হুনছিলামনা হাতেগুতে হুনাইছে আমার বৈনপুতে
আব্দুল আজিজ: ‘হুনছিলামনা হাতেগুতে হুনাইছে আমরার বৈনপুতে’। -অর্থাৎ ‘আমার সাত সিড়ির কেউ শুনেনাই, শুনাইছে আমার বোনের ছেলে’।- আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন আমি কার কথা বলছি! খালেদা আপার বেটামশাই আমাদের ভাগীনা তারেক রহমানের কথা বলছি। আপনারা তাকে না চেনার কথা নয়। হাওয়া ভবনের সেই নাদুসনুদুস ছেলেটি। তার বাবাকেও আপনারা সবাই চেনেন, জানেন।একজন সামরিক কর্মকর্তা,তারপরে বাংলাদেশের ঘোষক, পরে উপ-প্রশাসক, তারপরে শাষক আর শেষান্তে আততায়ীর হাতে নিহত। মরার পর শুনলাম জেনারেল জিয়াউর রহমান সাহেব ভাঙা বাক্সে ছেড়া গেঞ্জি আর ফাঁড়া পাল্টুন নিয়ে সারা দেশ ঘুরতেন। চট্টগ্রামের সার্কিট হাউস থেকে উদ্ধারকৃত তার ভাঙা বাক্সে নাকি এ’গুলো মেলেছে। অবাকই হলাম, কোনদিন এই ফাড়া কাপড়-ছোপড় পরতে দেখলাম না, কারো মুখে শুনলামও না। মরার পরই খবরটি বের হল। শুনে ব্যথা পেয়েছিলাম। ধনী-গরীব যাই হইনা কেন, পকেটে টাকা না থাকলেও, বাড়িতে অনততঃ বাঁশ ঝাড়তো ছিল। দু’ একটা বাঁশ বিক্রি করে এমন একজন মানুষের বসন-বাসন যোগাড় করতে পারতাম। আমরা তার আশে পাশে ছিলামনা বলে এ ব্যাপারটি জানতে পারিনি। কিন্তু যারা তা’কে ঘিরে চব্বিশ ঘন্টা তেল মালিশ করতো তারা কি করলো বুঝলাম না। সবাই কি এমন ফকিরের দল ছিল যে জিয়াউর রহমানের মত একজন মানুষকে দু’চারটা কাপড় কিনে দিতে পারলোনা? দেশের প্রেসিডেন্টকে একটা সার্ট পেন্ট কিনে দেবার মত ক্ষমতা কি তা’দের ছিলনা ? তার মরার পরই দেখলাম এই সকল ফকিরের দল চোখের জল ছেড়ে এ নিয়ে বেশ যিকির আজকার করছে।
দুদু মিয়া, যাদু মিয়া, বদুমিয়া,কদু মিয়া আর কত শত মিয়াদের কাঁদতে দেখলাম। জিয়াউর রহমানের দরজায় থালা নিয়ে দিনরাত এরা দাড়িয়ে থাকতো। অথচ জিয়া সাহেবের মৃত’্যও পরই বাধলো গন্ডগুল । কে দলের হাল ধরবে এই নিয়ে মন কষাকষি। দশ দিগন্তের দশজন হলে যা হয়। কেউ কাউকে মানতে পারলো না। কয়েকজন ‘বার এর ষ্টার’ (Barrister) সেই সময় চিন্তাভাবনা করে আজীবন গৃহিনী, খালেদা জিয়াকে ঘরের বাইরে ঠেনে এনে এক ঠেলায় দলের চেয়ারম্যান করে দিল।এতে দোষের কিছু নেই, কারন ‘মানলে শালগ্রাম না মানলে শিলা’। -এমনি করে আওয়ামীলীগেও দলের দুরাবস্থা ঠেকাতে বেঁচে থাকা বঙ্গবন্ধু কণ্যা হাসিনা আপাকেও বিদেশ থেকে ডেকে এনে দলের হালে বসিয়েছিল। ব্যবধানটা এই, একজন আর্মী ব্যারাকের গৃহিনী, জেনারেলের স্ত্রী, আরেকজন রাজনীতি পরিবারের মেয়ে বঙ্গবন্ধুর কণ্যা। হলটা কি? দুই মহিলাকে সেই যে বসানো হল আজ পর্যন্ত আর নড়ানো গেলনা।
কথা বাড়াবো না । কয়েক যুগ থেকে আওয়ামীলীগ ইজ্জৎ পুনরুদ্ধারে উদ্ধত আর বি এন পি ভাবমূর্তি তৈরী করতে প্রবৃত্ত । আওয়ামীলীগ বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়েই নাও দৌড়ায়। বি এন পি ধান ভাঙাবে কি দিয়ে খোঁজে পায় না। রাজাকার, আল-বদর আর আল-শামছের মত চিহ্নিত, বদনামী বন্ধুবান্ধবদের অংশগ্রহন থাকায় দলের লেবাস দুরুস্ত হচ্ছেনা। খোঁজ খবর করে কিছু না পেয়ে ঘোষনা দিল ‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক’।- এই ঘোষনাও দিয়েছিলেন একজন বড় রাজাকার জিয়া সাবের প্রধান মন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান। আর যায় কই, তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়লো পুরো জাতি। একদল বলে ‘ঘোষনা পত্রের পাঠক’ আরেকদল বলে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’।- এই বলে বলে চলছে এতটি বছর এবং কিয়ামত পর্যন্ত চলবে বলে মনে হয়। আমার মত আম মানুষ কি বলি জানেন, ‘ঘোষক’ আর ‘পাঠক’ দিয়ে কি বাংলার মানুষ তেতুলগুলে খাবে! তা’তে করে আমরা কি দু’একটা কাপড়, দু’মুটো ভাত পাব? জাতী কি পুচ্ছতুলে বিশ্বমন্দিরে করতাল বাজিয়ে সুখ ভোগ করতে পারবে? স্বাধীনতা যুদ্ধে জিযাউর রহমানের অবদান কি অগ্রাহ্য? ‘জনক’ আর ‘ঘোষক’ যে এক কথা নয় তার অর্থ সবাই জানে। কাজে এই নিয়ে উচ্চবাচ্চ্যের কি কোন প্রয়োজন আছে ? আসলে কি জানেন, বঙ্গ সন্তানরা খামখাই মরতে জানে। ‘কেউ মরে জিদে আর কেউ মরে বদে’।
দেখেনতো, আরেক আজগুবী ব্যাপার। ভাগীনা তারেক রহমান ২০১৪ সালের স্বাধীনতা দিবসে নাকি ঘোষনা দিয়েছে তার বাবা বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট! খালেদা আপাও নাকি তার সাথে কণ্ঠ মিলিয়েছেন। সাথে কয়েকজন ব্যারিষ্টার সন ক্ষণ খোঁজে খোঁজে তালি বাজাচ্ছেন। ঘোষকের ছেলে ঘোষক হবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, তবে এমন ঘোষনায় মুখবৈতলদের নাচানাচি দেখে বিশ্মিয় লাগে। আচ্ছা বলুনতো বেসুরা,বেখাপ্পা, বেবুনেদি ‘শীবের গীত’ শুনলে হাঁসবেন সা কাঁদবেন! তারপর সেই গীতে যদি ফাঁটা ঢোল সঙ দেয় তা’হলে কানে আঙুল চেপে অবশ্যই চোখ বন্ধ করবেন না হয় দরজা জানালা বন্ধ করে এমন গীত কারবারির গুষ্ঠিশুদ্ধ তুলে বকাবকি করবেনই। বিগত তেতাল্লিশ বছর থেকে আমরা কত কানফাঁটা জাত বেজাতের, টুংরি, কাওয়ালী, মুর্শিদী, ভাটিয়ালী, মারেফতি, শরীয়তি, ভাওইয়া, ডুবাইয়া শুনলাম কিন্তু এমন ফাঁটা ঢোলতো কেউ কখনো বাজতে শুনিনাই। বলতেই হয় ‘অবাক করলে অবতার; ছুঁচোর গলায় চন্দ্রহার।’
ছেড়াফাঁড়া তমসুক ঘেটে যা পেলাম তা’তে সামরিক শাসক থেকে প্রসাশক তারপরই ছেড়া গেঞ্জি আর ছেড়া পেন্টের প্রেসিডেন্ট ছাড়া আর কিছু পেলাম না। দেশের তফশীলি হালখাতায় এমন কোন কিছুর নামগন্ধ পর্যন্ত নেই। মুখবৈতল তরফদাররা এতদিন কোথায় ছিল? খালেদা বোনকে বলি, এতদিনে তোমার কত তরক্কি বাংলার মানুষ দেখলো। দু’বার উজিরে আযম হওয়ার তকমা লাগিয়ে তখতে-তাউসে তসরিফ নিলে। কমপক্ষে হাজারোবার জিয়ার কবর জেয়ারতে গেলে, মাথার উপর ছবি টাঙিয়ে ভক্তি করলে, চোখের জলে কতস্মৃতি আমাদের শুনালে কিন্তু ইতিহাসের সেই অধ্যায়টি কেন জনচক্ষের আড়ালে রাখলে? ভাগীনা তারেক সেই সময় না হয় শিশু ছিল, সে নাইবা জানলো, তুমি কি বিষয়টা জানতে না? জিয়া যদি প্রেসিডেন্টই হলেন তখন কার কাছে শপথ নিলেন, কারে কারে মন্ত্রী বানালেন তাও কি জাননা! কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে যুদ্ধে নামলেন অন্ততঃ এমনটি তোমার জানার কথা? আমি বুঝতে পারিনা, তোমাদের ফায়দা হাসিলের জন্য একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রতি তোমরা কেন এতসব অবিচার করছো? বাংলার জনগন জিয়াউর রহমানকে বরাবরই চেনে, নুতন করে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে উপস্থাপন করার কী কোন দরকার আছে?
ভাগীনে তারেক,এতদিন কোথায় ছিলে বাবা? ‘কোনদিন মরছেন রহমত আজ করছো তার কবর জিয়ারত’।- তুমিতো তখন বাচ্চা ছেলে। কখন কি ঘটেছে এ নিয়ে তোমার ঘোষনার দরকার নেই, আমরা সব জানি। তোমরা কি শুরু করেছো? ঘোষনা দিয়ে ঘোষক বানাও, ঘোষনা দিয়ে ফকির বানাও, ঘোষনা দিয়ে রাস্থায় নামাও, ঘোষনা দিয়ে নাম বদলাও, ঘোষনা দিয়ে আগাও-পিছাও। সারা জীবন কি ঘোষনা দিয়েই ঘষাঘষি আর গুতাগুতি করবে। কথায় বলে ‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল।’ একটু ভাল কাজকাম করবে এমনটি আশা ছিল কিন্তু দেখি সব ‘গুড়ে বালি’।- তোমার এমন দৃষ্ঠতাপূর্ণ উক্তি শুনে ফ্রেডরিখ নিটশে (Friedrich Nietzsche) এর মত এখন বলতেই হয় ‘তুমি যে মিথ্যাচার করলে তার জন্য আমি রাগ করিনি, আমার রাগ হল এখন থেকে আমি আর তোমাকে বিশ্বাস করতে পারবোনা।’