রিজওয়ানার স্বামী অপহরণে ‘সন্দেহের তীর’ যাদের দিকে (ভিডিও)

rezwana-cryসুরমা টাইমস ডেস্কঃ দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন মহল যখন উদ্বেগ প্রকাশ করছে, ঠিক সেই সময়ে ঘটে গেল আরেকটি হাই প্রোফাইল অপহরণের ঘটনা। বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের ভূঁইয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক অপহূত হয়েছেন।

আবু বকর সিদ্দিক লিটু অপহরণের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের নির্দেশে এই কমিটি গঠন করা হয়।

রিজওয়ানা হাসান এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেছেন। ঘটনার পরে বিমর্ষ রিজওয়ানা তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় এবং মামলার অভিযোগপত্রে কিছু প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী এবং ব্যক্তির দিকে সন্দেহের তীর ছুড়ে দেন। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যম বিভিন্ন সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের সংকলিত অংশ প্রিয়.কম পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হলো।

প্রথম আলো
# রিজওয়ানা হাসান অভিযোগ করেন, পেশাগত কারণে তাঁর নিজের প্রতি ক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে তাঁর স্বামীকে অপহরণ করেছে।

# অপহূত আবু বকর ফতুল্লা পোস্ট অফিস মোড়ে অবস্থিত রপ্তানিমুখী হামিদ ফ্যাশন লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক। প্রতিষ্ঠানটির মালিক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। জাতীয় শ্রমিক লীগ ফতুল্লা আঞ্চলিক শাখার সভাপতি কাউসার আহমেদ পলাশের নেতৃত্বে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে প্রতিষ্ঠানটি কয়েক বছর বন্ধ ছিল। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কারখানাটি পরিচালনার দায়িত্ব নেন আবু বকর।

# রিজওয়ানা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, পেশাগত কাজের কারণে বসুন্ধরা গ্রুপ, মধুমতি মডেল টাউন, আশিয়ান সিটি, শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ রয়েছে। এদের কেউ পরিকল্পিতভাবে তাঁর স্বামীকে অপহরণ করতে পারে।

# রিজওয়ানা হাসান জেলা পুলিশ সুপারকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা নারায়ণগঞ্জের টর্চার সেলগুলোতে অভিযান চালালে হয়তো তাঁর খবর পাওয়া যেতে পারে।’ জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘ম্যাডাম, আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলগুলো র্যাব বন্ধ করে দিয়েছে।’

সমকাল
# রিজওয়ানা বলেছেন, এমন ভালো মানুষের কোনো শত্রু থাকতে পারে, তা কল্পনাও করতে পারি না। তবে আমার প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে বসুন্ধরা, মধুমতি, আশিয়ান এবং চট্টগ্রামের শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ অনেকেই ক্ষুব্ধ ছিল।

# ঘটনা সম্পর্কে অপহৃত আবুবকর সিদ্দিকের গাড়িচালক মো. রিপন বলেন, মাইক্রোবাস থেকে ৭-৮ জন নেমে আসে। যাদের মধ্যে ২ জনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ওই সময় স্যার গাড়ি থেকে নেমে ধাক্কা দেওয়ার কারণ জানতে মাইক্রোবাসের দিকে অগ্রসর হন। তখন মাইক্রোবাস থেকে ২ জন তার (চালক রিপনের) চোখে কিছু একটা ছিটিয়ে দেয়। এতে তার চোখ জ্বালাপোড়া করতে শুরু করে। তখন তিনি দেখতে পান মাইক্রোবাসের লোকজন স্যারকে মাইক্রোবাসে জোর করে তুলে নিয়ে সাইনবোর্ডের দিকে চলে যাচ্ছে। অপহরণকারীরা টি-শার্ট পরা ছিল। তাদের মাথার চুলও ছোট করে ছাঁটা।

# রিজওয়ানা হাসান জানান, নারায়ণগঞ্জে বড় ব্যবসা রয়েছে এমন ২টি প্রভাবশালী হাউজিং কোম্পানি তার পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনের কারণে ক্ষুব্ধ। নারায়ণগঞ্জের একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সঙ্গে হাউজিং কোম্পানিগুলোর সুসম্পর্কের কথা সবার জানা। মূলত এই পরিবারের তত্ত্বাবধানেই হাউজিং কোম্পানিগুলো এখানে ব্যবসা পরিচালনা করছে।

কালের কন্ঠ
# গাড়িচালক রিপন সাংবাদিকদের জানান, ‘আমাদের পেছন থেকে ওই হাইয়েস গাড়ি ইচ্ছে করেই ধাক্কা দেয়। আমি গাড়ি থামানোর সঙ্গে সঙ্গেই ওই গাড়ি থেকে সাত থেকে আট যুবক অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে নিচে নামে। তারা আমার চোখে-মুখে কিছু একটা ছিটিয়ে দিলে চোখে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এ অবস্থায় তারা আমার মুখে পিস্তলজাতীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে স্যারকে টেনে ওই গাড়িতে তুলে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। অস্ত্রধারী ওই ব্যক্তিদের চুল ছোট ও পরনে টি-শার্ট ছিল। ‘আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান’ বলে স্যার চিৎকার করলেও অস্ত্রধারীদের ভয়ে আশপাশের কেউ সামনে আসার সাহস করেনি।

# আবু বকর সিদ্দিকের ভাগ্নে ফয়সাল আসলাম রনি জানান, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর মালিকানাধীন হামিদ ফ্যাশন এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভাড়া নিয়েছেন তাঁর মামা। প্রায় এক হাজার শ্রমিক কর্মরত গার্মেন্টটিতে। এখানে কোনো ধরনের শ্রমিক অসন্তোষ নেই।

# রিজওয়ানা বলেন, ‘আমাদের এমন কোনো অর্থবিত্ত নেই যে কেউ মুক্তিপণের জন্য তাঁকে অপহরণ করবে। আমার ধারণা, আমার পেশাগত কারণে ক্ষুব্ধ কোনো গোষ্ঠী তাঁকে অপহরণ করতে পারে।’

নয়া দিগন্ত
# রিজওয়ানা বলেন, আমাদের এমন কোনো অর্থবিত্তও নেই যে, কেউ মুক্তিপণের জন্য তাকে অপহরণ করবে। আমার ধারণা, আমার পেশাগত কারণে ক্ষুব্ধ কোনো গোষ্ঠী আবুবকরকে অপহরণ করতে পারে।’

# আবুবকরের গাড়িচালক রিপন জানান, নীল রঙের মাইক্রোবাসে করে সাত-আটজন অস্ত্রধারী আবুবকর সিদ্দিককে অস্ত্রের মুখে নিয়ে যায়। ওই অস্ত্রধারীদের চুল ছোট ও পরনে টি-শার্ট ছিল। ‘আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান’ বলে আবুবকর চিৎকার করলেও অস্ত্রধারীদের ভয়ে কেউ সামনে এগোনোর সাহস করেনি।

# রিজওয়ানা বলেন, আমার পেশাগত কর্মকাণ্ডে বসুন্ধরা, মধুমতি, আশিয়ান, শিপ ব্রেকারসহ কিছু ব্যক্তি-গোষ্ঠী চরমভাবে ুব্ধ। তারাই হয়তো পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে অপহরণ করেছে।

# রিজওয়ানা বলেন, আপনারা যদি নারায়ণগঞ্জের টর্চার সেলগুলোতে অভিযান চালান, তাহলে হয়তো ওর খবর পাওয়া যেতে পারে। তখন পুলিশ সুপার বলেন, টর্চার সেলগুলো তো র‌্যাব অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। এ সময় রিজওয়ানা কান্নায় ভেঙে পড়েন, বলেন আমি আমার স্বামীকে সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত চাই।

# ম্যাগসেসে পুরস্কারজয়ী রিজওয়ানা পরিবেশ ধ্বংসের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সক্রিয়, এই ধরনের অনেক মামলায় আইনি লড়াইও চালাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি ধানমন্ডি মাঠ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে আন্দোলনে নামেন রিজওয়ানা। এ নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে। দুই দিন আগেও একটি টিভি চ্যানেলের টকশোতে রিজওয়ানা এই মাঠ নিয়ে কথা বলেছেন। প্রভাবশালীরা ওই মাঠটি তাদের কাজে ব্যবহার করে আসছে।

ইত্তেফাক

# অপহরণের খবর পেয়ে রিজওয়ানা হাসান ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের দফতরে। সেখানে বিকালে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার জানা মতে তার স্বামীর কোন শত্রু ছিল না। তাছাড়া তাদের এমন কোন অর্থবিত্ত নেই যে কেউ মুক্তিপণের জন্য তাকে অপহরণ করবে।

# রিজওয়ানা বলেন, আমার ধারণা, আমার পেশাগত কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে কোনো গোষ্ঠী তাকে অপহরণ করতে পারে। পেশাগত কর্মকাণ্ডে কয়েকটি আবাসন কোম্পানি ও শিপ ব্রেকারসহ কিছু ব্যক্তিগোষ্ঠী ক্ষুব্ধ। তারাই হয়ত পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে অপহরণ করেছে।