন অনেক নেতা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রবাসী ওই দুই জাপা নেতা সাংসদ হওয়ার পর দল থেকে বিচ্ছিন্ন, অন্য দলের নেতাসহ অনেকেই তাদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেন।
সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় জাপার যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী বলেন, নির্বাচিত এমপিরা নিজ এলাকায় কাজ করছেন। আর বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে কাজ করছে জেলা কমিটি। তিনি বলেন, নিয়মিত আমার নির্বাচনি এলাকায় বিভিন্ন দল থেকে জাপায় নেতাকর্মিরা যোগদান করছেন। বতৃমানে সিলেট জাপা আগের চেয়ে এগিয়ে গেছে।
দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লা সিদ্দিকী সবুজ সিলেটকে জানান, সিলেটে দলের কার্যক্রম স্থবির হওয়ার মূল কারন হচ্ছে চলমান রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি যে ভূমিকা রেখেছে তার প্রভাবে দলের এই নিরবতা। তিনি দলকে সক্রিয় করা বিষয়ে বলেন, আমাদের পাওয়ার এপ্লাই করার কিছু নেই। দলকে চাঙ্গা করতে হলে জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মিরা আরো বেশি উদ্দ্যেগ নিতে হবে, দলকে এগিয়ে নিতে আমার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
তবে দলটির সিলেট জেলার সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আবুল কাশেম মন্টু সবুজ সিলেটের সাথে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, তিনি জানান, সিলেটে জাপার কার্যক্রম চলছেনা বিষটি সঠিক নয়। জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা জাপার পক্ষ থেকে মেয়াদ উর্ত্তীন সকল ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। দলকে আরো সংগঠিত করতে পর্যায়ক্রমে সকল কমিটি গঠন করা হবে। বিশ্বনাথ উপজেলার আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।