ভিত্তি প্রস্তরে আটকে আছে সিলেটের দুই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কাজ
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ দুই প্রভাকশালী মন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যে আটকে আছে সিলেটের দুটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কাজ। প্রায় ৫ মাস আগে তড়িঘড়ি করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও একটি স্কুল নির্মাণে টেন্ডার আহবান হলেও অপরটির এখনও টেন্ডারই হয়নি। গত বছর ২৩ নভেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বমুহুর্তে সিলেটে দু’টি সরকারি বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি ও শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। দীর্ঘ ১১০ বছর পর সিলেটে ওই দুটি সরকারি বিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তারা। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্ভলিত বিদ্যালয় দুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা।
এর দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটে দুটি সরকারি বিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত বিদ্যালয় স্থাপনের প্রকল্পটি গত নবেম্বর মাসে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হলেও তার পুর্নাঙ্গরূপ পেতে থেমে আছে সার্বিক কার্যক্রম। গত বছর নবেম্বর মাসে শহরতলীর লাক্কাতুরা চা-বাগান এলাকায় ‘সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়’ ও দণি সুরমার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের আলমপুরে ‘দক্ষিণ সুরমা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়’ নামে দুটি বিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হয়। বর্তমানে ওই বিদ্যালয় দুটি নির্মানের কাজ এখনো শুরু হয়নি। এর বাস্তবায়ন কবে হবে এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সিলেটের সচেতন মহল।
সূত্র জানাযায়, গত বছর ২২ ডিসেম্বর সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজের টেন্ডার হলেও ওয়ার্ক অর্ডার এখনো হয়নি। শহরতলীর লাক্কাতুরা চা-বাগান এলাকায় ওই বিদ্যালয়ের জন্য টি-বোর্ডের কাছ থেকে ২ একর ভূমি ক্রয় করা হয়েছে। টাকাও পরিশোধ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ সুরমা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কাজের টেন্ডার হয়নি, অনিশ্চয়তায় রয়েছে ভূমি প্রাপ্তিও। এ বিদ্যালয়ের ২ একর ভূমির দেওয়ার প্রস্তাব করা হয় গনপূর্ত অধি-দপ্তরের কাছে। গনপূর্ত অধিদপ্তর ২ একর ভূমি দিতে অপারগতা শিকার করলে দেড় একর ভূমি চাওয়া হয়। গনপূর্ত অধি-দপ্তর বিদ্যালয়ের জন্য ভূমি দেবে তবে পরিমান জানা যায়নি। শিক্ষা প্রকৌশল সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দক্ষিণ সুরমা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নির্মানে নূন্যতম ১ একর ভূমি প্রয়োজন। কর্মকর্তারা বলেন, গনপূর্ত অধি-দপ্তর জায়গা দিলে তাদের টাকা পরিশোধ করা হবে। অর্থ মজুদ রয়েছে।
সিলেট শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, “সিলেট, বরিশাল ও খুলনা শহরে ৭ টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প’র আওতায় সিলেটে সরকারি দুটি উচ্চ বিদ্যালয় হওয়ার কথা। প্রকল্পে স্যানেটারী, পানি সরবরাহ, বৈদ্যুতিক কাজ ও আসবাবপত্র সরবরাহসহ ৬ তলা ভিত বিশিষ্ট ৪ তলা একাডেমিক কাম-প্রশাসনিক ভবন এবং প্রধান শিক্ষকের দ্বিতল বাসভবন ও সীমানার প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। দুই বিদ্যালয়ে ভূমির মূল্য পরে নির্মাণ কাজে ব্যয় দরা হয়েছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা।
বিদ্যালয়ে প্রতিটিতে একাডেমিক কাম-প্রশাসনিক ভবন নির্মান ৭ কোটি, প্রধান শিক্ষকের বাসভবন ৩৩ লাখ, আসবাাপত্র সরবরাহ ৩৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, সীমানা প্রাচির নির্মান ২১ লাখ ৪২ হাজার টাকা দরে মোট ব্যায় ৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ধরা হয়। এরমধ্যে প্রশাসনিক কাম-একাডেমিক ভবন নীচতলা ৬’শ ৫০ বর্গমিটার, ২য় তলা ৬’শ ৫০ বর্গমিটার, ৩য় তলা ৬’শ ৫০ বর্গমিটার, ৪র্থ তলা ৬’শ ৫০ বর্গমিটার ও দুটি চিলা কোঠা ৫০ বর্গমিটরে তৈরি করে মোট ২৬’শ ৫০ বর্গমিটারের ব্যবহারিক ক্ষেত্রফল নির্মান করা হবে। আর প্রধান শিক্ষকের বাসভবন হবে ১’শ ১৪ বর্গমিটারের। এরমধ্যে নীচ তলা ৬৪ বর্গমিটার ও ২য় তলা ৫০ বর্গমিটার।
এছাড়া বিদ্যালয় ভবনের নীচ তলায় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের কক্ষ, প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত সহকারীর কক্ষ, প্রেয়ার রুম, শিক্ষক মিলনায়তন, ছাত্রী মিলনায়তন, লবি, ২ টি টয়লেট ব্লক ও ২টি সিঁড়ি। ২য় তলায় প্রতিটি ফোরে ৭ টি করে শ্রেণী কক্ষ ও ২ টি টয়লেট, ৩য় তলায় পদার্থ, রসায়ন ও জীব বিজ্ঞান এর জন্য পৃথক ৩টি গবেষণাগার, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা ২ টি আইসিটি ল্যাব, লাইব্রেরী, স্কাউট ও গাইড রুম থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া দুটি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ৮’শ ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়ার সুযোগ পাবে।
সিলেট শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিম সবুজ সিলেটকে জানান, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের টেন্ডার হয়েছে তবে এখনও ওয়ার্ক অর্ডার হয়নি। আর দক্ষিণ সুরমা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের টেন্ডার প্রক্রিয়াদিন রয়েছে, শীর্ঘই হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সকল প্রক্রিয়া শেষে ১৮ মাসের মধ্যে ২ টি বিদ্যালয়ের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূমি পাওয়া গেলেও দক্ষিণ সুরমা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূমি প্রাপ্তি এখনও নিশ্চিত হয়নি বলে তিনি জানান।