দুর্নীতি মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদার রিট
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আজ রবিবার দুপুরে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন রিভিশন আবেদন দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আগামী বুধবার বিচারপতি বোরহানউদ্দিন ও বিচারপতি কেএম কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনের ওপর শুনানি হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এই দুটি দুর্নীতি মামলায় গত ২০ মার্চ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন নিম্ন আদালত। এতে তারেক রহমানসহ মোট ৮জনকে আসামি করা হয়।
ওইদিন খালেদার উপস্থিতিতে মামলা দু’টির চার্জ শুনানি শেষে অভিযোগ গঠনের নির্দেশ দেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।একই সঙ্গে মামলা দু’টির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২১ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আদালত।
চার্জগঠনের পর পরই এটি উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া এ প্রসঙ্গে বলেছেন, এ আদালতের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই। আমরা ন্যায়বিচার পাবো না। সুতরাং আমরা এ কোর্টে কোনো মামলা করবো না।
ওই দিন চার্জগঠনে খালেদার আইনজীবীদের সময়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে চার্জগঠন করেন আদালত। সময়ের বিভিন্ন কারণে এর আগেও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৪১ বার ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১১ বার চার্জ শুনানির জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট
গত বছর ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।
মামলার অভিযোগ বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খান।
২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের জামিন পান। ১৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়া ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিননামা দাখিল করেন।
মামলায় অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব, বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশী ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
তারেক রহমান সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশের বাইরে আছেন। মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। তবে শরফুদ্দিন আহমেদ আদালতে হাজির না থাকায় বুধবার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
অপর দুই আসামি ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু হতেই পলাতক।
মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ অপর চারজনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।